দেশাত্মবোধক গান
১. মায়ের দেয়া মোটা কাপড়
আজ থেকে প্রায় একশো বছর আগে সময়টা তখন 1905। বঙ্গ ভঙ্গ আন্দোলনে সারা দেশ উত্তাল। রবীন্দ্রনাথ একের পর এক দেশাত্মবোধক গান লিখে দেশবাসীকে উদ্দীপ্ত করছেন, যেমন বাংলার মাটি বাংলার জল। সেই সময়ে রবীন্দ্রনাথের চেয়ে ৪ বছরের ছোটো এক কবি – রজনী কান্ত সেন। ফরমায়েসি গান চটজলদি বাঁধতে তিনি সিদ্ধহস্ত। তিনি থাকেন রাজশাহীতে, কলকাতায় এসেছেন বন্ধুদের কাছে। তারা ধরে বসলো, গান লিখতে হবে। চাপাচাপিতে তখনই লিখে ফেললেন দু লাইন – মায়ের দেয়া মোটা কাপড় মাথায় তুলে নে রে ভাই। তাতে সুরও বসালেন সাথে সাথে। বন্ধুরা হইহই করে সেই দু লাইন গাইতে গাইতে হাজির হলো কাছে বসুমতির প্রেসে। সেখানে যতক্ষণে সেই দু লাইন কম্পোজ করা হচ্ছে, তিনি লিখে ফেললেন গানের বাকিটা। সে গান সে সময়ে মাতিয়েছিল বাংলাকে। আজ একশো বছর পরেও সে গান শুনলে স্বদেশের জন্য অনুপ্রেরণা জাগে।
2. ধন ধান্য পুষ্প ভরা
কাছাকাছি সময়ের আরেক কবি দ্বিজেন্দ্র লাল রায়। তিনি রবীন্দ্রনাথের থেকে ২ বছরের ছোটো। তিনিও তখন দেশাত্মবোধের প্রেরণায় নাটক লিখছেন। 1909 এ তার সাজাহান নাটকে এলো এক গান যা শুনে এখনো আমাদের গায়ে কাঁটা দেয় দেশপ্রেমের ভাবনায় – ধন ধান্য পুষ্প ভরা।
3. মুক্তির মন্দির সোপান তলে
সময়টা আমরা এগিয়ে নিয়ে আসি আরো প্রায় 40 বছর। স্বাধীনতার প্রাক্কালে, 1946 এ কবি মোহিনী চৌধুরী লিখলেন এক সাড়া জাগানো গান – মুক্তির মন্দির সোপান তলে। সে সময়ে মানুষকে মাতিয়েছিল সেই গান। তার অনেক পরে 1962 র যুদ্ধ বা 1965 র যুদ্ধ বা 1971 এর মুক্তিযুদ্ধের সময়ে একই ভাবে প্রেরণা জুগিয়েছে এই গান।
4. এ দেশ এ দেশ আমার এ দেশ
স্বাধীনতার পরে আমরা এগিয়ে এসেছি আরও 25 বছর। স্বাধীনতা প্রাপ্তির ফল পেতে লেগেছে দেশবাসীরা। ভারতকে অর্থনৈতিক শোষন আর অন্ধকারে রাখার বৃটিশ কাঠামো আর নেই। আমাদের চাহিদাটা এখন নিজেদের অগ্রগতির, বৃটিশ তাড়ানোর নয়। এই আবহাওয়ায়, স্বাধীনতার রজত জয়ন্তী উপলক্ষ্যে 1972 এ সলিল চৌধুরী আমাদের উপহার দিলেন এই গান – এ দেশ এ দেশ আমার এই দেশ। দেশের মাটির সাথে, মাটিতে দাঁড়ানো মানুষের সাথে তার জীবনভোর একাত্মতা এই গানের আশা আকাঙ্খার ভেতর সুন্দর ভাবে ফুটে উঠেছে।
5. মিলে সুর মেরা তুমহারা
আরও পঁচিশ বছর পর, স্বাধীনতার স্বর্ণজয়ন্তী বছরে, 1997 এ, পীযুষ পান্ডের কথায় আর ভীমসেন যোশীর সুরে তৈরী হলো এক অনবদ্য ভিস্যুয়াল – মিলে সুর মেরা তুমহারা। আমাদের সুবিশাল বৈচিত্র্য খুবই মনকাড়া ভাবে সমাহিত হয়েছে এ গানে।