অপূর্বর মহিলা-সঙ্কট

কলমে : গালিব লেখনিয়াল

অপূর্বর কথা

শিবাজী পার্কের মোড়ে সেটা একটা নিয়মিত আড্ডা। সন্ধেবেলাটা এখানে খুব জমজমাট, গাড়ি-ঘোড়ার অবিশ্রান্ত আনাগোনা, উল্লসিত জনস্রোতের বর্ণাঢ‍্য মিছিল। বম্বের গতিময় প্রাণস্পন্দন পরতে পরতে।

আড্ডার জায়গাটা সেই মোড়ের মাথায় প্রভুর রাগড়া-প‍্যাটিসের দোকান, তার সামনের চওড়া ফুটপাথ আর রেলিং। প্রভুর দোকানের সব সময়ে জ্বলতে থাকা গ‍্যাস আড্ডাধারীদের নামকরণে ‘রাবণের চিতা’। সেই চিতায় বানানো সামোসা বা রাগড়া-প‍্যাটিস খেতে অফিসের পরে সন্ধেবেলা একগুচ্ছ যুবকের নিয়মিত আনাগোনা। তাদের নিয়েই আড্ডা। এরা সকলেই কলকাতা, সাবার্ব বা বাংলার টায়ার টু-থ্রি শহর থেকে আসা চাকুরে। কেউ সদ‍্য আসা, বয়স 22/23। কেউ ছ-সাত বছরের পুরোনো পাপী, বয়স 29/30। সকলেই এখনও ব‍্যাচেলর। বিয়ে হলেই এ আড্ডার সদস‍্য-পদ খোয়াতে হবে। বেঁচে থাকার প্রায়রিটির রি-অ‍্যালাইনমেন্ট।

অপূর্ব এই আড্ডার এক সদস‍্য। অবশ‍্য দূর কক্ষপথের, ইউরেনাসের মতো। থেকেও নেই। সব আড্ডারই দূ-তিন জন মধ‍্যমণি থাকে। তারাই কথা বলে, তারাই কথা বলার নতুন টপিক আমদানি করে, তারাই টক ঝাল মিষ্টি মাখিয়ে বক্তব‍্যকে মূখরোচক করতে পারে, এরা সাথীদের পেছনে লাগতে পারে, এরাই ‘চল সিনেমা দেখে আসি’-র মতো যৌথ কর্মকান্ডের হোতা হয়। এরা হচ্ছে সানাই।

মধ‍্যমণির পরের বিশাল ভাগ হচ্ছে মধ‍্যম-মণি। এরা হচ্ছে পৌঁ এর দল। এদের গর্জন সানাইকে ঠেকা দিতে।

একদম শেষে থাকে কিছূ ফ্রিঞ্জ এলিমেন্ট। থেকেও যেন নেই। অস্তিত্বের খালি আভাস একটা। এরা গোঁজ হয়ে মধ‍্যমণিদের ওপর আরোপিত শ্রেষ্ঠতাকে বে-তোয়াক্কা ক’রে। নিজস্ব চিন্তার অভিমূখ সহজে পাল্টায় না। এরা unsung. তবে নিজের কাছে এরা হিরো।

অপূর্ব শেষ দলের। আড্ডার হাওয়ায় হালকা হয়ে ওপরে ভেসে থাকে। নিজের মতামত কমই প্রকাশ করে। বাকিরা ঠাট্টা করে বলে – গোন তো, অপূর্ব মোট কটা কথা বলল। তবে ওর আধিপত‍্য দেখানোর আলাদা জায়গা আছে। মিড ডের ক্রসওয়ার্ডে কেউ আটকে গেছে? সমাধানে – অপূর্ব। এই ইংরেজী শব্দটার মানে কি? অপূর্বকে জিজ্ঞেস কর।

স্টিরিয়োর কথা :

অপূর্বরা তিন বন্ধু মিলে এক ফ্ল‍্যাটে থাকে। তাদের একজন, সুমিত একখানা সেকেন্ড-হ‍্যান্ড স্টিরিয়ো টার্নটেবল কিনেছে। এক সিনিয়ার দাদা বম্বের চাকরি ছেড়ে নাইজিরিয়ায় যাচ্ছেন চাকরি করতে। তিনি নিজের জিনিসপত্র বিক্রি করে দিচ্ছেন বোঝা খালি করতে।সেই সুযোগে সুমিত বাগিয়েছে তার স্টীরিও, 800 টাকায়। সেই সময়ের মাইনের অনুপাতে সেটা একটা বড় অঙ্ক।

70এর দশকের শেষে আড্ডার সদস‍্যদের সচ্ছলতার পরিধিতে এরকম স্টীরিও বেশ একটা নভেলটি ব‍্যাপার। স্পিকারের দুটো বক্স ঘরের দু কোনায় দেয়ালে টাঙ্গানো থাকবে, গম গম করে আওয়াজ বেরোবে। সব মিলিয়ে একটা হৈ হৈ ব‍্যাপার। সূমিত কেনার পর এই স্টীরিও কয়েকদিন আড্ডার প্রধান বিষয়বস্তু হয়ে থাকলো। ক‍্যাথরিন ম‍্যানসফিল্ডের ডলস হাউসের মতো। কি তার ফিচার, কি তাতে নেই, এটার এটা ভাল, অন‍্যটার ওটা ভাল, এই দামে সুমিত ঠকল বা জিতল – এসব নানা বিষয়ে নানা বক্তব‍্য আড্ডায় ওড়াউড়ি করল। চপলমতিরা বলাবলি করল যে এর থেকে একটা পাখোয়াজ কিনলে তো আমরা নিজেরাই বাজাতে পারতাম ! আড্ডায় সুমিতের র‍্যাঙ্কিং বেড়ে গেলো। সুমিত মহা গর্বিত আর উত্তেজিত। ওর রুমমেট হিসেবে অপুর্বও উত্তেজনার ভাগীদার।

এখন সমস‍্যা দাঁড়ালো এই যে এটা বাজাতে গেলে তো রেকর্ড চাই। তা না থাকলে তো এটা খালি শো পিস। তাই রেকর্ড চাই। অন্তত একটা। কালকে সুমিতের অফিস আছে কিন্তু রুমমেট অপূর্বর ছুটি। তাই অপৃর্বর ওপরে ভার পড়ল – কাল তুই একটা রেকর্ড কিনে নিয়ে আসিস – The Ventures. রেকর্ডের একটা দোকান কাছেই সায়ন সার্কলে আছে, চেনে সবাই। সেখান থেকে।

সঙ্কটের কথা – ১ :

অপূর্ব হ‍্যাঁ তো বলে দিলো। কিন্তু কি ধরনের বিপদ যে সেই কাজে ওঁত পেতে আছে তার বিন্দু-বিসর্গও ও জানত না। পরের দিন সকালে অপূর্ব বেরল সেই অভিযানে। সায়ন সার্কলে গোল চত্তরটার পরিধি ধরে গা ঘেসাঘেসি করে সব দোকান-পাট। ছোট, মাঝারি, বড় সব মাপেরই দোকান, তাদের পসরাও নানা রকমের। রেকর্ডের দোকানটা একটা ছোট দোকান, সামনেটা আট ফূট মতো চওড়া হবে। তার মধ‍্যে ফুট তিনেকের একটা কাচের দরজা, বাকি সামনেটায় কাচের দেয়াল। রাস্তায় দাঁড়িয়ে বাইরে থেকে ডেতরটা পুরো দেখা যায়।

বাস থেকে নেমে অপূর্ব বীর দর্পে সেই কাঁচের দরজার কাছে এগিয়ে গেলো। বাইরের কাচের দেয়ালের মধ‍্যে দিয়ে ভেতরে রেকর্ডের ডিসপ্লে দেখা যাচ্ছে। অনেক রেকর্ড, হিন্দী ফিল্মের, ওয়েস্টার্ন। অপূর্ব মুগ্ধ চোখে সেগুলো দেখতে দেখতে এগিয়ে এসে কাচের দরজার হাতলে হাত রাখলো। এখন দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকতে হবে। আর তখনই ওর চোখ পড়ল ভেতরে বসে থাকা দোকানের কর্মচারিদের দিকে।

দোকানের ভেতর দুজন সুবেশা তরুনী, নিশ্চই সেলস গার্ল। বয়স বছর 24-25 হবে। দুজনে মুখোমুখি বসে অনর্গল কথা বলে যাচ্ছে। দোকানে কোন কাস্টমার নেই। তাই তাদের অবাধ রাজত্ব। কাচের দরজা থাকায় কিছু শোনা যাচ্ছে না বাইরে থেকে। কিন্তু উচ্চহাসি, কল কল করে হাসি, চাপা হসি, মুচকি হাসি, দাঁতের ফাঁকে হাসি এসবের বন‍্যা বইয়ে দিচ্ছে এরা কথা বলতে বলতে। বোঝাই যাচ্ছে যে girle talk চলছে এবং সেই টকের মূল বিষয়বস্ত ছেলেরা। অপূর্ব আড়ষ্ট হয়ে গেল। ওর বয়েসটাও তখন সেই মেয়েদুটোর সমকক্ষ হবার বয়েস, ওদের চোখে প্রশ্রয় পাওয়ার বয়েস, নারীহৃদয়ের অনূমোদনের কল্পনায় খেলাঘর বাঁধতে লাগার বয়েস, এক চিরন্তন মোহপাশের বয়স।

ভেতরে ঢুকতে গিয়ে অপূর্ব থমকে দাঁড়ালো।
সে নারী-ভীত সম্প্রদায়ের লোক। মেয়েদের থেকে দূরে থাকতেই বেশী সচ্ছন্দ, মেয়েদের সংসর্গে আড়ষ্ট। কিছুটা জেনেটিক্স আর কিছুটা সাংসারিক পরিস্থিতির বিপর্যয়ের জন‍্য। যদি ওরা অপূর্বর তারুণ‍্যকে প্রশ্রয় না দিয়ে হ‍্যাটা করে ? যদি হাসির জোয়ারে ভাসিয়ে দিয়ে ওর উপস্থিতিকে অবহেলা করে ? যদি ইংরেজীর 200 ওয়ার্ডের ভোকাবুলারি স্টকওয়ালা লোকের মতো হুড়মুড় করে ওরা কিছু ইংরেজীতে জিজ্ঞেস করে বসে যা অপূর্ব বুঝতে না পারে ? বড় লজ্জার ব‍্যাপার হবে সে সব নিজের কাছে। এসব সময়ে ছেলেদের তাচ্ছিল‍্য করার হাজারটা উপায় জানে মেয়েরা। এসব ভেবে চিন্তে অপূর্বর আর ভেতরে ঢোকার সাহস করে না। ভান করে এগিয়ে যায়, যেন শো-উইন্ডো দেখছিল। খানিক দূরে গিয়ে রাস্তার রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে নজর করতে থাকে, দোকানে আর কোন কাস্টমার ঢুকল কি না। যদি কেউ ঢোকে তবে ও-ও ঢুকবে। দুজন কাস্টমারকে সামাল দিতে হলে মেয়ে দুটো আর হ‍্যাটা করার সুযোগ পাবে না।

এইসব ভাবতে ভাবতে প্রায় পনের মিনিট চলে গেল। কিন্তু এখনো কোন কাস্টমার ঢুকল না। অপূর্ব সমস‍্যায় পড়ে গেল। কি করা যায় এখন। ফিরে তো যাওয়া যায়। সুমিতকে কোন বাহানা বলে দিলেই হবে। কিন্তু তাতে নিজের কাছেই হেরে যাওয়া হয়। সেটাতেও মন চাইছে না। ভেতরে ঢুকলেও হ‍্যাটা খাবার ভয়। সেটাও অপছন্দ। অপূর্ব অন‍্য কোন উপায়ের কথা ভাবতে থাকলো।

শেষে একটা ফন্দি এল মাথায়। খুব জুতসই নয়, তবে কাজটা হতে পারে। পকেট থেকে বাসের টিকিটটা বের করল। BEST এর টিকিট – ছোট্ট এক চিলতে কাগজ। উল্টো পিঠে গোটা গোটা করে লিখল – Ventures, যেন শূধু অ‍্যালফাবেট জানা লোক অপরের কাছ থেকে শুনে লিখেছে। সার্টটা টাক ইন করা ছিলো, সেটা বের করে বেল্টের ওপর দিয়ে ঝুলিয়ে দিলো। মাথার চুলগুলোকে ঘেঁটে ঘুঁটে এলোমেলো করে দিলো। মনে মনে ও হয়ে গেল ওর কল্পিত সাহেবের ড্রাইভার। তারপর সেই কাগজের টুকরোটা হাতে করে কাঁচের দরজা ঠেলে দোকানে ঢুকে কাগজটা বাড়িয়ে দিয়ে ছাদের দিকে তাকিয়ে বলে ফেলল – সাহাব নে মাঙ্গায়া হ‍্যায়। মেয়েটা কাগজটা পড়ে চুপচাপ রেকর্ডটা বের করে। ড্রাইভার ক্লাসের লোক ওর মেয়েলি পাঙ্গা নেবার পাত্র নয়। আর কি, অপূর্বর তো কেল্লা ফতে।

তারপর দাম মিটিয়ে রেকর্ড হাতে নিয়ে দোকানের বাইরে এসে মনে মনে বিজয়োল্লাস। মিশন প‍্যারামিটার সবগুলোই পুরো হয়েছে। হ‍্যাটা হয় নি, রেকর্ড পাওয়া গেছে, খালি হাতে ফেরত যেতে হয় নি। শুধু একটাই আফশোস যে নিজের পরিচয়কে ডাউনস্কেল করে কাজটা করতে হয়েছে। জীবনটাকে কাছে থেকে দেখার অনুভূতি দিয়ে অপূর্ব সেটা মেনে নেয়।

সঙ্কটের কথা – ২

প্রায় ছ বছর পরে আমরা অপূর্বকে পাচ্ছি এক ছোট শহরে। সেটা একটা ইন্ডাস্ট্রিয়াল টাউনশীপ। এক বিখ‍্যাত ইন্ডাস্ট্রিয়াল হাউসের প্রায় ডজন খানেক ফ‍্যাক্টরি ওখানে। কোনোটার পোষাকি নাম প্লান্ট, কোনোটার নাম মিল আবার কোনোটার শুধুই ফ‍্যাকটরি। ছ”সাত কিলোমিটারের পরিধির ভেতরই সব। এইসব ফ‍্যাক্টরির এমপ্লয়িদের নিয়েই শহর গোছের একটা কিছু। দিল্লী থেকে সোয়া ঘন্টার দূরত্বে।

এত ফ‍‍্যাক্টরি থাকলে তাতে অনেক এমপ্লয়ী থাকবে, স্বাভাবিক ভাবেই বঙ্গ সন্তানওও বেশ কিছু থাকবে। অপূর্ব চাকরির খাতিরে ওখানে যাওয়ার পর ওখানকার বাঙ্গালীদের ছোটো জমায়েতে ওর বেশ সামাজিক আনাগোনা শুরু হয়ে গেল। এদের ভেতর জন্মদিনের পার্টি, পূজো, পঁচিশে বৈশাখ, দোল, নববর্ষ এসবের সময়ে নিয়ম করে মেলামেশা হয়। এর বাইরে এমনি যাতায়াত তো লেগেই আছে। এরা কেউ কেউ মিশুকে যেমন বিশ্বাশ-দা, রায়চৌধুরী-দা, তপন-দা। কেউ কেউ পদভারি এবং পদের ওজনের স্বার্থে গ্রাম্ভারি। আর কারও পদ আবার এসকেপ ভেলোসিটি ধরে মহাশূণ‍্যে চলে গেছে। তাদের দেখতে হয় দূরবীন দিয়ে। তাদের প্রয়োজন হয় পূজোর সুভেনিরে প্রেসিডেন্টের বানী লেখার জন‍্য।

মহিলা – সঙ্কটের এই ঘটনা এক দোলের সময়কার। একসাথে হয়ে দোল খেলা হচ্ছে ইগালিটারিয়ানরা মিলে। গ্রাম্ভারিরা বাদ। এসকেপ ভেলসিটিরা নিজেদের কক্ষপথে । বিশ্বাস-বৌদি খাবার দাবারের ভালো আয়োজন রাখেন বলে মূল রঙ্গমঞ্চটা ওখানেই। তিন চারটে ফ‍্যামিলি মিলে চলছে হুজ্জতি। বাচ্চারাও আছে। আবির, গোলা রং, পিচকিরি, স্ন‍্যাক্স, কারণবারি এরাও আছে। অপূর্বও আছে এদের জমায়েতে। যদিও বাকিরা বয়সে বড় আর সকলেই সস্ত্রীক তবুও অপূর্ব এখানে কাঙ্ক্ষিত লোক। আর অপূর্ব জানে না যে নতুন জায়গায় এসে সামাজিকতায় অবলীলায় মিশতে পারার সূযোগটা ও পায় পাত্র হিসেবে ওর ভালো র‍্যঙ্কিং-এর সুবাদে। শিক্ষিত, ভাল চাকরি, ভালো ব‍্যবহার -এসব নিয়ে বাকিদের নজরে অপূর্ব এক ভেরী এলিজিবল ব‍্যাচেলর। তাই সব জায়গাতেই ও স্বাগত। (এর 25 বছর পরে অপূর্ব জেনেছে যে সে সময়কার কিশোরীদের হার্টথ্রব ছিলো ও, হায় রে কপাল)।

দোল খেলা বেশ খানিকক্ষণ চলার পর বাকিদের নজর পড়লো যে তপনদা-রা আসে নি। তিনি বয়সে এদের বড়, তার মেয়ে কিশোরীর শেষ পর্যায়ে।

আরে, তপনদা কেন এলো না? কেউ তাল তুললো, চলো ওদের বাড়িতে হানা দেওয়া যাক। তপনদার স্ত্রী মালা বেশ চনমনে। তিনি তার টগবগে নারীত্বের সম্ভার সাজাতেও পিছপা নন। দলের বাকিরা মনে মনে হয়তো কিছু ‘খেলাঘর বাঁধতে’ লেগে থাকবেন। দোলে ওদের বাড়ি হানা দেবার মূল কারণ এটাই। যদিও কারণটা কেউই মুখে আনবে না।

ওখানে গিয়ে দেখা গেল বৌদি বাথরুমের ঢুকে, দরজা বন্ধ করে ভেতরে বসে আছে। বাথরুমটা একটা বড় ভেতরের উঠোন পেরিয়ে শেষ প্রান্তে। তারপর, দরজা খুলুন, আজ রং খেলার দিন/ না আমি দোল খেলি না – এসব কিছুক্ষণ চললো। যখন এসব চিত্রনাট্য ভেতরের উঠোনে আর বাথরমে মঞ্চস্থ হচ্ছে তখন অপূর্ব বাইরের উঠোনে একা একটা আম গাছে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে। ভেতরের রঙ্গমঞ্চ ওর নজরের বাইরে।

তারপর বোধহয় বৌদির প্রতিরোধ ভাঙ্গলো, তিনি বাথরুমের অবরোধের বাইরে এলেন। তারপর উঠোনে সবার দাপাদাপির শব্দ পাওয়া গেল, সাথে গোলা রং ঢালার শব্দ, বিজয়োল্লাস ধ্বনি। বৌদিকে রং মাখানো হয়েছে। বিজয়ী দলের ছেলেরা মুখে মোনালিসা হাসি আর তাদের গৃহিনীরা মুখে এবং চোখে চপলতার হাসি ঝুলিয়ে এখন বাইরের উঠোনে এলেন। সকলেই এখন ভেতর থেকে চা আসার প্রতীক্ষায়। অপূর্ব এখনও একটু দূরে গাছের ডালে ঠেস দিয়ে, নির্লিপ্ত নিরাসক্ত ভঙ্গি।

এমন সময়ে তপনদার শেষ-কৈশোরের মেয়ে লিলি রং-এর বালতি হাতে ভেতর থেকে বাইরের উঠোনে এলো। অপৃর মনে হলো যে মাকে রং মাখানোর বদলা নিতে লিলি বাকিদের রং দিতে এসেছে। অপূর্ব নিশ্চিত হয় – এই রং আক্রমনের লক্ষ‍্য ও নয়।
কিন্তু মেয়েটা তো বাকিদের পেরিয়ে এলো রং না দিয়ে! তাহলে কে লক্ষ‍্য ? অপূর্ব মাথা ঘুরিয়ে পেছনে তাকায় সম্ভাব‍্য লক্ষ‍্যের খোঁজে। ঠিক সেই সময়ে লিলি হাতের বালতির পুরো রংটা ঢেলে দেয় অপূর্বর মাথায়। ভিজে একসা।

অপূর্ব অবাক ! এরকম বিনা প্ররোচনায় আক্রমন ! সে আহত এবং রাগত গলায় বলে, এটা কি হলো ? আমি তো রং দিতে ভেতরে যাই নি। আমি তো বাইরেই ছিলাম।

লিলি তার ফিরে যাওয়াটা না থামিয়ে, ঘাড় ঘুরিয়ে অপৃর্বর দিকে ফিরে একটা রহস‍্যময় হাসি উপহার দিয়ে নীচু স্বরে বলে – সেই জন‍্যেই তো ।

(সমাপ্ত)

লেখক পরিচিতি :
গালিব লেখনিওয়াল একজন গঙ্গা-জুয়ারির মেম্বার – ছদ্মনামে। তিনি এখন গোয়াতে অবসর জীবন কাটাচ্ছেন।