অণুসন্ধান ১২
চরণ রেখা।

হাঁটতে হলে লাগবে দুটি পা। হাঁটলে পায়ে বিঁধবে কাঁটা । সোজা উল্টো কাঁটায় বোনা আঁকাবাঁকা জীবনপথ। পা আসে। পা যায়। পায়ের চলন্ত ছায়া পথ থেকে মুছে যায় । কিন্তু নদীকূলে, নির্রিবিলি মাঠের আসে, সবুজ পর্বতসানুতে, বালিয়াড়ির নিঃসন্গ জলহীন উচ্ছ্বাসে আকাশে চেয়ে থাকে পরাজিত রক্তভেজা পায়ের ছাপ। মানুষ হাঁটে। হাঁটতেই হয়। জন্মমুহূর্তে কেউ কানে কানে বলে গেছে, পরিক্রমণই জীবন। রক্তমাখা পথে সারাদিন হেঁটে অবশেষে ঘরে ফেরা। সেখানে প্রদীপের নম্র আলোর ছায়ায় বসে আছে শান্তি। তার কপালে টিপ। কটকটে ক টিপ নয়। ধ্যাবড়া হলুদ লাল ঘষে দেওয়া খাপ প্রতীক নয়। ভালোবেসে স্নান সেরে হলুদ রাঙানো হাতে চালধোয়ার সুবাসমাখা আন্গুল ছোঁয়ানো একরত্তি টিপ। চোখের মেঘাক্ত বেদনা ঢেকে আরো গভীর কালো কাজল। তারপর প্রতীক্ষা। ভালোবাসায় কটকট করে বুক। অপেক্ষা করে ঘরের মানুষ ঘরে ফেরার। দীপের শিখার সংগে কাঁপে ভরসা। ক্লান্ত রক্তাক্ত ছিন্ন ভিন্ন হয়ে আহত বালিহাঁসের মত তার বাসায় ফেরার।

শান্তির সংগে কি ক্লান্তির দেখা হয়? শান্তিকে ধর্ষণ করে রেখে যায় একডজন রাজার পেয়াদা। ক্লান্ত বিদ্রোহী অমলকে টুকরো করে রেখে যায় রাজার সিপাই। প্রেমের আগুনে পুড়তে চেয়ে শেষে পোড়ে নিমতলার ইলেকট্রিক চুল্লীতে। পাপোত্তারিণী গন্গে। জল থেকে উঠে রাস্তা পেরোলেই একটা পোড়ো বাড়ী কুটো অশ্বত্থ গাছ, বনতুলসীর ঝোপ আর উচ্চবর্ণ মাকড়সাদের মৃগয়াক্ষেত্র । পায়রা ও শকুনের ছোঁয়াছুঁয়ি বাঁচিয়ে সহাবস্থান। জীবিত মানুষ সেখানে ঝকঝকে রোদেও ঢোকার চেষ্টা করে না। সেই বাড়ীর শেওলার উমামি গন্ধমাখা ঘরে ঘরে শিয়ালদার হোটেলের মত যাত্রীর ভীড়। পরকালের ভিসা চেকিং হতে সময় লাগছে। তারই একটা ঘরে বুকিং পায় অমল যার আসল নাম ইরফান আর আমাদের শান্তি যার আসল নাম কমলিকা।

ইরফানের বাবার নাম আজিজুল। মার নাম কল্যাণী। কমলিকার বাবার নাম ঊদ্ধবদাস। মার নাম পোড়া বোষ্টুমী। সে বিভোর হয়ে বাউল গেয়ে নাচতে নাচতে চোখে জ্যোৎস্না মেখে আগুনের ওপর হেঁটে গিয়েছিল। সে আগুনে তখন ছোট কচি অষ্টাদশী কোয়েল ঝলসানো হচ্ছে। তদারকে সাহেব। ঝলসিত হবার সময় কাছে কেউ থাকবেনা তাই নিয়ম। আগুনে পা পুড়ে যায়। কোয়েলের বেশি কাছে চলে যাবার জন্য মুখে দেওয়া হয় লাল রডের ছ্যাঁকা। সে প্রায় দুবছর হল।

গানের গায়ে কি ছ্যাঁকা দেওয়া যায়? সুরের মাথায় রডের বাড়ি? শান্তি এখন বটগাছের পাকানো শিকড়ের থেকে তুলে নেয় স্যাঁতসেঁতে কাদামাটি। শান্তি সেই মাটি তার অদৃশ্য গালে মাখে। সূর্য উঠছে। লাল রক্তের মত নদী যেন ঋতুমতী। তার বুকে ভেসে যায় পোড়া মানুষের টুকরোগুলি। যেন মা দুগ্গার ভাঙা চালচিত্র। শান্তি বটের এ ডাল ও ডাল বেয়ে চড়ে বসে মগডালে। সেখানে আনমনে একলা বসে কি যেন ভাবে অমল ওরফে ইরফান। ভাবে জীবনটা গেল বেঘোর আর মরণটাও হলো ভুল। থাকার কথা মাটির শীতলপাটি বিছিয়ে মাটির জরায়ুর মধ্যে। চিরদিন। যতদিন না সেই দিন আসে। বিচারসভায় ডাক পড়ে।

পোড়ো বাড়িতে ঢুকে গেছে ভুল নামে ভুল পরিচয়ে। শান্তি সংগে আছে। ছায়ার মত, ওপারেও, এপারেও। তাও মনে অশান্তি যায় কৈ। একদিন তো চিত্রগুপ্ত গেট খুলবে, নাম ধাম জানতে চাইবে,তখন? তখন বলতে হবে আমি নাম ভাঁড়িয়েছিলাম শান্তির জন্য।শান্তিকে বাঁচাতে গিয়ে আমিও মরলাম। তাতে দোষটা কি? চিত্রগুপ্ত স্যারকে বলবো আপনারা উপরমহলে কথা কয়ে নিন। যেমন ইন্ডিয়া পাকিস্তান বন্দী বিনিময় করে তেমন হোক না লাশ বিনিময়। আমার কি? মরে যখন গেছি তখন মাটি পাই না ছাই হই কি তফাত। আর বেঁচে যখন ছিলাম তখনই যেন ভারী তফাত ছিল। মেলায় ঘুরতাম মার সংগে বাউল সেজে। বাবা হাকিমগিরি করে কানাকড়িও পেত না। শান্তি আসত মায়ের সংগে বোষ্টুমী হয়ে। ছেঁড়া শাড়ি। আমার গায়ে চাপানো তাপ্পি দেওয়া চাদর। দেখতে দেখতে মনটা ভাপা দৈ হয়ে গেল।

শান্তি পাশে দাঁড়িয়ে সব শুনতে পায়। এখন তো শরীরটা হাওয়ার মত, ভাবনাগুলো বারান্দায় ছটফট করে দেখা যায়। লুকনো যায় না। প্রথম প্রথম মনে হত হাওয়া বইছে আকুলি বাকুলি। এখন কান পাতলে বোঝা যায়। ভাবছে। লোকটার বড্ড মনোকষ্ট। আমার হাত ধরে মেলার তাঁবুর পিছনে যদি না যেত, না খেত চাঁদসাক্ষী আমার ঠোঁটের মধু, তা হলে আজও বসে বাঁশী বেচত, আর ধুলো মেশানো তিন ফুট চা খেত।

এইসব ভাবছে। একটা দাঁড়কাক মাথা ঘুরিয়ে দেখছে, কিন্তু দেখতে পাচ্ছে না। কেউ কেউ কখনো এমনি বুঝতে পারে, কে যেন সরে গেল, ছায়ার ছায়া পড়ে গাছের ডালে। সেখানকার ছায়া একটু বেশি কালো। তাকালে একটু ভয় করে। দাঁড়কাক হয়ত টের পায়, বুঝতে পারে না। শান্তি একবার হুস করল। দাঁড়কাকু একবার মাথা ঘোরালো। নড়ল না। শান্তির হাসি পেলো। হি হি করে হাসতে গেল। হাসির শব্দ শোনা গেল না শুধু অগুনতি হাসির ছায়া বয়ে গেল বুড়ো বটের এলোমেলো চুলে।

চার দিন হয়ে গেল। ভিসার কোন খবর নেই। এখানে ওখানে যাত্রীদের ছোট ছোট দল। শব্দ দিয়ে নয় তারা ছায়া দিয়ে কথা বলে। শান্তির অবাক লাগে না। নেট দিয়ে যখন ফোনে হোয়াসাপ করত অমল তখন অবাক লাগত। কোথা দিয়ে কোন পক্ষীরাজ চড়ে কথা ছবি আসছে যাচ্ছে? কেউ বোঝাতে পারে নি। অমলের চোখে চোখ পড়লেই কেন শরীরে কারেন্ট লাগত আর কলার টোন বেজে যেত, তাও বোঝে নি কোনদিন।

এখানে ছায়ারা কথা বলে অন্য কোন নেট দিয়ে। জিও এয়ারটেলের মত আর একটা সিম কার্ড যেন সবার কাছে। তাই দিয়ে কথা যায় আসে। শান্তির কানে ভেসে আসে সেই কথা
-একটা আরশোলা ঢুকে পড়েছে শালা
-এখানেও পীরিত গুন্ডা। দেশটাকে নরক বানিয়ে ছেড়েছে, এবার সগ্গেও এজেন্ট ঢুকিয়ে দিয়েছে
-কি করে হলো রাঘবদা?
-আর কালীনাথ এইতো রাজনীতি। ঐ বইমুখো মোমবাতি-বডিরা আস্কারা দিয়ে মাথায় তুলেছে। আরশোলার মত বিয়োচ্ছে, আর যেখানে সেখানে উড়ে এসে জুড়ে বসে আমাদের মহান ভূমি একেবারে যা তা করে দিচ্ছে।
-আপনি কি উঁচু জাত?
-দেখে মনে হচ্ছে? ঠিকই বুঝছ। জ্যোতি যাবে কোথায়? জন্ম জন্ম ধরে শুদ্ধ আগমার্কা গেরুয়া রক্ত আমাদের। সগ্গে আমাদের এপারটমৈন্ট বুক থাকত। এক এক টা জন্ম এক এক একটা যেন বদলির চাকরি। তা তোমার জাতটা কি?
-আমাদের আবার জাত কি ভায়া। ঐ যে দেখছ গাড়ীর তেল নিচ্ছে ওটা কার? আমাদের। ঐ যে দেখ হাওড়া তৃতীয় সেতু। কে বানিয়েছে? আমার বাপ। ঐ যে তোমরা হোয়াতে রোজ গল্প ছাড়তে, কোথায় পুজোর থালায় আরশোলা পড়েছে, কোথায় আরশোলারা পোষা নিরীহ প্রাণীগুলোর রক্ত খাচ্ছে, তো, ঐ হোয়ার মেসিনটা চালাত কে? আমার দাদা। আসলে জাত ব্যাপারটাই আমার পূর্বপুরুষের আবিষ্কার। কত সুবিধে দেশ চালাতে, বাহিনী চালাতে।
-আর তুমি?
-আমার কিছু হয় নি। কপালটাই ফল্টি। যাই করি তাতেই ফেল। বৌএর মুখ ঝামটা খেতে খেতে আর পারি নি, হেলিকপ্টার থেকে দিয়েছি গন্গায় লাফ।

শান্তি পোড়া অদৃশ্য গালে হাত দিয়ে হাঁ করে শোনে। শ্মশানে যাবার আগে আর একবার তাকে হাফ জ্বালানো হয়েছিল তখনই যায় গালটা পুড়ে।
-ধুর। আমি বাবা ওসব লাফ টাফের লাইনে নেই। আমারে জোর করে জ্বালায়ে দিসে। দুঃখ নাই। যতদিন ছিলাম গান গেয়ে আনন্দ করে ছিলাম।
– ঐ দেখ দলে দলে ঢুকে পড়ে কেমন হাত পা খেলিয়ে নাচছে।
– এত প্যাসেন্জার? দেশে কি মড়ক লাগল নাকি? করোনা তো কমেই এসেছিল। অমল উত্তেজিত হয়ে ওঠে। শান্তির মঝা লাগে। এখনও কচি, দুধের গন্ধ যাইনি, সহজেই গরম হয়ে ওঠে।
– সব দেখতে শুনতে পাচ্ছি। মুখ টিপে হাসে অমল।
– শরীর নেই তো কি! তার ভাবনাগুলো এমন নিরাবরণ হতে দেখে যেন লজ্জায় লাল হয়ে ওঠে শান্তি।

গোলমালটা আরও তেজী হয়। শোনা যায় ভিসা নিয়ে খুব দুনম্বরী হচ্ছে। যারা পয়সাওলা বা মুলোর খেতের মালিক তারা আর অপেক্ষা না করতে পেরে চিত্রগুপ্তের কাছে সংরক্ষণের আবেদন করেছিল। মন্জুর হয়েছে। তাদের ভিসা ক্লিয়ার হলে তবে শান্তিদের টাইম।
-এখানেও লাইন ভাঙা। চিত্রগুপ্তকে ম্যানেজ করল কে? চিত্রগুপ্ত কি মুলো খায়?

-কে বলল রে? দুটো ছায়া এসে একটা কুচকুচে কালো ছায়ার কান ধরে টানতে টানতে নিয়ে যায়। সত্যি কি কান ধরে? ওরকম মনে হয়। মনে হয় একদম নীচের তলায় যেখানে পুলিশের গুলি খেয়ে মরাদের রাখা সেখানে ঠেসে দিয়ে এলো। পুলিশরা এখানে এসেও পুলিশের কাজ করে। অভিজ্ঞতা কাজে লাগে।

গোলমাল বাড়তেই থাকে। চারতলা থেকে পিলপিল করে নেমে আসে চাষী ঋণ শোধ না করে গলায় দড়ি দেওয়ার দল। তারা বসে পড়ে গেটের সামনে। দুটো কালো বেড়াল পাহারা দেয় গেটটা। তারা ভয় পেয়ে দে দৌড়।
হঠাৎ কচি গলার শব্দে ভরে যায় চারদিক। তিনতলায় সব ভিডিও গেম না পেয়ে সুইসাইড করা বাচ্চাদের ঘর। পাশের ঘরে অংকের তিন নম্বর কাটা গেছে বলে মার মুখঝামটা খেয়ে ঝুলে পড়া বা লাফিয়ে বাচ্চারা। ঝোলার সময় তারা অভিকর্ষের অংকে একেবারে নির্ভুল। এই দুইদলের মধ্যে ক্রিকেট ম্যাচ হবে বলে চিত্রগুপ্ত উৎসাহ দিয়েছিলেন। তার জায়গায় লেগে গেছে মারপিট।
-মুখ্যু। ইলিটারেট। খালি ভিডিও গেমস খেলা বড়লোকের বাচ্চা
-পড়ে কি মাথাটা কিনলি শা। ৯৯ পেলেও কলেজে চান্স পেতিস না। তারপর আমার ড্যাডির কাছে সুপারিশ চাইতে আসতো তোর বাপ।
শিশু বা কচি বলে তাদের কেঁচালের ভাষা যে কচি হবে তা নয়।

শান্তি দেখে আর খিলখিল করে হাসে। অমল ভাবে আর গম্ভীর হয়। আবার শান্তির ছায়ার থেকে ইথারে যে কাঁপন ধরে, তাতে ওর ছায়াও শিরশির করে ওঠে।

শহর পরিস্কার হচ্ছে। ভোট আসছে। ভোট পুজোর মত। ঘরদোর ধুয়ে মুছে সব গোলমেলে জিনিষ খাটের তলায় ঢুকিয়ে আলপনা দিতে হয় গোল গোল। ভোটের আগেও চারদিকে গাছে লাইটপোস্টে কাগজের পিছনের পাতায় সেজে ওঠে বিজ্ঞাপনের আল্পনায়। ঝুপড়ি পরিস্কার হয়। বাজার উঠিয়ে ব্লিচিং পাউডার স্প্রে করে যারদিক একটা অথরিটি অথরিটি গন্ধ বইতে থাকে। শিউলিগাছে ঝোলে অনেক হাত ফুল মোটা মোটা গোঁফ আর চোখে একে ৪৭ ফিট করা মহিলার হিহি চেশায়ার হাসি।

এবারে টেকনলজি চলছে। ঠিক হল সব বুলডোজার দিয়ে সাফ হবে। তাড়াতাড়ি হয়। ড্রাইভারকে গুগল লোকেশন দিয়ে দাও বিপক্ষের লোকদের। অবশ্য চাঁইদের বাদ দিয়ে। চাঁই চাঁই ভাই ভাই। নৈলে খেলবে কার সংগে।
তো সেই বুলডোজার নিয়ে আজ বেরিয়েছে মহেশ যাদব। তার ছেলে বিরন্চি চালায় ট্রাকটর আর ওচালায় বুলডোজার। সৃষ্টি ও ধ্বংস দুই এক পরিবারে। আজ কোন পাবলিক টারগেট নয়। আজকের স্লোগান পুরনো পড়ো বাড়ি দেখলেই গুঁড়িয়ে দাও। ঐসব পুরনো বাড়িতে নানা রকম উৎপাতের বাসা। কোথাও বোম বাঁধা কোথাও লুকিয়ে ইস্তাহার লেখা আবার কোথাও ভূতের নৃত্য। ভাঙতে ভাঙতে মহেশের নজর পড়ল সেই বাড়িতে যার ছায়াছায়া ছাদে হাঁটছে অমল আর শান্তি। তাদের দেখতে না পেলেও তারা দেখতে পায়। শান্তি দেখল একটা বিরাট লোহার হাতের মুঠি ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছে। তারপর ধড়াম করে এক আওয়াজে সেই ঢাই টনকা মুঠ্ঠি এসে পড়ল আর বাড়িটি ঝুরঝুর করে ঝরে যেতে লাগল একের পর এক বুলডোজারের আপার কাটের ধাক্কায়।

এইটুকু বাড়ীতে অত ছায়া শরীর কি করে ফিট করলো সেটা নিয়ে পাঠকের সন্দেহ হওয়া স্বাভাবিক। একটা ধারাভিতে কত লোক থাকে জানেন? ২ স্কোয়ার কিলোমিটারে দশ লক্ষ। এনাদের আরো সুবিধে আছে। জন্মকালে সাইজ ৫ থেকে ৬ ফুট হলেও এখন তাদের শরীরটা তো আর নেই। শুধু মূল তথ্য বা ইনফরমেশনটুকু আছে। চিপের মত। মিনিয়েচার। এক সেন্চিমিটারে ১০০ বিলিয়ন লজিক ইউনিট যদি থাকতে পারে তো এত বড় বাড়ীতে কত ছায়া থাকতে পারে ভাবুন। সেই হাজার হাজার সুইসাইড কেস, গুলি খাওয়া ছাত্র, অচ্ছুত কিন্তু ধর্ষণযোগ্যা, বিদ্রোহী, হুইসলব্লোয়ার, সাংবাদিক সব হুড়মুড় করে বেরিয়ে পথে বসল।

পথ বন্ধ। অবরোধ। চিত্রগুপ্ত ভিসা দাও। ভিসা ছাড়া নড়ছি না। কোন কথা শোনা যাচ্ছে না কিন্তু শহরের মাটি কাঁপছে আর গুমগুম করে আওয়াজ হচ্ছে। বুলডোজার এগোতেও পারছে না আর এই অবরোধও ভাঙতে পারছে না । এমন সময় কে যেন একটা প্লানচেট মাইক জোগাড় করে অমলের হাতে ধরিয়ে দিল। এই মাইক ইন্টার ডাইমেনশন কাজ করে। অমল হাতে মাইকটা নিয়ে একটা বৈপ্লবিক গান ধরতে গেল। কিন্তু ভিসা চাই ভিসা চাই আওয়াজে ওর গলা গেল ডুবে। মনে হচ্ছে যেন দেশের সব ইনজিনীয়ারিং কলেজের ছাত্র একদিনে আমেরিকান কনস্যুলেটে লাইন লাগিয়েছে।

শান্তি এসে সান্ত্বনা দিতে গেল। কিন্তু অমল গেল খেপে। ভীষণ একটা গোলমালে জড়িয়ে গেল। হাজার হাজার ছায়া ওকে ঘিরে নাচতে শুরু করল। সেই নাচের ওয়েভ থেকে বিশ্রী একটা ধোঁয়ায় ভরে গেল চার দিক।

অমলের জ্ঞান ফিরতে দেখল একটা আধপোড়া বাড়ীতে ও শুয়ে। এক ডজন বাঁশী সব পুড়ে ছাই। বাইরে হল্লা। একটা দমকল জল দেবার চেষ্টা করছে। সবাই বাধা দিচ্ছে। একজন একটা ওয়ান শটার নিয়ে ওর দিকে ধীর পায়ে এগিয়ে আসছে। একটা ছোট্ট শিস। একটা শীতল হিম স্পর্শ মায়ের হাতের ছোঁয়ার মত।

অমল হাসল শান্তির দিকে চেয়ে।
ভিসা নিয়ে এলাম। একদম চিত্রগুপ্তের হাত থেকে।
তারপর দুজন মিলিয়ে গেল। যেখানে রোমিও জুলিয়েট থাকে হয়ত সেই শহরে। পিছনে পিছনে যেতে লাগল লক্ষ লক্ষ ছায়া। তাদের চরণরেখা ঢেকে গেল তারা থেকে ভেসে আসা ধুলোয়।

 

About Author


বাসুদেব গুপ্ত। বয়স ৭০। অধুনা নিবাস সল্ট লেক কলিকাতা। পেশা কম্পিউটার সফটওয়ার ডিজাইন ও এক্সপোরট। নেশা বাংলা ইংরাজী কবিতা ও গল্প লেখা। দ্বিতীয় প্রেম কুকিং