পরীক্ষা আর প্রেম- কত প্রাণ ঝরে প্রতিদিন 

ভাবনা এলোমেলো – আবার এলো ভর্তি পরীক্ষার মরশুম। ভালো… আরও ভালো নম্বর পাওয়ার জন্য হুড়োহুড়ি শুরু হয়ে গিয়েছে। এ সময়  মধ্যবিত্ত মানুষের মন থেকে বাস্তববুদ্ধি আর ভগবৎচিন্তা দুটোকেই প্রায় লুপ্ত করে নম্বর বিরাজ করতে থাকে। ভগবানের সাথে সম্পর্ক দাঁড়ায় ভোটারের সাথে রাজনীতিকদের মতন- যদি ভোট-ই না দাও, তোমাকে তোয়াজ করে লাভ কি?/ নম্বর পাইয়ে না দিলে তোমাকে পুজো করে কী হবে? – এই ভাব। অথচ, মানুষের শিক্ষার আদি উদ্দেশ্য নম্বর ছিল না। আমেরিকান শিক্ষাবিদ ও দার্শনিক জন ডিউয়ি বলেন, পড়াশোনা (শিক্ষা) ভবিষ্যৎ জীবনের প্রস্তুতিপর্ব নয়, শিক্ষাই জীবন (Education is not preparation for life, education is life itself. -John Dewey, 1859-1962)। অনেকে পড়াশোনার জন্য খেলা ছেড়ে দেয় দেখে আমেরিকান লেখক ও অধ্যাপক লিও বুসক্যাগ্লিয়া লেখেন, “কেন যে অনেক শিক্ষক ও অভিভাবক এখনও পড়ার ও খেলার সময় আলাদা করে দেখেন, সে দুটি’র অতীব গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগটি দেখতে পান না, তা বুদ্ধির অগম্য।” (It is paradoxical that many educators and parents still differentiate between a time for learning and a time for play without seeing the vital connection between them. -Leo Buscaglia, author, 1924-1998)

নিফটি ৫০ কোম্পানিগুলোর ডাইরেক্টরদের মধ্যে প্রথাগত শিক্ষায় শুরু থেকে ভাল কিছু আই.আই.টি, আই.আই.এম পাশের পাশাপাশি প্রথমে নিরেস সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বি এ/বি কম করে, পরে অভিজ্ঞতা ও প্রজ্ঞা অর্জন করা মানুষও প্রচুর। কোম্পানির ওয়েবসাইট বা উইকিপিডিয়াতে কোটি কোটি টাকা উপার্জন করা বহু বড় বড় ডিরেক্টরের অভিজ্ঞতার লম্বা লিস্ট, কিন্তু প্রথাগত শিক্ষার উল্লেখও নেই। এঁদের জ্ঞান-বুদ্ধি নেই ভেবে সান্ত্বনা খোঁজা বাতুলতা। সেটি না থাকা সত্ত্বেও রাজনীতিবিদরা সরকারী সংস্থার বোর্ড-এ ঢুকে পড়তে পারেন, কিন্তু প্রাইভেট সংস্থাগুলো সাধারণতঃ অকেজো লোককে বোর্ড-এ বসিয়ে রাখে না।

ভালো-মন্দ উদাহরণ – সাধারণ কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বা মাইসোর, আসানসোল, পাটনার কলেজ থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে আই.আই.টি গ্র্যাজুয়েটদের থেকে এগিয়ে যাওয়ার উদাহরণ প্রচুর। বেঙ্গালুরুতে হলদিয়া ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে পাশ করা একটি ছেলের কথা জানি যে নিজে সফটওয়্যার-এর কাজ করতে করতে এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে তাকে আর সফটওয়্যার কোডিং-এর কাজ দেওয়া হয় না, অনেক কিছু মিলিয়ে জিগ-স পাজল সমাধান করে কোম্পানির এফিসিয়েন্সি বাড়ানো তার কাজ। সেটি এমন এক জায়গা যেখানে লোক পাওয়া যায় না বলে কোম্পানি তাকে অকল্পনীয় তোয়াজে রেখেছে।   

অ্যালফাবেট (গুগল-এর হোল্ডিং কোম্পানি)-এর এখনকার মাথা সুন্দর পিচাই, চেন্নাই-এর এক মাঝারি স্কুল থেকে পাশ করে খড়গপুর আই.আই.টিতে যখন মেটালার্জি পড়তে ঢোকেন তখন খড়গপুর দেশের প্রথমতম ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ ছিল না। সেই কলেজেও মেটালার্জি পড়তে প্রথম সারির ছাত্রদের ভিড় ছিল না। সত্য নাডেলার গ্র্যাজুয়েশন ডিগ্রী হ’ল ম্যাঙ্গালোর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএসসি (ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং)। পশ্চিমবঙ্গের অধুনা খ্যাত দু’জন- বক্তা ও লেখক  চন্দ্রিল ভট্টাচার্য পাশ করেছেন প্রেসিডেন্সী বা যাদবপুর নয়, স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে আর কবি শ্রীজাত পড়েছেন আশুতোষ কলেজে। ভর্তির ব্যাপারে মরীয়া না হবার অন্য কারণও আছে। শ্রেষ্ঠ জায়গায় কোচিং করে ভাল কলেজে নিজে পড়ার সময় সুবিধে করতে না পারা বা এত কষ্টে পাওয়া কোর্সের সাথে মানিয়ে নিতে না পারায় আত্মহত্যার ঘটনা ভূরি ভূরি। 

বড়দের সৃষ্টি করা ভয়ের গল্পে অল্পবয়সীদের মধ্যে টেনশন, কখনো কখনো ব্লাড প্রেসার ও মানসিক অসুখ বেড়ে যাচ্ছে। বাবা-মা’র প্রত্যাশা আর নিজের ইচ্ছের ফাঁক ভরাতে না পেরে অনেকেই নিজেকে ধ্বংসের পথ বেছে নিচ্ছে। আমার জানা একটি ঘটনায় আই.আই.টি’র এক অধ্যাপক-এর ক্লাস টেন-এ পড়া ছেলে টিভি রিমোট না দেওয়ায় বাবা-মা’র সামনেই নিজের পেটে ছুরি মেরে আত্মহত্যা করে। আর এক ভদ্রলোকের দু্টি ছেলেই দিল্লীর অতি বিখ্যাত কলেজে ঢোকার পর ড্রাগ-এ আসক্ত হয়ে অকালে মারা যায়। আর একজন কলকাতার অতি খ্যাত কলেজের ছাত্র ঐ কারণেই জীবন্মৃত হয়ে দিন কাটাচ্ছে।

একটি বা দু’টি নয়, সুর আছে আরো আমি কেরিয়ার কাউন্সেলর নই, বিশদ কিছু বলা আমার আয়ত্তাতীত। তবু দেখি অল্প কিছু ব্যতিক্রম বাদ দিলে পশ্চিমবঙ্গের প্রতিভাবান ছাত্রদের একাউন্টেন্সি বা আইন পড়ার ঝোঁক কম, বাংলা, ইংরাজি বা ইতিহাসের ভাল ছাত্রদেরও দেশ-বিদেশে চাকরি আছে। অ্যাকচুয়ারিয়াল সার্ভিস (ইন্সিওরেন্স-এর ক্ষয় ক্ষতির আর্থিক মুল্য নির্ধারণ করা) ধরণের কোর্স সম্বন্ধে ৯০% ছাত্র ও শিক্ষক খোঁজই রাখেন না। ভারতে গড়ে একজন চার্টার্ড একাউন্ট্যান্ট একজন ডাক্তারের চেয়ে বেশি আয় করেন। শুধু স্বনামধন্য উকিলরাই ভয়ানক বেশী উপার্জন করেন এমন নয়, কোম্পানিগুলোতে নবীন আইনজীবীর সম্মান ও মাইনে ইঞ্জিনিয়ারদের চেয়ে কম না।  সুতরাং, খোলা মনে চার দিকে তাকালে তথাকথিত ভাল  স্কুল-কলেজে অ্যাডমিশনের পরমার্থ না পেলেও  জীবনে অর্থ খুঁজে পাওয়া অসম্ভব হবে না।    

অমিয় সাগরের তীরেতে বসিয়া – উপরের স্বস্তির কথাগুলি ভাবার-দেখার সময়ের অভাবের জন্যই অহেতুক ভয়ে অনেক বাবা-মা তাদের সন্তানের শৈশব কেড়ে নিচ্ছেন। শুধু তাই নয়, অনিশ্চিৎ ভবিষ্যতের ভয়ে কুঁকড়ে থাকা নবীন নাগরিকরা পড়াশোনার মাঝে লুকিয়ে থাকা জানার আনন্দ উপভোগ করার সময়-ও পাচ্ছে না। 

টীম ওয়ার্ক নিয়ে প্রায় দশ বছর আগে বহুজাতিক কোম্পানির এক ভারতীয় ম্যনেজারের সাথে কথা হচ্ছিল। তিনি বললেন, ‘ভারতীয়দের সে বিষয়ে খুব সুনাম নেই।‘

– কারণটা কি?

– মনে হয়, ছোট বেলা থেকে ‘যে করে হোক তোমাকেই ফার্স্ট হতে হবে।‘- এই শিক্ষার ফল।

নম্বর… আরও নম্বরের যুদ্ধক্ষেত্রে নেমে সারা দিন যারা বইমুখো হয়ে থাকে তাদের মেলামেশার, একসাথে এক-ই উদ্দেশ্যে কাজ করার অভ্যেস হয় না। অফিসে একঘরে হয়ে পড়া এবং বিয়ের পর ঘরে ঢুকে পড়া নতুন মানুষটির বনিবনা না হবার বীজ উপ্ত হয়, অসুখী দাম্পত্য জীবনের… বিবাহ-বিচ্ছেদের সম্ভাবনা বাড়ে। 

দেখ চাহি হৃদয় প্রসারি – যাঁরা চান সন্তান বিখ্যাত হোক, তাঁরা একটু নজর করলে দেখতে পাবেন, এখন যাঁরা পৃথিবী চালাচ্ছেন, এমন কি বিদ্বৎসমাজেও যাঁরা সম্মানের উচ্চাসনে অধিষ্ঠিত তাঁরা অনেকেই আইনস্টাইনের মত মাঝারি স্কুলের মাঝারি নম্বর পাওয়া লোক। যাঁরা জীবিকার ভয় পাচ্ছেন, তাঁদের জানাই কানাডা ছাড়া উন্নত দেশগুলো যেমন জাপান, অস্ট্রেলিয়া, জার্মানি, গ্রীস বা ইটালিতে জনসংখ্যা ভীষণ কমে যাওয়ায় তাদের অনতিবিলম্বে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার থেকে কল-মিস্ত্রী পর্যন্ত কাজের লোক আমদানী করতে হবে।  ভারতীয়দের বিদেশে চাহিদা বেশী, কারণ তারা উগ্র, মেজাজী নয়, ইংরাজী ভাষার সাথে পরিচিত আর দেশের মধ্যেই নানা ভাষা আর সংস্কৃতির সাথে বেড়ে ওঠার ফলে নতুন জায়গায় মানিয়ে নিতে পারে। 

বিষাদের পটচিত্র – এই উজ্জ্বল সময়ে দেখি, ২০২১ সালের সরকারি তথ্য অনুযায়ী ১৩০০০-এর বেশী ছাত্র আত্মহত্যা করেছে। নানা বয়স মিলিয়ে  শুধু পরীক্ষার ফল খারাপ হবার জন্য আত্মহত্যা করেছে ১৬৭৩ জন (৯৪% ৩০ বছরের নীচে)। নম্বরের তোয়াক্কা না করেই এখনকার বিল গেটস, জাকারবারগ, স্টিভ জবস বা আগেকার বেঞ্জামিন ফ্র্যাঙ্কলিন, রবীন্দ্রনাথ, এডিসন, রামকৃষ্ণ বা চার্লস ডিকেন্স অবিস্মরণীয় বড় মানুষ হতে পেরেছেন। বইয়ে তাঁদের কথা পড়া সত্ত্বেও এই বিশাল সংখ্যক ছাত্রের নম্বরকেই জীবনের সার ধরে নেওয়া আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার গাফিলতি আর সীমাহীন হৃদয়হীনতাকে প্রকট করে তোলে।  

নম্বর ছাড়া অনভিজ্ঞরা আর একটি বিষয়কে জীবনের সার মনে করে, তা হ’ল প্রেম। প্রায়ই প্রেম-এ ব্যর্থতার জন্য আত্মহত্যা বা খুন করার খবর সারা পৃথিবী জুড়ে। ভারতে ২০২১ সালে প্রেমঘটিত কারণে আত্মহত্যা করেছে ৭৫৬৩ জন (৮৩% ৩০ বছরের নীচে)। খুন-এর হিসেব নেই। অল্পবয়সীদের অনেকেই বুঝতে রাজি নয় যে অনিচ্ছুক মানুষের সাথে জীবন কাটানোর চেয়ে অন্য দিকে তাকানো ভাল। একটি মানুষের সঙ্গই পরম সার্থকতা, আই.আই.টি তে ঢোকার সুযোগ না পেলে বা ডাক্তারি না পড়তে পারলে জীবনে উন্নতির কোন সম্ভাবনা নেই- এসব ভাবনা বাস্তবজ্ঞানবর্জিত মুর্খামি ছাড়া আর কিছু নয়। 

তার কথাটিও কও – ইদানীং ইতিহাস আর বিজ্ঞানের স্কুল সিলেবাস-এ পরিবর্তন নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে, কিন্তু অল্পবয়সীদের আত্মহত্যা নিয়ে হচ্ছে না। আমাদের পূর্বসূরিরা ইংরেজ আমলের পাঠ্যবই পড়ে স্বাধীনতাসংগ্রামী হ’ন নি, অন্যেরাও ‘সদা সত্য বলিবে’ মুখস্হ করে সত্যবাদী হয়ে পড়ে নি। এখন ইন্টারনেট এক দেওয়ালবিহীন লাইব্রেরী। ডারউইনের তত্ত্ব সিলেবাস থেকে ঊড়িয়ে দিলেও বাচ্চারা ঠিক পড়ে নেবে। সিলেবাসের গুরুত্ব অনস্বীকার্য হলেও,  নম্বর ও প্রেমভিত্তিক ভুল জীবনবীক্ষা এড়িয়ে যাবার মত তুচ্ছ বিষয় নয়।  নতুন সিলেবাসে যাঁরা নম্বর কম পেয়ে বা প্রেমে ব্যর্থ হয়ে জীবনে সার্থকতা অর্জন করেছেন তাঁদের কথা থাকবে কি? পাঠ্য না-ই বা হ’ল, এঁদের জীবনে নম্বর আর প্রেমের ভূমিকা নিয়ে স্কুলে স্কুলে এক একটি গ্যালারি তৈরি করা অতি প্রয়োজন মনে হয়।  

তথ্য দেখার সময় মনে রাখতে হবে সমাজে বদনাম হবার ভয়ে অনেক আত্মহত্যাকে স্বাভাবিক বা অন্য কারণে মৃত্যু  বলে নথিভূক্ত করার প্রবণতা থাকে। তবুও, সরকারী হিসেব অনুযায়ী আমাদের দেশে পাঁচ বছরে (২০১৭-২০২১) ছাত্রদের আত্মহত্যা ৩২% বেড়ে গেছে, আর প্রেমে ব্যর্থতার জন্য আত্মহত্যা বেড়েছে ৪৮%।  

এবার একটা মোটামুটি অঙ্ক করা যাক- ২০২১ সালে ছাত্রদের আত্মহত্যা ১৩০০০, প্রেমে আত্মহত্যা ৭৫০০। ধরা যাক ব্যর্থ প্রেমিকদের মধ্যে অর্ধেক ছাত্রও ছিলেন (৩৭৫০ জন)। তা হলে মোট তরুণদের আত্মহত্যা দাঁড়াচ্ছে, ১৬০৫০ (১৩০০০+৩৭৫০)। তার মানে, প্রতিদিন প্রায় ৪৬ জন সম্ভাবনাময় সুস্থ-সবল তরুণ-তরুণী জীবনের দুটিমাত্র বিষয়ে ভুল ধারণার জন্য নিজেদের নিষ্করুণ মৃত্যুর পথে ঠেলে দিচ্ছে। খালি হয়ে যাচ্ছে ঘর, ভেঙ্গে যাচ্ছে বেঁচে থাকা প্রিয়জনের মন।

নিষ্ঠুর নীরবতা – পরীক্ষার নম্বরকে ধ্রুবতারা ভেবে সম্ভাবনাময় অসংখ্য তরুণ জীবন শেষ করার অর্থহীনতা……অসারতার কথা আলোচনায় উঠছে না। একটি মানুষের মধ্যেই যে ভালবাসা পাবার শেষ সুযোগ এই ভুল ভাবনা থেকেও নতুন প্রজন্মকে মুক্ত করার কোন উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। অবোধ, অনভিজ্ঞ ছোটদের প্রতি কী নির্বিকার, কী করুণাহীন আমাদের দেশ! সুকান্ত ভট্টাচার্যে’র বহু কাল আগের অঙ্গীকার, “পৃথিবীকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি…” থেকে কত দূরে আজ আমাদের অবস্থান!

 

২৮শে এপ্রিল, ২০২৩                                                                           -অরিজিৎ চৌধুরী

About the author

Arijit Chaudhuri, located in Navi Mumbai, petroleum geologist by profession. Also interested in issues concerning pollution, climate change and fast depleting groundwater reserves.Travelling, reading, writing articles, composing rhymes and recitation are his hobbies.

 

তথ্যসূত্র

https://ncrb.gov.in/sites/default/files/adsi_reports_previous_year/Table%202.5%20state-ut-city.pdf

https://www.drishtiias.com/daily-updates/daily-news-analysis/accidental-deaths-suicides-in-india-report-2021-ncrb

https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pmc/articles/PMC9707658/

https://ncrb.gov.in/sites/default/files/ADSI-2021/ADSI_2021_FULL_REPORT.pdf

https://ncrb.gov.in/sites/default/files/ADSI2017-FULL-REPORT.pdf

2017.pdfhttps://economictimes.indiatimes.com/nri/work/7-eu-nations-that-are-making-it-easier-for-migrants-to-find-jobs-and-move-in/articleshow/93923141.cms?from=mdr