দুপুরের ভোগ খাব বলে একটা চেয়ারে নিপাতিত হয়ে প্যান্ডেলের এককোণে পড়েছিলাম পার্শ্ববর্তিনী একটু উড়েছেন, মানে মহিলামহলে পিএনপিসি করতে গেছেন আমার একটা কনুই তাঁর আসনচেয়ার আগলে রেখেছে এদিকে স্টেজে ঠাকুরের ভোগ হচ্ছে কাপড়ের আড়ালে হোমের ধোঁয়া পাকিয়ে পাকিয়ে উঠছে পরিবেশ ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন মন্ত্রপাঠ উদারা মুদারা ছাপিয়ে উঠছে, ঘন্টার টঙ্কার তালে তালে চলছে আমি একমনে মোবাইলে সুডোকু খেলছি 

হঠাৎ যেন ঢনৎকারে ক্ষান্তি পড়ল চোখ তুলে দেখি এক ভয়ংকর দৃশ্য —- হোমের আগুনের শিখা নিভু নিভু আর প্রচুর ধোঁয়ার কুয়াশা চারিদিক ঝাপসা করে তুলেছে দুর্গাঠাকুরের স্নেহময়ী মুখ ঢাকা পড়ে গেছে ধোঁয়ায় আর সামনেই দেখি এক ভয়াবহ বিশাল দানবাকৃতি, হাতে লেলিহান আগুনের গোলা নিয়ে সিধে আমার দিকেই আসছে তার বিশাল বপু, বদন ভয়ালরকমের দন্তুর! ওরে বাবা!

 

পাশ থেকে কিছু  হাত, যাদের, তাদের মুখ দেখা যাচ্ছে না, দ্রুত সেই আগুনের দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে হয়তো নিরস্ত করতে চাইছে, কিন্তু সেই অমোঘ কালান্তককে কে ঠেকাবে! মুহুর্ত পরে হাতগুলো আবার ধুম্রকুন্ডে হারিয়ে যাচ্ছে আমার আত্মারাম খাঁচাছাড়া হবার যোগার! ঢোঁক গিলতে গিয়ে দেখি গলা কাঠের মতো শুকিয়ে গেছে!

প্রবল আতঙ্কে চেয়ার ছেড়ে লাফ মেরে উঠব পালাবো বলে, তার আগেই দেখি আমার পাশে আবির্ভূত হয়েছেন আমার অপরূপা স্বয়ং দুর্গাস্বরূপিনী বরাভয়প্রদায়িনী স্ত্রী  অকুতোভয়া সেই দুর্ধরধর্ষনী, দনুজদলনী দুহাত প্রসারিত করে সেই দানবের দিকে ধাবিত হলেন আমাকে আড়াল করে, আমি তাঁর পিঠের আড়ালে শরীর লুকিয়ে শুধু মুখ বাড়িয়ে দেখতে থাকলাম 

তিনি তার সামনে পৌঁছলেন, আগুনের অনল হাতের মুঠিতে ধরলেন, দ্রুত সেই মুঠি উর্দ্ধে উঠে তাঁর কপালস্পর্শ করল নৃত্যের ছন্দময় দ্রুততায় তিনি ঘুরে আমার দিকে প্রসন্ন সহাস্যমুখ দেখালেন, দুপা এগোলেন এবং আমার মাথায় সটাং সেই হাতের তালু দিয়ে এক চাঁটি বসিয়ে দিলেন চাঁটি খেয়ে চমকিত এবং বিহবল, হতবাক অবস্থায় দেখলাম সেই দানবওপেয়েছেন তো, আপনারা সবাই, হোমাগ্নি আশীর্বাদবলতে বলতে লেফট টার্ন মেরে অন্যদিকে অগ্রসর হল আমিও হাঁফ ছেড়ে আমার বিপত্তারিনীকে মনে মনে প্রণিপাত করলাম জোর বেঁচে গেছি বাবা, জয়ং দেহি!🙏