কবি পরিচিতি : লুৎফুর রহমান {বয়স ৪৯) একজন আদ্যন্ত গ্রাম-বাংলার মানুষ। নিবাস পূর্বপুরুষদের গ্রামে, পিতামহের তৈরী করা ভিটেয়। সঙ্গ গ্রামের জেলে, বাগদি,মুচি, মিস্তিরি এবং সমগোত্রীয় অন্ত্যজনের মধ্যে। তার অন্য ভাইদের বিপরীতে তিনি ‘সুসভ্যতার আলোক’ থেকে দূরে নিজের ইচ্ছেতে গ্রামেই বন্দী থেকে ‘মুক্ত’ আছেন। নিশুতি রাতে গ্রামের পাশের সুবিশাল, অন্তহীন বাওড়ে (naturally formed vast water body) একা একা নিজের কেনা নৌকো চালানো তার বিলাস। কথা বলতে বলতে হঠাৎ করে উচ্চস্বরে লালনের গান গেয়ে ওঠা তার ব্যসন। শহুরে প্রফেনিটি তার রোজকার ধারাভাষ্য। কবিতা তার মনের অবারিত পদচারনার ফসল।
মনের অন্দরমহল
– লুৎফুর রহমান
ডুব দিয়ে
গা ছুৃয়ে দেয়া যে মেয়েটাকে আজ হারিয়ে
এলাম জনমের মত…..!
আমি তখন অনেকের মত সুন্দর
আমি তখন অনেকের মত ফরসা
গোঁপ উঠেছে সদ্য
ইদুচাচার মা হলেন আমার ঠাকুরদার বড়বোন
নতিডাঙায় বাড়ি।বেড়াতে গিয়েছিলাম সেই
প্রথমবার!
গল্পের ত জীবনও থাকে
মরণও থাকে
নাম তার পুঁটলি
ঠাকমার নেওটা, আমারই মত,সদ্য মাধ্যমিক
নৌকর দড়ি খুলে বাওড়ে ভাসি
সে গিয়ে তদারক করে আসে
রাতে দোতলায় গিয়ে বসি
সে এসে জোনাকির মত আলো কাটায় আকাশ
মরা তারা দেখায়
অকারণ…
ঠাকমা বললেন
ভাবে ভাপ দে হোসেন
নাহলে আজ চোখ— কাল বুক জ্বলবে
চ
তোকে একদিন বাওড়ে স্নান করিয়ে আনি।
পুঁটলিও গেল মগ গামছা আর দুধরণের তেল নিয়ে
বাঁশবন পার হলে ওদের বাড়ি চোখে পড়ল
ওপারে
যে লোকটা রোজ গাঁয়ে গাঁয়ে ঝুড়ি মাথায়
তেল নুন ঝাল ও ময়দা বেচতে যায়
শুনলাম
ঐ তার বাবা।
খাঁটো ধূতি পরণে
গলায় তুলসীর মালা,শুনলাম,ওর মা এক জালুয়া যুবকের সঙ্গে ভেগে গেছে অচিনদেশে
বছর দশ হল
সংসারে তার নতুন মা,তিনি বৈরামপুরের সাধুখাঁদের মেয়ে
পুটলীকে নামে নয় বেরনির মেয়ে বলে ডাকা হাঁকা করেন…
ঠাকমা বললেন!
বাড়ির নীচে ঘাট
তার ফটিক কালো জল
সেই জলে নেমে
ঠাকমা আর পুটলী হাঁসের মত ডুবছিল ভাসছিল
দুলে দুলে
গাঙে ডোবা একেই বলে
দেখছিলাম হা করে..!
ওপারে কত কত আমবন তালবন তলায় তলায় একটা দুটো ঘর
পেট মোটা গলা সরু লিকলিকে
পা
এক খোকাকে মেরে আধমরা করছিল একজন খেংড়া কাঠির মত উদলা বউ….
ঠাকমা বলেছিল ঐ জেলেপাড়া,আর ঐ বউটাই
পুটলীর সৎমা…
ডুব দেব
হঠাৎ কোমরে এক টান
অমনি
গামছাটা খুলে গেল,জলের নীচে তা কোথায়
গিয়ে যে পড়ল
জানব,কোন উপায়ই পেলাম না
জলে ঘোড়েল সোড়েল কত কি থাকে
শুনেছি
তা বলে পরণ খুবলে খায় এমন কোন জলজন্তুর নামই ত শুনিনি কোনদিন!
তরাসে
নিজের দুপায়ের ওপর হড়কে
উঠে এলাম ওপরের দিকে
দেখলাম
পানকৌড়ির মত মাথা ভাসাল পুটলী,তার আগের জায়গাতেই….
মুখে কোন কথা নেই
তবে চোখে মুখে কী যেন সে লুকাচ্ছে
বুঝলাম কান্ডটি তারই ঘটান
এদিকে স্নান সারা হল ঠাকমার
পুটলীও ডাঙায় উঠল পর পর
আমি তখনো গলাজলে প্রায়….
অবশেষে পরণ চুরির কথা শুনে
ঠাকমার সেকি আতংক
আর ঢকঢক করে হাসি…
হোসেনের কিনা জলপৌরীতে পেল..!
পুটলিকে সরিয়ে দিয়ে
সায়া দিলেন
বললেন
পর
আর ঐ বাগান দিয়ে বাড়ি গিয়ে ওঠ!
ঠাকুমার সায়া পরে
লুকিয়ে কুলতলা আর কচুবন দুপায়ে দপিয়ে গিয়ে দাঁড়ালাম
দালানের পিছনে গোয়ালে
এবার পুটলী এল উথালিপাথালি মুখে
আর
পারতপক্ষে ছুড়ে দিল গামছাটা
বলল
পরে নাও…
হায়রে মরণ
আগাছা যা করে রেখেছ
দুপায়ের খোলে
এবার ধরলে কিন্তু
ছিঁড়ে দেব,……ছি,নোংরা মানুষ..!
থাকল পড়ে গামছা
উচিৎ শিক্ষা দিতে ঝাপিয়ে পড়লাম পুটলীর
ওপর
দেখি কি
যা ধরি সবটুকু তার বুক
যা পেষণ করে পিষ্ট করে শিক্ষা দেব ভাবি
সবটুকু তার জলেভেজা চোখ
আর
নরম ধুকধুকি…..
ছাড়ো হোসেনদা,লাগছে,ছাড়ো
বলে কেঁদে ফেলল পুটলী
আর
টপ করে মাটিতে পড়ে
কেমন মিইয়ে গেল পুরো
দেখে
উলটে আমিই কেমন লজ্জা
ও ভেবাচেকা খেলাম,এ মা,এমন হোক
তা ত চাইনি
বুঝলাম পুটলী শুধু নামেই
সবার মত চোখ মুখ হাতে পায়ে গড়া হলেও
ঐ
দেহটুকুর আবডালে সে আসলে আস্ত একটা অবুঝ মানুষ
যা আমি খেয়ালই করিনি এতক্ষণ
করার কথাও অবশ্য ছিল না
সেইদিন….
তারপর দু-একদিন আরো ছিলাম নতিডাঙার ঐ খাঁবাড়ি
কিন্তু পুটলী আর সামনে আসেনি
আমিও আর ওমুখো হৈনি
২৫ বছর!
গেল বেস্পতিবার
ঠাকমা মরেছে,খবর এল ফোনে….!
ফলেয়া নতিডাঙা ফকফকা জোসনা
ছাদে বসে রাতের বাওড় আর নৌক
কারা যেন গান গায় হু হু গুন গুন…
বাওড়ের ওপারে….
আর ঠাকমা ও পুটলী সব কেমন মনে পড়ল
বুকটা কেমন মুহূর্তে কি এক অজানা ব্যথায়
ও অপরাধে
শুলিয়ে উঠল…!
মন আর বশ মানল না
দিনরাতের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এই ত ফুরিয়ে
গেল জীবন
দেখতে দেখতে কেমন যেন মরাটুকুই শিখলাম
শুধু জীবনভোর
অনেক কষ্টে দিনটা বাগে এনে
গেলাম নতিডাঙায়
ঠাকুমার জানেযায় শরিক হতে।
ফলেয়ার সেই বাঁশের সেতু আর নেই
বাওড়ের ওপর এখন মোটা এক ব্রীজ
ফলেয়ারই
আদর্শ বালিকা বিদ্যালয়ের মত গম্ভীর ও উচ্চ অবিকল
আমি নৌক নিলাম ব্রীজের তলা থেকে
যাতে
বাওড়টার দুটো বাঁক আর একটা লম্বা খাল পেরতে পারি
সেই সে-কালের মত…
নিঝুম বাঁশবন দুপারে
আমকাঠালের বাগান
তার তলায় তলায় মুসলমান পাড়া বাগদী পাড়া আর কুমোরপাড়া আর ঐ নতিডাঙা-গ্রাম….
বাওড় যখন ফলেয়া ছাড়াল
সেই আগের মত
খাঁবাড়ি, মানে ঠাকমার বাড়ি চোখে পড়ল
সবার প্রথম…
বাওড়ের দিকে সামান্য হেলে কেমন ধবধব করছে এখনো
খাঁবাড়ি
আসার আগে,
তারো আগে পুটলিদের খোড়োচাল
আর মাটির বাড়ি দেখা যেত
এখন পঞ্চায়েত যোজনার একটা ঘর সেখানে
পাকা
পাশে পাশে বসতি-তে মজবুত এক পাড়া এখন
নৌক গিয়ে ঢেক নেব নেব করল….
ডাঙায় দেখলাম দুখানা বাঁকা তালগাছ
তার গুড়িতে ঠেঁস দিয়ে দাঁড়িয়ে
একজন আমাকে হা করে দেখছে…!
টোটো অটোয় ছয়লাপ পথ ঘাট
সেই কালে
নৌকয় সওয়ার হয়ে নতিডাঙা আসা…
অবাক হওয়ারই কথা
কিন্তু
ঐ বুকে ভারী
বাওড়ের দিকে ঝুৃঁকে ঝঁকে নৌকসমেত আমাকে দেখা বউটা
পুটলী ছাড়া আর কেউ না
মন কেমন যেন বলল!
কারণ
ঐ কেমন যেন কাৎ হয়ে তাকান. ঝুঁকে দেখার. ভঙ্গি
বড় চেনা চেনা লাগল চোখে…
আর কিছুতেই বুঝতে না দিয়ে নুনের চা করে খাওয়ান
কিম্বা দরগাতলার নাম করে ভরদুপুরে শ্মশান পার করে তাল বাগানে নিয়ে যাওয়া….
সব কেমন মুখস্ত আছে, মনে পড়ল!
ঠাকুমার কবর হল খাঁবাড়ির পিছনে
বাওড়ের পাড়ের একদম কোলে
এক বাচড়া জমির পশ্চিম কোণায়…..
যেখানে এককালে আমড়া গাছটা ছিল
তার গোড়ায় মাটি পেল অবনীমোহনের
বড় বোন….
নতিডাঙার রহেদুন নবী খাঁর বউ
মানে খাঁবুড়ি….
জানেজাও ফুরাল….!
মোল্লা মুর্শুল্লি চলে গেল দশদিকের গ্রামে
ও
গঞ্জে!
কবেকার মথুরগাছী – বিষ্ণুপুর গ্রাম
সেই গ্রামের
কবেকার সব মানুষ অবনীমোহন ও তার বোন
বাবা ইজ্জত আলী সাহেব…
……রাইকমল মুন্সী গড়ঠাকুরদা…..
আর এই গোপালনগর হয়ে বিপুল বাওড়
তার একপাড়ে এই নতিডাঙা গ্রাম
খাঁবাড়ি, ঘরদেখা, পাকাদেখা, আশীর্বাদী,
কবেকার সব দশবর্ধণ…..
আসা যাওয়ার পথ
নাড়ির আত্মীয়তা
সব কেমন নিঝুম হয়ে এল চিরতরে..!
আমাকে কেউ চেনে বলে মনে হল না
আমাকে কেউ ভাল মন্দ শুধিয়ে ঘর কিম্বা
বারান্দায় ডেকে নিয়ে গিয়ে বসাবে
তেমন গরজ ও খেয়াল
চোখেও পড়ল না….
অগত্যা
ঘাটের দিকটায় এলাম
কী এক অকারণ মায়ায় আর একবার গিয়ে দাঁড়ালাম ভাঙা ধ্বসা সেই গোয়ালের আড়ালে
দেখলাম
কুলতলা বলে আর কিছু নেই
সৌখিন কাঁচের চুড়ি দু-গোচই যার ভেঙে গেছিল সেদিন
খুঁজলাম গোয়ালটার এধারের মাটিতে আরেকবার
কোথাও কিছু সেদিনের মত হয়ে নেই
যেন হবার কথাও ছিল না
ইদুচাচা
খাঁবাড়ির ও ঠাকুমার একমাত্র ছেলে
এখন এক ধারাল প্রবীন
সদ্য জানেজাহ ও নামাজ সেরে মাথার টুপিটা
হাতে নিয়ে অন্দরের দিকে যাচ্ছিলেন
আমাকে দেখে হন্তদন্ত হয়ে ফিরলেন
বুঝলাম
আমাকে হয়ত খুঁজছেন!
সামনে গেলাম
দেখি চোখে মুখে বসা একটা লাল কপালি বউকে দেখিয়ে
ইদুচাচা কি যেন বলতে চাইছে
শুধোলাম,কী বলছ চাচা?
বলল
পুটলী তোরে নিতে এসেছে
ওর সঙ্গে যা
দুগাল খেয়ে আয়
নাহলে এই যে মরা বাড়ি
কে আর তোকে খেয়াল করবে বাপজান!
ইন্দ্রমোহনের মুখের ঐ অপ্রত্যাশিত বাপজান ডাকটুকু
নাকি
পুটলী নামক ম্লানমুখো বউটা
কে যে চড়বড় করে ভিজিয়ে দিল
আমার দুচোখের মনটুকুকে
বুঝলাম না!
চোখ নামিয়ে
ঘাটের ওপর যে পাড়
তা ধরে এগোলাম সেই জোড়া তালগাছ দুটোর
দিকটায়
বুঝলাম পুটলীর
ডোঙা বাঁধা আছে একটা ঢোলকলমীর ঝোপ,খুব বড়,তার ভিতরে!
ডোঙার বুকে বসেছি,পুটলী বলল,ভারী হয়ে গেছ হোসেনদা
আরেকটু দূরে গিয়ে বসো
নৈলে ডুবে যাবে ডোঙা
পুটলীর ঐ আনমনা কথায়
আর
আষাঢ়ের ভরা বাওড় দেখে ভয় হল…… মাথার ওপর কাঁচা আকাশ
বারান্দায় বেঞ্চি পাতা,নীচে আসন জলের জগ
সব গুছিয়ে রাখা…
কিন্তু কেমন যেন জনমানুষ হারা বাড়ি
সামনে একখানা খোড়ো মন্দির… আর ঐ বাঁকা তালজোড়
তাকিয়ে আছি
পুটলি ভাত ডাল আর আলুর তরকারী এনে রাখল বেঞ্চের ওপর
বলল
এসো হোসেনদা
হাত মুখে জল দাও
বেলা গেছে
আমি ডুব দিতে যাব এবার..!
চমকে গেলাম!
গলার স্বরে গায়ে মুখে তার কোন প্রহর নেই
যেন আর…
বাড়িটাও তো তার বাপেরই ঘর
অনেক আগ্রহে আর চুপিচুপি ঐ তালগাছ দুটোর
আড়ালে এসে কজন বিভিন্ন বয়েসী বউ মেয়েকে দাঁড়াতে দেখে….
মনটা আরো ভেঙে গেল
শুধোলাম
তবে ডাকলে কেন পুটলি
এত যখন বেলা হল….!
পুটলি হাসল
আজ আমার উপোষ, ঠাকমা মোরলো,কথা দিয়েছিলাম তাকে
তার জানেজাহ শেষ হলে, উপোষ ভেঙে,
ডুব দিয়ে ঘরে উঠব!
হল না!
যাকগে
এসো জল দিই
হাত মুখ ধুয়ে নাও
খেতে বসো
বলে,
তোরঙ থেকে বের করে আনা
প্লাসটিকে মোড়ান একটা গামছা আমার হাতে
ধরিয়ে দিল।
নেপথালিনের গন্ধ ধক করে নাকে লাগল।
গামছাটা কত যে পুরানো তা পুটলী ও আমার কপাল
ছাড়া যেন আর কেউ জানে না…!
গামছাটাকে
নাক মুখের সামনে চেপে ধরেছি
মনের খেয়ালে
পুটলী চোখে মুখে একবার উতলে
আবার গলায় তলিয়ে গিয়ে বলল
হোসেনদা
গামছাটা আজো তোমারই
নিয়ে যেও আজ
তোমার ঠাকমা জানত,তিনিও আজ কবরে
গেলেন,এবার আমাকে নিশ্চিন্ত করো
দোহায় লাগে.!
কথা কী বলব,শুনবই বা কতটুকু
কপালে তার করুণ সিঁদুর
আমার দুচোখে কেমন ঘন হয়ে এল!
বললাম কাব্য ও দোলনের কথা
বললাম হাত ও পায়ের নখ কাটতে আজো
আমার ভুল হয়ে যায় পুটলী..
তবে ঘরের মানুষটা
দুয়োরে ফুরায় রোজ…
পুটলী আমাকে জল দিল দু-গ্লাস
ঢকঢক করে খেলাম
আর
নৌক করেই ফিরলাম গোপাল নগর
পুটলী বলেছিল
বাজারে উঠতেই বড় ময়রার দোকান
রাস্তার ডানহাতে
সেখানে দোকানের তহবিল সামলাতে দেখবা যে ফেন্সিগালের লোকটাকে
ভাববা উনিই জনারদন বাগচী….
এই যে কপাল দেখছ,একটুখানি লাল, কপালটা বাঁচিয়ে পরি এখনো…
তবে দুয়োর খুলিনে আর
বলে
সেও নিস্তার পেয়েছে
জানো হোসেনদা অই আমার একমাত্র সুখ!
দোকানের দোতলায় ঘর
আবার বিয়ে করেছেন তাকেই যেছিল ওর দেহ জুয়াড়ী মানুষ
বছর দশ হয়ে গেল…
একটা ছেলে একটা মেয়ে নিয়ে ঐ দোতলাতেই এখন তার সংসার
দোকান পশরা আর নতুন সংসারে
মানুষটা কত গুছিয়ে উঠেছে
দেখে যেও একবার হোসেন দা..!
দেহজুয়াড়ী মানুষ, কথাটা শুনে,ভাবনা হল।
দেহ পুড়ানি দেহ ভাসানি দেহ খাকি এরকম
কত কি জানতাম
এখন সবটুকু তার ভুলেই গেলাম।
বুঝলাম
পুটলীর কপাল যতটা লাল সিঁদুরে ঢাকা
তা আসলে তার পোড়ার ঘাটুকু লাল আবীরে
মুড়ে রাখা….!
এও এক খেয়াল!
মাটি ও মানুষ ত ভরাট হয়েই চলে
পাখিও উড়ে যায় অচিন চরার গাছে
তবু
মনে মনে মানুষের আসা যাওয়াটুকু বোধয়
কোনদিন কোনদিকে ফুরাবার নয়..!
নতিডাঙা বাওড় আর খাঁবাড়ি
সব পিছনে থাকল
পুটলীকেও বাঁকা তালগাছের গোড়ায় ছেড়ে এলাম
জনমের মত!
তবু মন বেঁকে বসল।
জনারদন
ময়রার দোকান টপকে ঝম করে একটা কাপড়ের
দোকানের সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম…!
একটা গামছা, রঙে রঙ.. ঘেরে ঘের অবিকল…..,কিনলাম ৭০ টাকা দিয়ে
আর
প্যান্ট ও জামার ওপর দিয়েই
কোমর গুছিয়ে বেঁধে নিলাম পুরাতনটার ওপর
দেখে
কী ভাবল দোকানদার,কে জানে!
অবাক হয়ে শোধাল,দাদার বাড়ি কোন দেশে,মানিয়েছে ভাল কিন্তু!
আমিও হাসলাম।
মানুষে মানুষে মানানটুকুই ত খুঁজলাম এতকাল
আজ না হয় নিজেই মানান সই হলাম
কবেকার এক মানুষের….
যার নাম ছিল পুটলী আর ধাম ছিল এই নতিডাঙা..!
অদূরেই জনারদন ময়রার দোকান
লোকে লসকরে ভেঙে পড়ছে যেন..
আলো জ্বলে আছে ভেতরে বাইরে
তবে
নীচেই তো বাওড়
আলো তবু ঠিকরে অতদূরের জলে কোনদিন যায় না
এই যা খারাপ লাগল….!