( A Poetry Bistro)
Poem : by Lutfur Rahman (Bangla)
Spirit of free thinking epitomised
পাগলা
– লুৎফুর রহমান
সনেকপুর দূর নয়
কামারগেড়ের গোহাটা পেরলেই মাঠ
তার পুবে একটা পাড়া,ঐ সনেকপুর…!
আমি কদিচকারণ যাই
বিশেষকরে ছিপল্লী যাবার দরকার হলে
আমি বহিরগাছীর মধ্যে দিয়ে গিয়ে সনেকপুর ধরা করি…
কারণ আর কিছু না
সনেকপুরের বটতলাটা বড়ো চওড়া
পুবে গাঙনি পশ্চিমে মধুপুর খলিসাডাঙা আর নাগরপোঁতা
নারকোল গাছের মাথায় মাথায় বেলা আসে
বেলা যায় কিন্তু বটতলাটা থাকে ভয়ে অভয়ে
চোখ খোলা….
তাছাড়া
বটতলাতেই বুড়ো মুন্সীর ঘর
আগে পালা লিখত
এখন পায়ে হেঁটে সনপাপড়ি বেচে পাড়ায় পাড়ায়
তা সেকথা পরে হবে
আজ
টোটো করে একজন এক পাগলাকে তুলে দিয়েছে…
যে পাঠিয়েছে সে আমার পরিচিত…
যাকে পাঠিয়েছে
সে
নাকি গান শোনায় চা খাওয়ালেই….!
ফোনে বলল
হোসেন
তোমার মনের মত মানুষ পাঠালাম
একজনকে
পথে পথে ঘুরবে কেন
তুমি থাকতে!!!
পাগলাটাকে আমার দোকানের সামনে নামিয়ে দিয়েই
কথা নেই বার্তা নেই
একশ টাকা ভাড়া গুনে নিল টোটোয়ালা…
মুখ বুজিয়ে হতভম্ভ হয়ে বোকার মত তাকিয়ে আছি দেখে
টোটোয়ালা কেমন বিভক্ত হল হাসি দুঃখ ও আমোদে
বলল
নামেই হোসেন
আসলে আপনি কাঁচকলাও না শুধু ভোদাই একখান…
টোটো ফিরে গেল হন্তদন্ত হয়ে….!
বোঝা গেল দিন আমার খসবে আজও…
আরো একটা!
সামনে এসে যে দাঁড়াল,তাহলে,ইনিই সেই
গায়ক, তাও বুঝলাম..! আমার গানে গোনে
ভক্তির তাহলে এই নমুনা…!
দেখলাম
হাত পা তো নয় যেন তল্লাবাঁশের ছিয়া
তবে সমগ্রে কিরোম যেন হগলবগল ভাব।
কাঁধে নড়ি
তাতে ঝুলান একটা ব্যাগ…. গামছা দুখানা
ঝোলাটার ওজন বড়জোর আধাকেজি
কিন্তু
মানুষটা টোটো থেকে নেমে এই পর্যন্ত আরো
দুবার কাঁধ বদলে নিল
শোধাল ডাইরেক্ট
……তুমিই বুঝি হোচেন?
বলল
সে তুমি যেই হও,আমি কিন্তু চোখে সরসেফুল শুধু নয়
কুমড়োও দেখি!
এ বাবা, এ আবার কেমন কথা,আমি ত ভাল বা মন্দ
বলিনি এখনো কিছুই
তাতেই এত ডাফুরে বোল…
এত দেখা যায় সাক্ষাৎ শিরোমণি..!
পাগলের কথা আগেই জেনেছি,কেন কোন কারণে
তাকে আমার কাছে পাঠান হল,সেটা অবশ্য বুঝিনি!
তবে
যে পাঠিয়েছে সে আমার বিশেষ পরিচিত
তাতে শিক্ষায় সমৃদ্ধিতে কুলীন মানুষ
এখন লকডাউন ভোগী
তাই চামড়া ও ভুড়ি মোটা হয়েছে যুগপৎ…
কিন্তু
আমার মনের চটক ভাঙল পাগলের কথা শুনে!
……ভাগ্যিস চোখদুটো ছিল!
পাগল চোখে মুখে চমকে বলল
…..তাই দেখে যেতি পারলাম….. “ভগা”……
আমিই
শুধু একা না… তাহলে…!
পাগল বলল
… আমি হাত পেতে খাই
তুমি জ্যান্ত ভাত তরকারী খাও
এই যা
ফারাক…..,হায়রে মওলা!
আমারে টোটোই তুলে দিল জোর করে একথা ঠিক
তবে
তোমারে একবার দেখি এ লোভ আমারও কম হয়নি!
তোমার নামে ত দেখচি খাতিরের চে খেউড় বেশী
এ তুমি কেন হতে দিলে
অ হোচেন?!
আমার কিন্তু
সবচে ভাল লাগল পাগলের দাঁড়ানোটা দেখে!
মানুষ পাগল হলে
অমন করে দাঁড়ান ভুলে যায় দেখেছি
বললাম
… চা ত খাও
আর সেই ফাঁকে নিজের নামটা একবার বলো ত দেখি!
…. নাম যে দেখবা, পাব কৈ,পাগলা বলল
পথে পাওয়া একটা নাম অবশ্য আছে আমার
সেটা তোমার মত ভোগোলের শুনে তো কোনই লাভ নেই…
তাছাড়া
কেউ আমার মুখ ত চেনে না,তাহলে,নাম বলে
কি করে তোমাকে
দেখাই..!
শুধু ধরো আমার নাম রসুন…!
চা শেষ করে নিলাম সিগারেট….
বললাম
… তা
হেগা রসুন,তোমার মুসলমানপাড়ায় ঘর
মসজিদ আছে কবরও আছে
তাহলে গান গাও যে, ডর করে না?
রসুন হাসল
বলল আমার গলায় আযান শুনে যার হাতে পানি পর্যন্ত খসে না
সেই হাজি মানুষও
দশটাকা দেয়…
আবার খয়রামারীর জগদম্ভারা,আমার, নিমাই সন্ন্যাস
শুনে ২০০ টাকার বুঝ দেয়…
আর তুমি কিনা শুধোচ্ছ আমার ডর করে কিনা
উরি কপাল!!
আমার ত বাদ নেই মুসলমানে কিছু
আবার ফুটানিও নেই হেঁদুদের মত…
আমার আবার ডর কিসে দেখলে তুমি?
বলিছি না
কেউ আমার মুখ চেনে না এটা কিন্তু মনে রাখবা!তবে
হেগে মুতে ধেড়ানোর বেরাম আছে ত
তাই
আমার পোঙা চেনে অনেকে….!
বলে পাগলের সেকি খলবল করে হাসি
যেন এই মুখ খুলে পড়ে
তো
ঐ মাথাটাই টপাস করে খসে যায়
কাঁধের বোঁটা থেকে তার…!
ডর এবার আমার পেল।
এখন দোকানে,মানে,
এখানেই যদি হাগতে শুরু করে,আমার আর রক্ষে
থাকবে না তাহলে….!
চুপি চুপি বলে রাখি
আমার কপালে
এমন ঘটনাও ঘটেছিল একবার…!
সেবার ভরপেট ভাত ডাল খেয়ে,গণেশের হোটেলে বসেই একবার মাত্র বলেছিল রাখালগাছীর কেলেপাগলা
… ভাত ত খেলাম,অ হোসেন,এবার হাগব কোথায়
বলো তো!!
বলাও সারা
পাগলের এমনই মরণ
পাছা গলিয়ে হাগাও সারা…!
গন্ধ বাতাসে কুকুর মরা গন্ধ যেমন
তেমনই পাতলা তার গু….!
গণেশ পারলে খুন করে ফেলে আমাকেই
শেষে দুকেজি সার্প সোডায় একশ বালতি জল ঢেলে তবে রক্ষে….!
তবে পরণ বড় গোছান এই পাগলের।
হাঁটু পর্যন্ত প্যান্ট
কেমন সুন্দর করে গুছিয়ে নেয়া…
গায়ে দুখানা গেঞ্জি
মাথায় কাঁধে দু দুখানা গামছা….
তার মধ্যে একটা আবার একদম নতুন…
সাহস পেলাম।
অকুতোভয়ে শুধোলাম
ভুলে গেলে কি করব?
বলল
…. দেখে ত মনে হচ্চে না তুমি ভোলার বান্দা
তবে ভোগোল যে বুঝতে পারছি..!
শোনো
ঘরে নিয়ে চলো
বহুবছর গেরস্তঘরে খাইনি
দুপুরও হয়ে এল
দুটো খেতে দাও বিছেন দাও পেটভরে খাই
আর চোখভরে ঘুমাই!
গালভরা কথা বলার সে এক আজীব ভঙ্গী তার
হাসলাম।
শুধোলাম
….তবে যে বললে
চোখে সরষেফুল নয় কুমড়োফুল দেখো…!
তাহলে
গেরস্তঘরে এত লোভ কেন,ও রসুন!?
রসুন এবার পথ বোঝাল।
বলল
সকালে উঠে মানুষ দেখি নাকে কাঁদে
দিনভর কাঁদে…. বাহানা করে করে এত কাঁদে
যে…
তা যদি কলসীতে ধরতাম….
তা বোধয় মাগঙ্গার চেয়ে বড় হয়ে যেত…!
গেলকাল যে ছিল চেলকো
আজ সে কাঁদুনে ধাড়ী,দেখি!
শুধু
তুমারই দেখলাম
যেই মুখ সেই পাছা
কলসীর মত নয় ঢোলের মত
বাজিয়ে তাই দেখলাম
তাতেই বুঝলাম গেরস্ত তুমি মন্দ নয়…
চলো
বাড়ি নিয় চলো!
আমি কিন্তু
রসুনের কথার হাতা বুঝিনি মাথাও বুঝিনি এতটুকু
তোয়াজ করল
না
টুপি পরাল, তাও বুঝলাম না!
শুধু বুঝলাম
মাথায় তার, তার কাটবে, কিকরে….
তারই ত নেই..!
নাহলে সে আমাকেই তার দূর্গোত্রের ভাইরা
অথবা
ভাই
ভাবল কি করে
এত অনায়াসে!
যাহোক
রসুন পাগল
বিকেলে বাড়ি ফিরে গেল নিভৃতে
অথচ
বিষ্ণুপুর বনগাঁর অমন মহামস্ত সড়ক, যেন,টেরই পেল না…..!
যাবার সময় বলে গেল সনেকপুরে আরেকবার যেও হোসেন
বলে গেল তার নাকি
বাড়ি, বউ, সব আছে….
আর
তার বউ নাকি খুব
ভাল!
বউ
সায়া ব্লাউজ পরে
মাথায় তেল দেয়
হপ্তায় ২ দিন
আর
টাকা জমিয়ে জমিয়ে
বিরহীর হাট থেকে
কাপড় কেনে বছরে একবার…..
বলল
একটা টিনের বাক্সয় সেই
কাপড়গুলো রাখা থাকে
আর
ঘরে তার
আড়াও আছে দুখানা….
একবার এসে
দেখে যেও হোসেন…
কবি পরিচিতি : লুৎফুর রহমান {বয়স ৪৯) একজন আদ্যন্ত গ্রাম-বাংলার মানুষ। নিবাস পূর্বপুরুষদের গ্রামে, পিতামহের তৈরী করা ভিটেয়। সঙ্গ গ্রামের জেলে, বাগদি,মুচি, মিস্তিরি এবং সমগোত্রীয় অন্ত্যজনের মধ্যে। তার অন্য ভাইদের বিপরীতে তিনি ‘সুসভ্যতার আলোক’ থেকে দূরে নিজের ইচ্ছেতে গ্রামেই বন্দী থেকে ‘মুক্ত’ আছেন। নিশুতি রাতে গ্রামের পাশের সুবিশাল, অন্তহীন বাওড়ে (naturally formed vast water body) একা একা নিজের কেনা নৌকো চালানো তার বিলাস। কথা বলতে বলতে হঠাৎ করে উচ্চস্বরে লালনের গান গেয়ে ওঠা তার ব্যসন। শহুরে প্রফেনিটি তার রোজকার ধারাভাষ্য। কবিতা তার মনের অবারিত পদচারনার ফসল।