আসছে-আসছে শীতদুপুরে বের হয়ে আসে দার্শনিকরা। মাংকি টুপির ঘেরাটোপে সুরক্ষিত থেকে কমলালেবুর খোসা ছাড়ায়। আচারের আস্বাদে আওয়াজ তোলে টাকরায়। রহস্যময় চুক্কি খেয়ে দড়াম আছাড় খেয়ে মুখোমুখি হয়– সত্য আর বাস্তবের। মিঠেকাড়া রোদস্নান শীতে আরামদায়ক,গ্রীষ্মে প্রাণান্তকর— কেন? ভূগোল বই তে লেখা আছে। লেখার আগে উত্তর ভেসে ভেসে বেড়ায় বাতাসে। চারপাশটা পাল্টে পাল্টে যায়— কোটি কোটি মানুষ যুগযুগান্ত ধরে দেখছে। বিস্ময় জাগানিয়া এই সব ঘটনা হাতে গোনা কয়েকটি মানুষের কাছে প্রশ্নবোধক চিহ্নে এগিয়ে এসেছে। আমাদের জুটে গেছে বেশ কিছু ধারণা– অক্ষাংশ দ্রাঘিমা নিরক্ষরেখা ঋতুচক্র উত্তর দক্ষিণ গোলার্ধ। বাস্তব যেমন সত্য, সেই সত্য অতিরিক্ত আরো এক পূর্ণ সত্য নির্ঘাত আছে, ঋতু বদলের সঙ্গে আহ্নিক গতির বার্ষিক গতির যেমন আছে। পূর্ণ সত্যকে যে খুঁজে বেড়ায়, তিনিই দার্শনিক। অল্পে তার আশ মেটে না। আংশিক সত্য তাকে তাড়িয়ে ছাড়ে। তাড়া খেয়ে সে দৌড় লাগায় বিরোধী বাস্তবতা থেকে, ঘরবাড়ি থেকে,রীতিরেওয়াজ থেকে,সমাজ সংস্কৃতি থেকে, রাজনীতি থেকে। দার্শনিকের ভাগ্যে এজন্য জোটে কতগুলো ডাকনাম– পাগলা,খ্যাপাটে, বিদঘুটে। ‘ আমার লাগে না মনে’ – গেয়ে ছুট লাগায় দার্শনিক। অক্লান্ত।ক্লান্তিকর বাইরের জগতের অসাড়তা যেদিন ব্যক্তিগত যাপনকে বিষণ্ণ করে তোলে, সেদিন দার্শনিকের জন্মদিন। দার্শনিক এযুগে বিষণ্ণতার সন্তান। প্রথাগত দর্শনের উৎপত্তি মানা হয় বিস্ময় থেকে। এখনকার মানুষ ততটা বিস্মিত হতে পারে না। নগরকেন্দ্রিক সভ্যতার বাহাদুরি মানুষকে করেছে প্রকৃতিবিচ্যুত। শৌখিন ট্রাভেল ট্যুরিজমে ব্যক্তিমানুষের দম্ভ,ক্ষমতা,অর্থবলের উচ্ছ্বাস থাকলেও, তাতে প্রকৃতি মেলা ভার। তবু বেখাপ্পা কয়েকজন থাকে,আত্মমোহের মোড়ক খুলে বাঁক ঘুরিয়ে অন্য আঙ্গিকে জীবন দেখে— ” Two roads diverged in a wood, and I / I took the one less traveled by/ And that has made all the difference.”

 

 

About Author


লেখিকা পরিচিতি: কুন্তলা ভট্টাচার্য। মেজাজে বাঙাল,চলনে ঘটি। পুরনো জায়গায় ঘুরে বেড়ানো শখ। গান অন্ত প্রাণ। রবীন্দ্রনাথ,স্বামী বিবেকানন্দের সময়কার কোলকাতা দেখার ভীষণ ইচ্ছে। উত্তর কোলকাতার বিশেষ ভক্ত। বর্তমানে শিশুকন্যার মা হিসেবে নিজেকেও তার সমবয়সী ভাবতে সাহস রাখে। পেশা: পশ্চিমবঙ্গের একটি সীমান্তবর্তী স্কুলে দর্শনের শিক্ষিকা।