চ্যাংড়া ভাজা
– Goutam Bharaiwala
উপরির উপায়
( গৌতম ভরাইওয়ালা)
রাত্রির তখন মধ্যযাম। বাহিরের পৃথিবী ঘোর দুর্যোগপূর্ণ। অবিরাম বৃষ্টিধারা জানালার কাঁচে ক্রমাগত কশাঘাত করিয়া চলিয়াছে। ঝড়ের উদ্দাম হাওয়ার তাড়নায় নারিকেল গাছের শীর্ষদেশ সবেগে দুই পাশে আন্দোলিত হইতেছে। যেন হেঁটমুন্ড- উর্দ্ধপদ পেন্ডূলাম সব। বৃষ্টিধারার তীব্রতায় ও ঘনত্বে আশেপাশের বাড়ি ঘর দোর সব ঝাপসা, নজরে অবলুপ্ত-প্রায়। বিজলি অন্তর্হিত হইয়া চারিদিক নিকষ-কালো, খালি মাঝে মাঝে বিদ্যুত-চমকের যতিচিন্হ। বিভিন্ন রকমের ভয়াল সব আওয়াজ একই সঙ্গে তান্ডবতান তুলিয়াছে। ঝড়ের বেগের শোঁ শোঁ শব্দ, জানালার কেসমেন্টে হাওয়ার দাবড়ানিতে পাল্লার ঘটঘট, ঝড়ের নিপীড়নে গাছের পাতার সরব হাহাকার, অদৃরে সমুদ্রের সীমাহীন জলপৃষ্ঠে বৃষ্টির জলধারার আশ্লেষ আলিঙ্গনের উদ্দামতা।
কিন্তু এই সব আমি কিছুই দেখি নাই বা শুনি নাই।কারণ আমি তখন নিজের শয্যায় নিদ্রা ও জাগরণের সীমানা অঞ্চলে বিচরণ করিতেছিলাম। উপরে যা লিখিলাম সবই খ্যাতনামাদের লেখা টুকিয়া। আমি এই সারবত্তা অনুভব করিয়াছি যে টুকলি করা হইল সহজতম এবং সার্থকতম কর্ম। যেমন, কোন পতাকার নীচে কোন শ্লোগানের সহিত যদি গলা মিলাইতে পারা যায় তাহা হইলেই মনের ভিতর বেশ একটা ‘কেল্লা ফতে’ গোছের ভাব জন্মে, অন্য কিছু আর করিবার দরকার বিশেষ পড়ে না। সে শ্লোগানটা ‘লাল সেলাম’ হইতে পারে, বা ‘জয় হিন্দ’ বা আধুনিক ‘জয় শ্রীরাম’ও হইতে পারে। সকলেরই রোগহরণকারি শক্তি আছে, কম বা বেশী পরিমাণে।
সে যাহাই হউক, আবার মধ্যরাত্রিতে ফিরিয়া আসি। এখন জাগরণের পাল্লাটা ধীরে ধীরে ভারী হইয়া আসিলে নিদ্রার স্বপ্নরাজ্যের রেশটা ফিকা হইতে থাকিল। তাহার অন্তিম নিষ্ক্রমনের পথে আমি যেন বিদায়ী ঘোষনা শুনিতে পাইলাম – মর্ত্যধামে মহিষাসুর কম পড়িয়াছে।
মুহূর্তে আমার মগজের তন্ত্রীগুলি গুগাবাবার সন্তোষ দত্তের ন্যায় সজাগ হইয়া উঠিল – মহিষাসুর কম পড়িতেছে ? সিনেমার রাজকন্যার মতো ? মর্ত্যলোকে দূর্গা পূজার আয়োজকদের মহিষাসুর চাই ? আরে, সেই চরিত্রের কুশলী অভিনেতা তো আমি স্বয়ং। বলিলেই সেই রোল আমি অবলীলায় করিয়া দিতে পারি। কিন্তু সে কাজের পারিশ্রমিক তাহারা দিবে তো ? না কি শুধু প্রসাদী ফল-মূল খাওয়াইয়াই বিদায় দিতে চায় ? আমি তৎক্ষণাৎ ইহাতে বাড়তি উপার্জনের এক সুযোগ মানসপটে অবলোকন করিলাম।
সংসারে এখন টানাটানি চলিতেছে। বাড়িওয়ালা তিন মাসের বাকি পড়া বাড়িভাড়ার তাগাদা দিতেছে। উপরি উপার্জনের এই সুযোগ ছাড়িয়া দেয়া সমীচিন হইবে না। পূজা-উদ্যোক্তাদের নিকট আবেদনপত্র কালকেই পাঠাইব।
তাহাতে নিজের সি.ভি’তে নিজের কি গুণাগুণের বর্ণনা দিব তাহা ভাবিতে ভাবিতে পুনরায় নিদ্রাচ্ছন্ন হইয়া পড়িলাম।
About the Author :
Goutam Bharaiwala is a GZA Member in pseudonym.
ইনি (লেখক) কি সত্যই অবাঙালী? বাঙালীর সর্বজনীন মা-কে অবলম্বন করে এমন রূপক আখ্যানে ভারী সুন্দর করে জাতীয় জীবনের সঙ্কটকালকে বর্ণনা করেছেন।
লেখক অবশ্যই প্রশংসাযোগ্য একটা ছবি এঁকেছেন তাঁর লেখনীর মাধ্যমে।
পেন্নাম হই, কত্তা। ভালো কথা কইবার তরে আপনারে ধন্যবাদ।
হাতের কাছে পত্রিকার কিছু জায়গা ভরানোর filler তৈরী রাখা এক চিরন্তন সম্পাদকীয় ভোগান্তি। আমাদের “সুজলাম সুফলাম” ও এইভাবেই এসেছিলো। এটাও তাই-ই। শুধু ক্লাসের তফাৎ। সেটা বোঝাতে শীর্ষকে চাপল্য।
খুব ভালো লেখা। প্রকৃতির বর্ণনা, যুগপৎ নৈসর্গিক ও মানবিক, অসাধারণ, তার সাথে হাতিয়ার কেড়ে নেওয়া (disarming) স্যাটায়ার। লেখককে অভিনন্দন।
টুকলি করার প্রসঙ্গে মনে পড়ল, চেন্নাই-এ এক আবৃত্তির আসরে একটি কবিতা কে লিখেছেন তা নিয়ে উদ্যোক্তাদের একজন অভিভাবকের মতদ্বৈধ হয়। উদ্যোক্তা ভদ্রলোক সাবধান করেন, “মশাই, ছোটবেলা থেকে টুকলি করে লিখে আসছি। আমাদের ভুল হয় না।” সাক্ষ্যপ্রমাণ দিয়ে তর্কটা
তিনিই জেতেন।
ধন্যবাদ।
অরিজিৎ -বাবু সবেতেই অগ্রনী। লেখাতে, প্রশংসা বাক্যে।
মহিষাসুরের চাকরিটা হয়েছিল কি না, জানাবেন। ইন্টারভিউতে কি কি জিজ্ঞেস করেছিল জানালে একটু উপকার হয়।
সবজান্তা প্রশ্নকর্তা
নিমীলিত চোখ তুলে বললেন –
এতদিন কোথায় ছিলেন ?