Scent of a Story – Basudeb Gupta

অণুসন্ধান ৩
রেস।
বাসুদেব গুপ্ত

-শালা তুই বড় আমটায় হাত দিচ্ছিস। আমি বড় ওটা আমার।
-তুই অনেক খেয়েছিস। খেয়ে খেয়ে বকাসুর। আমায় দে।
ঝটাপটি। ঘুষোঘুষি। মা দেখছো আমার আমার আম কেড়ে নিল।
-দুটো খচ্চর ছেলে হয়েছে বটে। মারব মুখে ঝাঁটা। উদ্যত মায়ের ঝাঁটা দেখে দুজনেই পগার পার। চারটে কাক মনের আনন্দে এনজয় করে পাশের সিমেন্টওলার পাঁচিল টপকে চোখ টিপতে থাকা আম্রপালি তরুর ফল।

সেই চলছে। দু ভাই। শুম্ভ নিশুম্ভ। মুকেশ অনিল। রাজীব সন্জয়। আসল নাম তো পুলু মানে পুলক ঢালি আর তিলু মানে তিলক ঢালি। এক বছর আগে পরে। মানষের ঘরে জম্ম না নিয়ে রাক্ষসের ঘরে গেলি না কেন বাপ। বিধবা মা রান্না ঠিকে যা পারে করে। বাবা পার্টির হয়ে যুদ্ধের শহীদ। এতই ছোটলোক যে শহীদ বেদীটিও হয় নি।

তিলু ফুটবলে তিনটে গোল দিয়ে আসে পাশের পাড়ার জয় জগন্নাথ ইউনাইটেডকে। পুলু গংগায় এক কিমি সাঁতারে এমএলে দেবযানী ধরের থেকে মেডেল এনে মার নাকের সামনে ঘোরায়।
এসব বাড়ীতে পড়াশোনা হয় না। গুণীরা বলেন সামাজিক ব্যাধি। লোভ, শারীরিক আর্জি থেকে বেরোতে পারে না ছোটলাকরা। জেনেটিক। গরীবের ছেলে গরীব হয় কেন? জিনেই তো সমস্যা। দু একজন বেরিয়ে যায়। মিউটেশন জানো না? সেই যে করোনা থেকে ওমিক্রন? সেইরকম।

তিলু মার কাছে গান শেখে ছুপে ছুপে। মা শিখেছে এক দয়ালু গিন্নির থেকে। তিনি ফেসবুক জমানার আগের। তাই কাজের লোকদের জুটিয়ে রবীন্দ্রসঙ্গীত শেখাতেন। এ কি লাবণ্যে পূর্ণ। মা বাড়ী এসে রুটি গড়তে গড়তে গাইত। তিলু শিখেছিল চয়েস করা কটা। এসো এসো আমার ঘরে এসো আর মনে কি দ্বিধা। ব্যাস ঐ দুটোতোই উড়িয়ে নিল রেবা কে। নার্স। ভ্যাকসিন নিতে গিয়ে আলাপ। মাস্ক পরে দুজন ঝিলের ধারে ঘুরতে যেত কেউ চিনতেই পারতো না। বিয়ে করে দুজনে ঘর নিয়েছে মহিষবাথান। একটা ঘর একটা কিচেন বাথরুম কলের জল। ১০০ টাকায় ইউটিউব। শোবার আগে সিনেমা দেখে দুজন।

পুলুর নজর মগডালে। সিমেন্টওলার মেয়ে কন্গনা আলিয়া ভাটকেও নাচিয়ে দিতে পারে। তাকে ও ফ্রি অটো চাপায়। টিকিট নেয় না। তিলু চালায় ২৫৪ নং বাস বারাসত থেকে গড়িয়া। আর পুলুর কাটা রুট। চেষ্টা করে কন্গনার রুটে মিলিয়ে দিতে। কিন্তু সানসা বাপের সানশাইন মেয়ে। অটোয় চড়ে। জীবনে আসে না। অগত্যা সম্বন্ধ করা বৌ পায়ে ধ্যবড়া আলতা পরে বসে থাকে। আর একটা মাএর সিকোয়েল। তিলু ব্যাটা বেরিয়ে গেল এটায়। পুলুরা তিনজন সেই টালির চাল। ঘরের মাঝে শাঢী দিয়ে পর্দা। টাকা জমিয়েই যায় আবার খরচা হয়ে যায়। কি করে নিজের ঘর হবে ওর মাথায় আসে না কিছুতেই।

পুলুর অটো বাসের সংগে টক্করে পারে না। দু একবার দাদার সংগে রেস করে দেখেছে। দাদা ভাইকে রেয়াত করে না। পুরো সাইড চেপে রাস্তার এক দিকে ঠেলে বেরিয়ে যায়। অন্য কেউ হলে অটো ব্রাদারহুড ছেড়ে কথা বলত না। অবরোধ করে দিত। সবাই জানে ভায়ে ভায়ে রেষারেষির কিস্সা। তিলুর বাসের স্পীড বাড়তে থাকে। অটো তাকে আর ওভারটেক করতে পারবে না।

একদিন উল্টোদিক থেকে আসা বাইক স্কিড করে এসে পড়ল ২৫৪ নং বাসের ওপর। বাসের স্পীড তখন আশি। সামনের ২৫৪কে ওভারটেক করতেই হবে। পাকা হাতে স্টীয়ারিং বেশি ঘুরে গেল। বাইক বাঁচল। বাস ফুটপাথে উঠে একটা কলডেমড বাড়ীতে মুখ গুঁজে পড়ল। বাড়ীর আদ্ধেক ধসে পঢল বাসের ওপর।

পুলু অটো নিয়ে বাড়ী ফিরছিল লন্চ খেতে। বৌএর শরীর ভালো না। আটমাস। হাত পা ফোলা। নিয়ে যাবার সময় হয় না। একটা ট্রিপ বাদ মানে একবেলার খাওয়া গেল।

বাসের নম্বর চেনা। ১২৮০। ভীড় ঠেলে ইঁট সরিয়ে আবিষ্কার হলো তিলুর শরীর। মাথায় ক্র্যাক। স্টিয়ারিং ধরা একটা হাত কনুই থেকে ভেঙে উল্টো দিকে ঘুরে গেছে। নিঃশ্বাস পড়ছে। একটা রক্তের ধারা ধীরে ধীরে বড় হচ্ছে। দাদাকে এক্ষুনি হাসপাতাল নিয়ে যেতে হবে। পুলিশ কখন আসবে, ব্যবস্থা করবে কে জানে।

কয়েকজন ধরাধরি করে অটোতে তুলে দেয় তিলুকে। অবস্থা সুবিধের না। রেসের ঘোড়ার মত হ্রেষাধ্বনি করে অটো স্টারট দেয়। এই একটা রেসে ওকে জিততেই হবে। দাদাকে আগে চলে যেতে দিলে চলবে না।
-দাদা তুই একবার অন্ততঃ হেরে যা। পুলু মনে মনে মিনতি করে। দাদা একবার তুই হেরে যা। প্লীজ।

About Author


বাসুদেব গুপ্ত। বয়স ৭০। অধুনা নিবাস সল্ট লেক কলিকাতা। পেশা কম্পিউটার সফটওয়ার ডিজাইন ও এক্সপোরট। নেশা বাংলা ইংরাজী কবিতা ও গল্প লেখা। দ্বিতীয় প্রেম কুকিং