বিবেকানন্দ-স্ববিরোধিতা

স্বামীজির কথা ও লেখায় স্ববিরোধিতা ঝুড়ি ঝুড়ি। তবুও বলি, স্ববিরোধিতা কথাটা শুনলে বিশ্বশুদ্ধ মানুষ আঁৎকে উঠলেও ব্যাপারটা ইচ্ছে-অনিচ্ছেয় সকলের জীবনেই ঘটে যায়।  আর একটু তলিয়ে ভাবলে ব্যাপারটা কতটা খারাপ তা নিয়ে সন্দেহ ঘনিয়ে ওঠে। যেমন ধরুন, অভিজ্ঞতা চোখ খুলে দেবার আগে ভাবতাম বিজ্ঞান নিয়ে না পড়লে জীবন বৃথা। এখন ইতিহাস, অর্থনীতি বা সাহিত্যের খ্যাতি আর প্রভাব দেখে স্ববিরোধিতার চাপে পড়ি। মনে হয়, আর্টস মোটেই জীবন অন্ধকার করে দেওয়ার মত খারাপ বিষয় নয়। একটা বিরাট সংখ্যক স্ববিরোধিতার কারণ, পরিবর্তিত সময় আর পরিস্থিতি। নিজের বদ্ধমূল ধারণাকে আঁকড়ে না থেকে বৃহৎ উদ্দেশ্যে কালের প্রয়োজনের সাথে তাল মিলিয়ে চলা সচেতন জীবনের লক্ষণ। মানসিকভাবে স্থবিররা তা করতে পারে না। 

এই ভূমিকার পর তাঁর বহু স্ববিরোধিতার মধ্যে একটু ঢুকে দেখা যাক।

রামায়ণ মহাভারতে পড়া মুনি-ঋষিদের কেউ বন্যাত্রাণে বেরিয়ে পড়েছেন এমন শুনি নি। তাঁদের জনসেবার সবচেয়ে পরিচিত উদাহরণ হ’ল, তপোবনে সাধারণতঃ ব্রাহ্মণ বা ক্ষত্রিয় সন্তানদের শিক্ষাদান। সন্ন্যাস নেবার পর বাকি বেশীরভাগ সন্ন্যাসীর মত বনে-পাহাড়ে-তপোবনে, শ্মশানে-মশানে (বামাক্ষ্যাপা) অথবা মঠাধ্যক্ষ বা মন্দিরের পুরোহিত হয়ে মানুষের কল্যাণের জন্য শুধু প্রার্থনা না করে বহির্মুখী হওয়া, সক্রিয় ভাবে জনসেবার জন্য মিশন তৈরি করা, আর ‘এই সংসার ধোঁকার টাটি’ ভেবে মুখ না ফিরিয়ে পরাধীন দেশের দুঃখী মানুষের জন্য কাজে ব্রতী হওয়া – সংসার-ত্যাগী সন্ন্যাসী সত্তার সাথে একটি বিরোধ মনে হওয়া স্বাভাবিক। তাছাড়া, অদ্বৈত দর্শন তাঁর ভাবনার ভিত্তিভূমি যদি হয়, তার মূল কথাই তো- ব্রহ্মই একমাত্র সত্য, জগৎ মিথ্যা। স্বামীজি যদি সেই দর্শনকেই বিশ্বাস করেন, তাহলে মানুষের পার্থিব অবস্থার উন্নতির জন্য এত মাথাব্যথা কেন? “শঙ্কর এই অদ্বৈতবাদকে জঙ্গলে পাহাড়ে রেখে গেছেন। আমি এবার সেটাকে সেখান থেকে সংসারে ও সমাজের সর্বত্র রেখে যাব বলে এসেছি…। তোরা আমার সহায় হয়ে লেগে যা।” এই কথা বলছেন আবার অদ্বৈতবাদকে শিকেয় তুলে রেখে এ-ও বলছেন- “তোমাদের প্রথম কর্তব্য শরীরটাকে মজবুত করে গড়ে তোলা…তোমাদের বাঁ হাতে গীতা থাকুক, ক্ষতি নেই। কিন্তু, ডান হাতে যেন ফুটবল থাকে।” বিদেশীদের স্টাইলে এলোপ্যাথি হাসপাতাল ও স্কুল কলেজ খোলার প্রচেষ্টার চেয়ে বেশী স্ববিরোধিতা আর কি হতে পারে?

প্রাচ্যের ঐতিহ্য, বেদ-বেদান্ত-ভারতীয় সংস্কৃতির গরিমার পাশে পাশেই দেখি স্বামীজির আদর্শে জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য গড়া মিশনের কর্মকান্ড, অফিস সব কিছুতেই পশ্চিমের লক্ষ্যণীয় প্রভাব। সেখানে তিনি জীবনের উন্নতির বাস্তব প্রয়োজনে পশ্চিমের সাহায্য নিতে দ্বিধাহীন- “এই সার্বভৌম বেদান্তবাদ-  যাহাতে  সকল মতের, সকল পথের লোককেই ধর্মলাভে সমান অধিকার প্রদান করে-……এই মতের চর্চায় পাশ্চাত্য জাতির আমাদের প্রতি শ্রদ্ধা ও সহানুভূতি হইবে……এইরূপে যথার্থ শ্রদ্ধা ও সহানুভূতি লাভ করিতে পারিলে আমরা তাহাদের নিকট ঐহিক জীবনের বিজ্ঞানাদি শিক্ষা করিয়া জীবন-সংগ্রামে অধিকতর পটু হইব।“ নীচের কথোপকথনটি লক্ষ্য করুন।

স্বামী যোগানন্দ- তোমার এসব বিদেশী ভাবে কার্য করা হচ্ছে। ঠাকুরের উপদেশ কি এরূপ ছিল?

বিবেকানন্দ- তুই কি করে জানলি এসব ঠাকুরের ভাব নয়? অনন্তভাবনাময়  ঠাকুরকে তোরা তোদের গণ্ডিতে বুঝি বদ্ধ করে রাখতে চাস? আমি এ গণ্ডি ভেঙে তাঁর ভাব পৃথিবীময় ছড়িয়ে দিয়ে যাব।

নিবেদিতা ১৮৯৮ সালে সন্ন্যাস নেন, বাগবাজারে মেয়েদের স্কুল খোলেন, ১৮৯৯ সালে কলকাতায় প্লেগ রোগীদের সেবায় ব্রতী হন। তাঁর গুরু বিবেকানন্দ এক সময় বলেছিলেন, কায়মনোবাক্যে পতিসেবা করা স্ত্রীলোকের প্রধান ধর্ম এবং নারীর পক্ষে গৃহকর্মই যথেষ্ট। পরে পাশ্চাত্য ভ্রমণের সময় সেখানকার স্বাবলম্বী  আত্মবিশ্বাসী মহিলাদের দেখে তাঁর মত পালটায়। তিনিই বলেন, “আমাদের কাজ হচ্ছে, স্ত্রী-পুরুষ- সমাজের সকলকে শিক্ষা দেওয়া। সেই শিক্ষার ফলে তারা নিজেরাই কোনটি ভাল, কোনটি মন্দ বুঝতে পারবে। তখন আর জোর করে সমাজের কোন বিষয় ভাঙ্গতে গড়তে হবে না”। পরে তাঁর আদর্শে-ই সন্ন্যাসিনীদের সেবা সংস্থা রামকৃষ্ণ সারদা মিশন প্রতিষ্ঠিত হয়। 

দেশের মানুষকে ঐতিহ্যমুখী করার উদ্দেশ্যে ওঁর বলা একটি গল্প, যা শুনলে ওঁকে কট্টর অন্ধবিশ্বাসী মনে হয়, এই রকম –

ছড়ি দুলিয়ে এক নবাব বংশধর চলেছেন রাস্তা দিয়ে। পোশাকে নবাবীর অন্ত্যবেলার দারিদ্র্য প্রকট। বোঝা যায় নিজ-বাহন তো দূরের কথা, গাড়ি ভাড়া করারও পয়সা নেই। হঠাৎ তাঁর পেছন থেকে একটি ভৃত্য শ্রেণীর লোক দৌড়ে এসে তাঁকে কিছু একটা বলে আবার উল্টো দিকে দৌড় লাগালো। নবাবজাদাও সে দিকে ফিরে আগের মতই ছড়ি দুলিয়ে উল্টো দিকে ধীর লয়ে হাঁটতে থাকলেন। যে লোকটি তাঁকে কিছু খবর দিয়ে দৌড়ে ফিরে যাচ্ছিল সে এবার অনেক দূর থেকে দেখে আবার ছুটে এসে কিছু বলতেই নবাবজাদা তাঁকে ছড়ি দিয়ে এমন এলোপাথাড়ি পিটুনি শুরু করলেন যে আশপাশের মানুষজনকে ‘করেন কি! করেন কি!’ বলে দৌড়ে আসতে হ’ল। নবাবজাদার উত্তর এই রকম।

-ব্যাটা বলছে বাড়িতে আগুন লেগেছে, তাড়াতাড়ি চলুন। আরে বাবা আগুন লেগেছে বলে কি চোদ্দপুরুষের চাল ছেড়ে দিতে হবে?

স্বামীজি বলেন তোরাও তোদের বাপ-পিতেমো’র চাল-চলন ছাড়বি কেন?

এক জায়গায় পশ্চিমের তথাকথিত শিভ্যালরিকে ব্যঙ্গ করে তিনি বলেন, একটি অপরিণত বুদ্ধি মেয়ের সামনে তোমাদের মত হাঁটু গেড়ে ‘দেবী’, ‘দেবী’ করবার চেয়ে আমরা আমাদের পূর্বপুরুষরা যে সব পুতুল, শালগ্রামশিলাকে পুজো করেছেন তাদের কাছেই মাথা নোয়াবো। 

এ সব দেখে বিবেকানন্দকে অন্ধ যুক্তিহীন প্রাচীনপন্থী মনে হলে খেয়াল রাখতে হবে, তাঁর সময় পরাধীন ভারতীয়দের মনে হীন ‘আমাদের সব কিছুই খারাপ’-এই ভাব চাগিয়ে উঠছিল আর প্রায় কাছাকাছি সময়ে উচ্চবর্ণের শিক্ষিত তরুণরা (ইয়ং বেঙ্গল) খৃষ্ট ধর্মে নাম লিখিয়ে হিন্দু কুসংস্কার দূরীকরণের নামে রাস্তায় গোরুর মাংস ফিরি করার মত অযৌক্তিক কাজ করেছিলেন। 

এত ঐতিহ্য অনুরাগী মানুষ, যিনি বার বার জাতির হীনম্মন্যতা কাটাতে বার বার ভারতের অতীত গৌরবের কথা স্মরণ করান, সেই স্বামিজি-ই আবার “পুরাতন ধ্বংসাবশেষের চারদিকে অলসভাবে ঘুরে বেড়িয়ে সারাজীবন প্রাচীন ইতিহাস নিয়ে হা-হুতাশ করে প্রাচীনকালের লোকেদের কথা ভেবে ভেবে দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলতে” নারাজ। আরও বলছেন, “সর্বদাই নূতন সত্যসমূহের জন্য প্রস্তুত হও। মূর্খ তারা, যারা তাদের পূর্বপুরুষের খোঁড়া কুয়োর নোনতা জল খাবে, কিন্তু অপরের খোঁড়া কুয়োর বিশুদ্ধ জল খাবে না।” আঘাত দিয়ে মুমূর্ষু জাতের মধ্যে প্রাণসঞ্চারের জন্য বলেন, “তোদের পেটে অন্ন নেই, পিঠে কাপড় নেই… তোরা আবার বেদ বেদান্তের বড়াই করিস। …ধর্ম কর্ম গঙ্গায় ভাসিয়ে দিয়ে আবার জীবন সংগ্রামে অগ্রসর হ’।” 

ধর্ম সম্পর্কে যিনি এক জায়গায় বলছেন, “প্রকৃত ধর্মে- অন্ধবিশ্বাসবশতঃ কোন কিছু বিশ্বাস করা বা মানিয়া লওয়ার স্থান নাই।“ আর এক জায়গায় তিনিই বলেন, “ধর্ম যুক্তি-বিচারের পারে।” বাস্তব ক্ষেত্রে ভারতীয়দের কী ভাবে প্রভাবিত করা যায় সে প্রসঙ্গে যখন বলেন,                                         “আপনাকে ধর্মের ভাষায় কথা বলিতে হইবে: যে ব্যক্তি প্রত্যহ প্রাতে তাহার গৃহ পরিষ্কার করিয়া রাখে, তাহার অশেষ পুণ্য হইবে, সে স্বর্গে যাইবে অথবা ঈশ্বর লাভ করিবে। এইভাবে না বলিলে তাহারা শুনিবে না।” তখন তাঁর মধ্যে যেন সন্ন্যাসী নয়, এক নাস্তিক সমাজসংস্কারককে দেখতে পাই। শ্রীরামকৃষ্ণের মত স্বামীজিও মনে করতেন, ঈশ্বর এক হলেও তাঁর কাছে পৌঁছনোর অনেক রাস্তা থাকা একই সঙ্গে স্বাভাবিক এবং প্রয়োজনীয়। কারণ, তাতে অনেক লোক তাঁদের রুচি এবং সুবিধা অনুযায়ী পথ খুঁজে নিতে পারবে। “শুধু প্রচার নয়, এই আদর্শকে বাস্তবে পরিণত করতে চাইলাম। এর অর্থ- আমাদের দৈনন্দিন জীবনযাপনের মধ্য দিয়ে হিন্দুর আধ্যাত্মিকতা, বৌদ্ধের করুণা, খৃষ্টানের কর্মপ্রবণতা ও ইসলামের ভ্রাতৃত্ব ফুটিয়ে তোলা।” – নিজের সম্পর্কে বলা এই কথাগুলিতে যেন বিভেদবিহীন মানবপ্রেম তাঁর অদ্বৈত বৈদান্তিক সত্তাকে ছাপিয়ে ওঠে। তিনি বলেছেন, “যেদিন রামকৃষ্ণ জন্মেছেন (১৮ই ফেব্রুয়ারী, ১৮৩৬) সেই দিন থেকেই আধুনিক ভারতের জয়যাত্রা- স্বর্ণ যুগের শুরু।“ আবার বোধ হয় সেই স্বর্ণ যুগের লক্ষণ দেখতে না পেয়ে বলেন, “সকলকে গিয়ে বল- ওঠো, জাগো আর ঘুমিয়ো না; সকল অভাব, সকল দুঃখ ঘুচাবার শক্তি তোমাদের নিজেদের ভেতর রয়েছে, এ কথা বিশ্বাস কর,… ঐ কথা সকলকে বল ও সেইসঙ্গে সাদা কথায় বিজ্ঞান, দর্শন, ভূগোল ও ইতিহাসের মূল কথাগুলি mass-এর (সাধারণের) মধ্যে ছড়িয়ে দে।“ 

বিবেকানন্দের কথা ও  লেখায় কোন দেবতা নয়, সন্তানের কী ভাবে ভাল হবে সেই ভাবনায় অস্থির এক মাতৃমূর্তি দেখতে পাই। আগে যা বলেছি, এখন যা বলব তা মিলবে কি না তা নিয়ে ভাববার ইচ্ছে বা সময় তাঁর ছিল না। তাই নানা পরিস্থিতিতে নানা কথা বলেছেন। তাঁর কথা – “সত্য বলতে আমরা যা বুঝি, তাও তো relative- দেশকালপাত্রভেদে ভিন্ন ভিন্ন।… ঠাকুর যেমন বলতেন, ‘মা কোন ছেলেকে পোলাও-কালিয়া রেঁধে দেন, কোন ছেলেকে বা সাগুপথ্য দেন’- সেইরূপ।“ তুলসীদাসের দোহা মনে পড়ে-                                            

তুলসী এয়সা এয়সা ধেয়ান ধরো যো বিয়ান কা গাই,                                                                                           মুঁ মে কাটো চানা তৃণ, চেৎ রাখো বাছা-ই।

অর্থাৎ যেমন নতুন বাচ্চা হওয়া গাভী চরতে চরতে বাছুরের ওপর খেয়াল রাখে, তেমনই মূল উদ্দেশ্যে মন স্থির রাখো। স্বামীজির ক্ষেত্রে এই উদ্দেশ্যটি ছিল মানুষের ভারতের সাধারণ মানুষের দুর্দশা-মুক্তি- “….নূতন ভারত বেরুক। বেরুক লাঙ্গল ধরে, চাষার কুটির ভেদ করে, জেলে, মালা, মুচি, মেথর, ঝুপড়ির মধ্য হতে।“  তাঁর লেখা ও কথার মিল-অমিল ছাপিয়ে সেই দরিদ্রের কল্যাণকামী সুরটি বাজতে থাকে। কখনো কখনো মনে হয়, ধর্মও তাঁর কাছে প্রধানতঃ অসহায়ের দুঃখ নিরসনের একটি উপায়মাত্র। তাঁর বিখ্যাত হবার বিশেষ কারণ শিকাগো ধর্মমহাসভা সম্বন্ধে বলছেন, “তোমরা অনেকেই জানো আমেরিকায় ধর্মমহাসভা হইয়াছিল বলিয়া আমি সেখানে যাই নাই, দেশের জনসাধারণের দুর্দশা দূর করিবার জন্য আমার ঘাড়ে যেন একটা ভূত চাপিয়াছিল……সেই জন্যাই আমি আমেরিকা গিয়াছিলাম।… ধর্মমহাসভা লইয়া কে মাথা ঘামায়? এখানে আমার নিজের রক্তমাংসস্বরূপ জনসাধারণ দিন দিন ডুবিতেছে, তাহাদের খবর লয় কে?”

আমরা যারা তাঁর স্ববিরোধিতা নিয়ে বিব্রত হয়ে পড়ি, তাঁদের স্বস্তি’র জন্য জানাই, তিনি তাঁর বাণীতে কাউকে বাঁধতে চান নি। “যত মত, তত পথ” তাঁর কাছে কথার কথা ছিল না। আরো একটি সংলাপ দেখুন

শিষ্য- …আমি উপনিষদের মতই মেনে যাব। আমার এতে খুব বিশ্বাস। 

স্বামীজি- তা কর, তবে আর কারও যদি ঐরূপ কোন মতে ‘খুব’ বিশ্বাস হয়, তবে তাকেও ঐ বিশ্বাসে চলে যেতে দিস। দেখবি- পরে তুই ও সে এক জায়গায় পৌঁছবি।…” তাঁর মতে- “এটা খুবই স্বাভাবিক যে একই সময়ে সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে এবং নির্বিরোধে আমার ছেলে বৌদ্ধ, আমার স্ত্রী খৃষ্টান এবং আমি নিজে মুসলমান হইতে পারি।”

কোন মানুষ- তিনি যত বড়-ই হোন না কেন- তাঁর সময়ের প্রভাব থেকে মুক্ত থাকতে পারেন না। বিবেকানন্দও ব্যতিক্রম নন। তাঁর ঐতিহ্যপ্রীতি, কর্মকাণ্ড, কথা ও লেখাকে সেই কালের প্রেক্ষাপটেই দেখতে হবে। তাছাড়া জীবন এই ব্যতিক্রমী সন্ন্যাসীকে তেমন সময় দেয় নি। ৩৯ বছরের জীবনের অনেকটাই কেটেছে দ্বিধাসংকুল মনে পথের সন্ধান করে।  মাত্র ১৫ বছরের সন্ন্যাস জীবন। তাঁর কর্মজীবনের মুল সুরটি না ধরে ছিদ্রান্বেষী হয়ে পড়ার সময় দেখি এই অতি তাৎপর্যপূর্ণ উচ্চারণ- “তাঁহারা (যুগপুরুষরা) বলেন, ভ্রাতৃগণ আগাইয়া যাও।  আর  আমরা তাঁহাদিগকে আঁকড়াইয়া থাকি, নড়িতে চাহি না। আমরা চিন্তা করিতে চাহি না।……শত বৎসর পরে তাঁহাদের বাণী আমরা  আঁকড়াইয়া ধরি এবং নিশ্চিন্তে নিদ্রা যাই।” এর মানে, সেই নির্মোহ সন্ন্যাসী শুধু প্রাচীন জ্ঞানী ব্যক্তিদের নয়, তাঁর নিজের বাণীর অন্ধ অনুসরণ থেকেও আমাদের মুক্ত রাখতে চেয়েছেন। বেঁচে থাকলে হয়তো বলতেন, ‘আমার পথ পছন্দ না হলে, নিশ্চয় অন্য পথে যাবি বাবা। শুধু মানুষের- বিশেষতঃ যারা সহায়হীন- তাদের ভাল হচ্ছে কি না, সেটা মাথায় রাখবি।’   

স্ববিরোধিতার গ্লানি অন্যদের জন্য। এমন ভাবনাতে নিমগ্ন যাঁর অস্তিত্ব আর হৃদয়, তাঁর কাছে ‘স্ব-বিরোধ’ শুধু কথার কথা।

২৮শে জানুয়ারী, ২০২৩                                                                             -অরিজিৎ চৌধুরী

তথ্যসূত্র

স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা, উদ্বোধন কার্যালয়                                                                                    স্বামী -শিষ্য-সংবাদ, উদ্বোধন কার্যালয়                                                                                            আমি বিবেকানন্দ বলছি, সম্পাদক শংকর                                                                                   বিবেকানন্দ এবং উত্তরাধিকার (প্রবন্ধ)- শুভব্রত চৌধুরী, পথিকৃৎ, শারদ সংখ্যা, ১৪০০ (১৯৯৩)

 

 

About the author

Arijit Chaudhuri, located in Navi Mumbai, petroleum geologist by profession. Also interested in issues concerning pollution, climate change and fast depleting groundwater reserves.Travelling, reading, writing articles, composing rhymes and recitation are his hobbies.