নীল আকাশের নীরব কথা
–প্রজ্ঞাপারমিতা রায়
পি–৯০, নীলাচল কমপ্লেক্স,
নরেন্দ্রপুর,কলকাতা – ৭০০১০৩
ফোন নম্বর: ৭০৪৪০৯৬৫৮৪
E-mail: pparamitab@gmail.com
সেদিন চলে গেছে বহু যুগের ওপারে। তার পর কেটে গেছে কত কত কাল। বাণী আজও আগলে রেখেছে দেবদ্যুতিকে। দেবদ্যুতি বাণীর ঠাকুমা। বাণীর বয়স পঁয়ত্রিশ ছত্রিশ। যখন তার নিজের বয়স ছিল মাত্র পাঁচ বছর, তখন একটি মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় তার বাবা–মা–দাদা সকলেই মারা যায়। সে নিজে কি করে বেঁচে গিয়েছিল, সেকথা তার মনে নেই তেমন। আর চাইলেও সে, সেকথা মনে করতে পারে না। কোনও সহৃদয় মানুষের সাহায্যে, সে কি করে দাদু–ঠাকুমার কাছে এসে পৌঁছেছিল, সেসব কোন ইতিহাসের পিছনে তলিয়ে গেছে কেউ জানে না।
দাদাই যখন মারা যান, তখন বাণী তরুণী। ঠাকুরদার সেই সময় কত বয়স ছিল বা ঠাকুমার, সে সব হিসেব বাণীর কাছে নেই। কিন্তু সেই যে সকলকে হারিয়ে সে, এ বাড়িতে ঢুকেছিল, তার পর থেকে সে এখানেই আছে। আর এতগুলো বছর সে দেবদ্যুতিকে সামলে রেখেছে।
দাদাই চলে যাওয়ার পর, ঠাকুমা ধীরে ধীরে সব কিছু ভুলে গেছে। কিছুই তার মনে নেই। কিন্তু বাণী বোঝে, মনের মধ্যে কিছু নিয়ে ঠাকুমা মেতে থাকে। দাদাই আর ঠাকুমাকে সবাই খুব ভালোবাসতো। আত্মীয়স্বজন থেকে শুরু করে যে কোনো অপরিচিত মানুষও এদের কাছে ভালোবাসা, স্নেহ, আদর পেত এবং তারা তাদের মতো করে এই মানুষ দু‘টিকে একই জিনিস ফিরিয়েও দিত। মানুষ দুটি একে অপরের জন্য এতটাই নিবেদিত প্রাণ ছিল যে বলার নয়। বাণী এদের সঙ্গে ছোটোবেলা থেকে আছে বলেই এদের সবটাই সে জানে। পুত্র শোক এরা কিভাবে সামলে নিয়েছিল, কিভাবে বাণীকে তারা মানুষ করেছে, কিভাবে বাণীর বাবার একমাত্র বোন মণি পিসি পিসেমশাই এবং একমাত্র পিসতুত ভাই কমলকে এরা আদর আর স্নেহে ভরিয়ে রাখতো বাণী সেসব দেখেছে। সব মিলিয়ে একটি পরিপূর্ণ পরিবারের ছবি।
কিন্তু সেই ঠাকুমা সব কিছু ভুলে গেছে এখন। খাওয়া–ঘুম– পুত্রশোক–বিনোদন–সিনেমা এমনকি প্রাত্যহিক কাজকর্মও তার মনে নেই, মনে থাকে না। কিন্তু বাণী জানে এবং বোঝে যে মাঝে মাঝে দেবদ্যুতি অন্য জগতে চলে যান। সেখানে কিছু একটা আনন্দ খুঁজে পান নিজেই। কিন্তু বাণী কিছুই বুঝতে পারে না। কৌতুহল আছে, কিন্তু তার চেয়ে বেশি আছে একজন ডাক্তার হিসেবে তার কর্তব্য। তাই ঠাকুমাকে মোটামুটি একটু সুস্থ রাখার তাগিদে সে কোনো চাকরি করে উঠতে পারেনি। বাড়ির মধ্যেই একটি চেম্বার খুলে সে বসে পড়েছে। তার রোগী এবং ওষুধপত্র নিয়ে মোটামুটি যা রোজগার হয় তাতে চলে তো যায়ই, এছাড়া দাদুরও কিছু জমানো সম্পত্তি তো আছেই। তাই সে মন দিয়ে ঠাকুমাকে বোঝার চেষ্টা করে নিরন্তর।
বাণী একদিন ঘুমিয়ে পড়েছিল, হঠাৎ ঘুম ভেঙে যায় তার, দেখে ঠাকুমা খোলা জানলার সামনে দাঁড়িয়ে বাইরে তাকিয়ে গাইছেন
“আকাশ আমার ভরলো আলোয় আকাশ আমি ভরবো গানে”।
ঘড়ি দেখলো বাণী, রাভ একটা বেজে চল্লিশ মিনিট। অবাক হল, কিন্তু বাধা দিল না। গান শেষ হওয়ার পরও জানলার শিক ধরে ঠাকুমা বাইরেই তাকিয়ে রইলো। হঠাৎ বাণীকে অবাক করে দিয়ে বললো,দেখলি তো? এখনও গাইতে পারি? সুর ভুলিনি।
বাণী হাসলো।
ঠাকুমা বলে চলেছে। জীবনে সব কিছু ভুলে গেলেও সুর আমি ভুলবো না, ভোলা যায়না। আমি তো সেদিনের কোনো কথাই ভুলিনি।
– কোন দিন ঠাকুমা?
ওই যেদিন পূর্ণিমা ছিল বলে সন্ধ্যে বেলায় এই গানটা শোনালো। ভারী সুন্দর ভরাট গলার স্বর ছিল তার। এর পরেই ঠাকুমা বললো–
– জল দে খাই খুব ঘুম পাচ্ছে।
আর কথা নেই। দু‘জনেই এর পর শুয়ে ঘুম। বাণী সকালে উঠেও বুঝতে পারলো না ঠাকুমার কথা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ডাক্তারের মানসিকতা তাকে বুঝিয়ে দিল কোথাও একটা তার ঠাকুমা একা একা আনন্দ খুঁজে পান মনের ভিতরে। বাণী ভাবলো – এভাবে যদি ভালোভাবে থাকতে পারে, সেটাও তো কম না। থাক না হয় নিজের মনের ভিতরে, অন্য এক জগতের মাঝে।
বেশ কিছু এমন ঘটনা ঘটতে লাগলো মাঝে মাঝে, যাতে ঠাকুমার মনের আগল খুলতে আরম্ভ করে কিন্তু মাঝ পথেই তা আবার বন্ধ হয়ে যায়। তখন হাজার প্রশ্ন করলেও যে, সে আগল আর খুলবে না সে কথা বুঝে নিয়ে বাণী কখনো দেবদ্যুতিকে বিরক্ত করে না।
দেবদ্যুতিকে সকলে মানসিক রোগী বলে মেনে নিয়েছে, সবার বক্তব্য, দাদাই মারা যাওয়ার পর ঠাকুমার এমনি অবস্থা। পিসিও বলে বাণীকে এদের দু‘জনের যে জুটি তা অসম্ভব সুন্দর ছিল।
নীলকান্তের এক বন্ধু আছেন, কদাচিৎ তিনি বাড়িতে এখনও আসেন যেমন পয়লা বৈশাখ বা শুভ বিজয়া। কিন্তু ঠাকুমার একটু খোঁজ খবর করেই চলে যান তিনি। বাণী তার কাছে শুনেছে, যে দু‘জনের বন্ধনটি ছিল বড় মধুর। এমনটি আর চোখে পড়েনা। এইজন্যই নীলকান্তের গত হওয়ার পর দেবদ্যুতি আর স্বাভাবিক হতেই পারছে না।
বাণী প্রতিদিন ঠাকুমার খাবার সময় একটু দেখে নেয়। আয়া দিদি আছেন, তবুও সে তার কর্তব্য পালন করেন। এক হাতা ভাত, এক চামচ আলু সিদ্ধ, এক হাতা দই, এক হাতা ডাল অথবা এক টুকরো মাছ, অথবা কোনো একটি নিরামিষ তরকারি, বেগুন বা পটল ভাজা সামান্য এরই মধ্যে ঘুরে ফিরে খাবার মেনু। মাংস বা – ডিম ঠাকুমা খান না। কোনোদিন একটু ঝাল দিয়ে আলু সেদ্ধ বা বেগুন পোড়া দিলে ঠাকুমা খুশি হন। কিন্তু এই বয়সে বেশি ঝাল ও দেওয়া যায় না। কখনও কখনও খাবার এক–দু‘ঘণ্টা পরে দেবদ্যুতি বলেন, বাণী আজকে আমি খাবো না? এত দেরি করছো, কখন খাবো?
সেই সময় বাণী হয়তো একগ্লাস জল খাওয়ালো, দেবদ্যুতি ভাবলেন তার খাওয়া হয়ে গেছে। তথন বলে উঠলেন
মাছটা বেশ ভালো হয়েছে, তুমি রাঁধলে বুঝি?
বাণী সম্মতিসূচক মাথা নাড়লো হেসে। ঠাকুমাও হাসলেন। অথচ, সেদিন কিন্তু মাছ রান্নাই হয়নি।
বিকেলে একদিন দেবদ্যুতি বললেন, চুল বাঁধবেন। আয়া দিদি এবং বাণী অনেক কায়দা করে ঠাকুমার মাথায় হাত বুলিয়ে একটু সময় নিয়ে কিছুক্ষণ পরে বললো, বাঃ বেশ হয়েছে। দেবদ্যুতি গান ধরলেন সঙ্গে সঙ্গে
“মনে রবে কি না রবে আমারে..
এই সময় এই গান বাণী ভাবে ঠাকুমা এত সুন্দর সুরেলা গান গাইতে পারেন এখনও, ভাবাই যায় না। অথচ, আগে কখনো ঠাকুমাকে এরকম যখন তখন গান গাইতে শোনেনি। দু‘একবার যে ঠাকুমার গান সে শোনেনি তা ঠিক নয়, তবে সম্পূর্ণ গান এত সাবলিল ভাবে গাইতে আগে কখনো শোনেনি। ঠাকুমার এই আশ্চর্য্য প্রতিভার কথা ভাবলে বাণীর খুব গর্ব বোধ হয়। ঠাকুমার এই খোশমেজাজি চঞ্চল স্বভাবের পরিচয় সে আগে কখনো পায়নি। তাই পরিচিত ঠাকুমাকে তার মাঝে মাঝেই অপরিচিত লাগে।
দেবদ্যুতি তার জীবনের অনেক বছর কাটিয়েছেন শান্তিনিকেতনে। গান বা নাচ তো তার জানাই স্বাভাবিক। কিন্তু যে উচ্ছ্বলতা হঠাৎ
করে বাণী দেখতে পায় আজকাল, মানে দাদাই মারা যাওয়ার পর, তা আগে কখনো সে দেখেনি। অথবা হয়তো দেখেছে কিন্তু অনুভব করেনি। ঠাকুমার অনেক গুণের কথাই বাণী জানে। কিন্তু সেগুলিকে এখন যেন নতুন করে দেখতে পায়।
শান্তিনিকেতন তো শুধু একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নয়, একটি সুস্থ, সুন্দর, মনোরম জীবন পথের বা জীবনযাত্রার ক্ষেত্র। মানুষ চিরকালই প্রকৃতির সঙ্গে মিতালি পাতিয়ে থাকতে চায়। আবার প্রকৃতির সহজ বন্ধনের সীমায় নিজেকে মানুষ বেঁধে রাখতেও চায়না। দু‘রকম শিক্ষাই কিন্তু এখানে পাওয়া যায়। দুই–ই চরম সত্য। মানুষ তার মানবতার আদর্শ ও মহিমা নিয়ে বিশ্বের মানুষের সঙ্গে মিলিত হতেই পারে, এ বড় কম জিনিস নয়।
দেবদ্যুতি একদিন বলেছিল,
বাণী, আমায় নিয়ে যাবে আজ বিকেলে লালবাঁধের ধারে?
বাণী তো, লালবাঁধ কোথায়, কিছুই মনে করতে পারছে না তখন। তাছাড়া সে শান্তিনিকেতনের কথা জানে, শুনেছে, এমনকি বেড়াতেও গিয়েছিল, কিন্তু ওই জায়গার সঙ্গে সে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত নয়। তার বড় হয়ে ওঠা পুরোপুরি কলকাতায়। শান্তিনিকেতনকে মনে প্রাণে মিলিয়ে নিয়ে সে বড় হয়ে ওঠেনি। তাই তার ডাক্তারের মন ঠাকুমার ওইসব কথায় একটি হারিয়ে যাওয়া অতীত খুঁজে বেড়ায়। কিছুতেই যার সন্ধান সে পায় না। সে চায় না ঠাকুমাকে কষ্ট দিতে। তাই তিনি যখন যা বলেন, তাই সে মন দিয়ে শোনে। ধীরে ধীরে সে ধরতে পারছে যে, যে জীবন ঠাকুমা এতকাল কাটিয়েছে তার
থেকে একটা আলাদা, একদম অন্যরকম একটি জগতের কথা তিনি এখন ভাবেন। ওতেই মগ্ন হয়ে থাকেন। সেই হারিয়ে যাওয়া নুড়ি পাথর কুড়িয়ে কুড়িয়ে তিনি মাঝে মাঝে তার আঁচলে ভরে রাখেন। আঁচল খুলে যখন দেখেন, তখন খুশিতে উজ্জ্বল হয়ে ওঠে তার সমস্ত শরীর। বাণী জানে, বয়েস হলে মানুষ শিশুর মতো হয়ে যায়। অসীম কৌতুহল থাকলেও সে ধীরস্থির ভাবে ঠাকুমার জীবনের পুরোন ফুলগুলি দিয়ে একটি মালা গাঁথার চেষ্টা করে চলেছে অবিরত। ঠাকুমাকে সে এতকাল ধরে দেখছে, কিন্তু এখন অন্যরমক লাগে মাঝে মাঝে। আসলে যাকে মনে হয় চিরদিনের চেনা, সে–ই একদিন কেমন করে যেন অচেনা হয়ে যায়। আর যাকে চিনতাম না,জানতাম না তাকে হঠাৎ একদিন চিনে ফেললে জীবন আর একভাবে পূর্ণ হয়ে ওঠে।
দু‘মাস আগে একদিন দেবার্পণ এসেছিল। কিছু কাজ হয়তো ছিল বাণীর সঙ্গে, বড় একজন ডাক্তার দেবার্পণ। বাণীর চেয়ে প্রায় দশ– বারো বছরের বড়। ঠাকুমা আর বাণীর সঙ্গে কিছুক্ষণ গল্প করে, চা খেয়ে যাবার সময় বাণীকে বলে গেল
বাণী, তুমি ঠাকুমাকে নিয়ে এত ভেবো না, ওর শরীর ঠিক আছে। আমি বুঝতে পারছি, তোমার মনে হচ্ছে ঠাকুমার কোনো মনের অসুখ করেছে, তাই আমাকে ডেকেছো। ওকে ওর মতোই থাকতে দাও। বিবাহিত জীবনের আগে ওনার একটা জীবন ছিল। সেখানেই উনি ফিরে যান মাঝে মাঝে। এমনিতে শারীরিক অসুবিধা বিশেষ কিছু নেই। কিন্তু মনের কষ্ট আছে, সেই কষ্ট হয়তো এখন ওনাকে আনন্দ দিচ্ছে। যে কোনো কষ্টের স্মৃতিই কিন্তু আনন্দের, একথা ভুলে যেও না। বিশেষত শান্তিনিকেতনে পড়াশুনা করেছেন–তার চিন্তাধারা অন্যরকম। এতকাল সংসারের মধ্যে ছিলেন, অবস্থাপন্য পরিবারের মধ্যে থাকতে থাকতে হয়তো নিজেকেই উনি হারিয়ে ফেলেছিলেন। মানুষ তার অভ্যস্থ জীবনের মধ্যে নিজেকে গেঁথে ফেলে বড়শির মতো। বেরোনর কোনো উপায় থাকে না তখন। এই পৃথিবীতে বহু মানুষ, প্রায় সবাই ওই গেঁথে যাওয়া জীবনের মধ্যেই একদিন শেষনিঃশ্বাস ফেলেন। আর যারা একটু সুযোগ পান, তারা চেষ্টা করেন একটু মুক্তি পেতে। এই বাঁচাটা সবার আসে না, হয়েও ওঠে না। যদি কেউ পারেন, তাহলে তো খুবই ভালো। তোমার ঠাকুমা হয়তো তেমনিভাবে বেঁচে আছেন এখন। উনি কথা বললে শুনে নিও, বাধা দিও না। হয়তো অনেক কথা বলার ছিল, বলতে পারেননি। চাওয়া–পাওয়ার হিসেব তো সকলের সমান নয়। হয়তো মনের সুগভীর চেতনায় জমে আছে সেইসব দিনের সুখস্মৃতি, যা ওনাকে শারীরিকভাবে সুস্থ রেখেছে, মানসিকভাবেও আনন্দ দিচ্ছে।
বাণী হাসলো, মনে মনে ভাবলো, ঠাকুমার জীবনে কী দাদাই ছাড়া অন্য কেউ ছিল? কিন্তু তা কি করে হবে? সে তো কোন ছোটোবেলা থেকেই দেখছে, ঠাকুমা এই সংসারের চালিকা শক্তি। কোনোদিন তার কোনো কর্তব্যে দায়িত্বে অবহেলা দেখেনি সে। প্রাণ দিয়ে দাদাই আর তার সংসারকে সবসময় প্রাণবন্ত রাখতেন তিনি। সকলের সব ব্যাপারে পরিত্রাতা ছিলেন ঠাকুমা। কোনোদিন কোনো অন্যরকম কিছু সে দেখেনি। তবে মানুষের মন তো এক অপার রহস্যের জাদুঘর। হয়তো দাদাই চলে যাওয়ার পর তিনি কোনো কূলকিনারা না পেয়ে ফিরে গেছেন তার পুরনো জীবনে। সংসারের – কথা তো আজকাল তার আর মনেই আসেনা। সেইসমস্ত বিষয়ে কোনো কথাও হয়না। হয়তো দেবার্পণদার কথাই সত্যি। ঠাকুমা এখন অন্যভাবে বেঁচে আছেন, যা আমরা জানিনা। বাণী নিজের মনেই বললো, ঠাকুমা ভালো থাকুক। আমার তো কেউ নেই ঠাকুমা ছাড়া। তবু জানতে ইচ্ছে হয়, ঠাকুমার সেই গভীর গোপন জীবনের কথা।
পরদিন সন্ধ্যায় যখন বাণী তার রুগী দেখছে একতলার ঘরে তখন হঠাৎ শুনতে পেলো, ঠাকুমা গাইছে –
“সখা, সাধিতে সাধাতে কত সুখ……”।
বাণী এক মিনিটের জন্য অন্যমনস্ক হয়েই আবার তার রুগী দেখায় মন দিল।একটু রাতের দিকে এসে ঠাকুমাকে খাইয়ে বাণী শুয়ে পড়লো। পরদিন ভোরে উঠে বাণী দেখলো বিছানায় ঠাকুমা নেই। জানলা দিয়ে বাইরে বাগানে উঁকি মেরে দেখতে পেল ঠাকুমা চুপ করে বসে ঘাসের উপরে হাত বুলিয়ে চলেছেন। সেই হাত আবার নিজের গালে বুলোচ্ছেন।
বাণী ঠাকুমার কাছে এসে তাকে বললো,
–কি করছো এখানে?
–শিশির পড়া শুরু হয়েছে আজ ক‘দিন ধরে, তাই এখানে বসে আছি, শিশিরের স্পর্শ খুব ভালো লাগে আমার। শরতের শুরুতে ভোরের বৈতালিকের সময় কী যে অসীম অপার সুখ ছিল! কি আর বলবো! গান গাওয়ার সময় কথনো কথনো আমরা পাশাপাশি হেঁটেছি।
এর পর ঠাকুমা সহসা চুপ করে গেল। বাণী দেখলো ঠাকুমার চোখে জল মুখে হাসি। এক অপূর্ব আলোর ছটায় উদ্ভাসিত চেহারা।
আসলে প্রেম মানুষকে এক অনন্যতায় নিয়ে যায়। মানুষ মনে প্রাণে সুন্দর হয়ে ওঠে। এক পরিপূর্ণতা প্রাপ্ত হয়। যে মানুষ প্রেমের আস্বাদ পায়, তার মন এতটাই সুন্দর হয়ে যায়, যে চেহারায় তা ফুটে ওঠে। শরীর এবং মনের যে কারাগারে আমরা বদ্ধ হয়ে থাকি, সেই বন্ধনের মুক্তি আমাদের নতুন আলোর সন্ধান দেয়। ভালোবাসা জিনিসটাই এমনি।
বাণী এর মধ্যে একদিন দেবার্পণকে বলেছিল ঠাকুমার সব কথা। সব কথা শুনে দেবার্পণ বলেছিল,
–আমরা সবাই স্নেহ, আদর আর ভালোবাসার কাঙাল, বাণী। আমি সারাদিন মানসিক রুগীদের নিয়ে ব্যস্ত থাকি। হাজার রুগীর হাজার সমস্যা, হাজার কাহিনী। আমি তাদের সকলের জন্য আছি। কিন্তু দিনের শেষে ঘরে ফিরে মনে হয়, আমার কেউ কোথাও নেই। অথচ আমার তো পারিবারিকভাবে কোথাও কোনো সমস্যা নেই। আমার যে মানসিক ক্লান্তি এবং অসহায়তা, ง বিষয়টা কাউকে বোঝানো যায়না। চেনা ভূবন ছাড়িয়ে যেতে মন প্রাণ চাইলেও আমি তা করতে পারিনা। আমার হাতে পায়ে আছে শিকল। তোমার ঠাকুমার সেই শিকল মুক্ত হয়েছে আজ। উনি বাইরে যা হারিয়েছেন, অন্তরে পেয়েছেন তার বেশি। সেই পাওয়ার আনন্দ একান্তই তার। ওখানেই ওকে থাকতে দাও। হয়তো বা সংসার জীবনের আড়ালে উনি সেই কথাই শুনতে পান, যা তিনি শুনতে চান৷ মনে রেখো – না পাওয়ার মধ্যেও আছে পূর্ণতা। শূন্যতাই পূর্ণতা, আর পূর্ণতাই হয়তো শূন্যতা। আমরাই শুধু হিসেব মেলাতে পারিনা। ভালো আছেন তোমার ঠাকুমা, তুমিও ভালো থেকো।
বাণী হাসি মুখে দেবার্পণকে বিদায় দিয়ে ঘরে এসে দেখে ঠাকুমা হালকা বেগুনি রঙের উল দিয়ে মাফলার বুনে চলেছে। অনেকদিন ধরেই এই সথের কাজটি হচ্ছে মাঝে মাঝে ভুলে যান হয়তো, তখন পরে থাকে উল আর কাঁটা বিছানার একদিকে। আজ এখন দেখে মনে হল কাজটি শেষের পথে। বাণী কোনোদিন ঠাকুমাকে জিজ্ঞাসা করেনি এই মাফলার কার জন্যে?
দিন যায় – মাস যায় ঠাকুমা তার নিজের মতোই আছেন। সকলেই আজকাল নিজের মতো থাকতেই পছন্দ করে। ঠাকুমাকে বেশ
যত্ন করে রেখেছে বাণী। শরৎকাল এসে গেল, ভোরের শিশিরে শিউলি ফুলের গন্ধ ভেসে আসে। দুর্গাপূজার ঠিক চার–পাঁচ দিন আগে একদিন ঊষাকালে দেবদ্যুতি বাণীকে বললেন, বাণী এখন কী সকাল না বিকেল? বাণী তখন দেবদ্যুভিকে একটু জল থাইয়ে দিল। কিছুক্ষণ পর বাণী ঠাকুমার দিকে তাকিয়ে, তার অভিজ্ঞতা থেকে বুঝে নিলো, ঠাকুমা ধীরে ধীরে জীবনের সব হিসেবের বাইরে চলে যাচ্ছে। ঠিক তার কিছুক্ষণ পরে ঠাকুমার নিঃশ্বাসের শব্দে বাণী বুঝে নিলো সব বন্ধন তার শেষ হলো। বাবা–মা–ঠাকুরদা সবার শেষে শুধু ঠাকুমাই ছিল। আজ তার সমস্ত বন্ধন শেষ করে ঠাকুমা মুক্তি পেল। কিছুক্ষণ নীরবে চোখের জল ফেলে সে ব্যস্ত হলো সকলকে খবর দিতে।
ঠাকুমার সব কাজ শেষ করে একদিন বাণী আবার ফিরে এলো তার নিত্যকালের জীবনে। মানুষের কোনো কিছুই তো থেমে থাকে না, বিশেষ করে কাজ, কাজ তো চলতেই থাকে। বাণীও তার নিজস্ব জীবনের মধ্যে ফিরে এলো ধীরে ধীরে।
ঠাকুমার সঙ্গটা বাণীর জীবনে একটা পরম নির্ভরতার স্থান ছিল। খানিকটা একলা হয়ে পড়েছে বাণী। সারাদিনের কাজকর্মের শেষে ঘরে শুভে এলে ঠাকুমার অনুপস্থিতি তাকে একটা বেদনার অনুভূতি দেয় – তবু একটা সময় সে ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়ে।
এইরকমই একদিন ঠাকুমার আলমারিতে সাজানো রবীন্দ্র রচনাবলীর একটি খণ্ডে সে পেয়ে যায় একটি চিঠি, যে থামের মুখ বন্ধই আছে, কোনোদিন খোলাই হয়নি। খুবই অবাক হল বাণী। কিন্তু মানুষের কৌতূহল তো থাকবেই। রাণীও ভাবলো – কি জানি। পেয়েছি যখন পড়ে দেখি, হয়তো কোনো কথা…..।
“শরৎ,
আর মাত্র ক‘দিন পর আমি চলে যাব। তাই তোমাকে লিখতে বসেছি শেষ চিঠি। বাবা, মা এবং বাড়ির সকলেই অত্যন্ত সুখী এবং খুশি। দাদা আজকাল মাঝে মাঝেই আমার কাছে এসে জানতে চায়, আমি ঠিক আছি কি না, আমি কিছু চাই কি না? বেশ লাগছে ভাবতে নতুন জীবন, নতুন সংসার। আমার এই জীবনের জন্য বাড়ির সকলের এই উচ্ছ্বাস–আনন্দ–আহ্লাদ সবই যেন নতুন করে ফুটে ফুটে উঠছে। আমি জানি তোমারও খুব আনন্দ হবে যখন তুমি এই কথা শুনবে। তুমি মানুষটাই তো ওমনি। আমাদের দু‘জনের কথাতো কেউ জানে না, শুধু তুমি আর আমি ছাড়া।
যেদিন প্রথম তোমার সঙ্গে আলাপ হয়েছিল, সেদিন তোমাকে আমি চিনতাম না, শুধু নাম জেনেছিলাম। আমাদের মধ্যে বয়সের ব্যবধান ছিল সম্ভবত পাঁচ অথবা ছয় বছর। দেখা তো হতো না আমাদের প্রতিদিন – কোনো অনুষ্ঠান হলে বা কোথাও হয়তো হঠাৎ মুখোমুখি হয়ে যেতাম আমরা। আমার এখনও মনে পড়ে পূজার ছুটির ঠিক আগে তোমার সঙ্গে যেদিন দেখা হলো, তার দু‘একদিন পরেই আমরা সবাই বাড়ি চলে যাবো। সেদিনের সব কথা আজও আমার মনে আছে। তোমার হাতে সাদা রুমালে শিউলি ফুলের কথা ভুলিনি, যা তুমি আমাকে দিয়েছিলে। আমি রুমাল সুদ্ধু সেই ফুল নিয়েছিলাম। তুমি কি ভেবে ফুল দিয়েছিলে আমি জানি না, কিন্তু আমি বুঝে ছিলাম ওই শিউলি ফুলের গন্ধে আমার মন ভেসে গেল, যাকে আর আমি চাইলেও ফেরত পাবো না।
মন তো একবারই ভেসে যায়, সেখানেই সে থেকে যায়। ফিরে আসা আর হয় না কখনো। আমরা প্রত্যেকেই হয়তো নানাভাবে এই পৃথিবীতে কাটিয়ে যাই কেউ আনন্দে, কেউ কষ্টে, কেউ শান্তি বজায় রেখে, কেউ সব কিছুকে মানিয়ে, আর কেউ সব কিছুকে মেনে নিয়ে, মনে নিয়ে।
মনে পড়ে একদিন বৃষ্টির সময় তুমি আর আমি চূড়ান্ত ভিজে ছিলাম। সম্পূর্ণ ভিজে ভিজে হস্টেলে ফিরে স্নান করেছিলাম। তুমি বুঝেছিলে সেদিন, আমি আরও একটু সময় চাইছিলাম তোমার কাছে থাকতে। কিন্তু নিয়ম বড় বালাই। ফিরতেই হবে। তুমি বলে দিয়েছিলে স্নান করতে। তবুও পরদিন আমার হাঁচি শুনে হেসেছিলে। আগের দিন ওই বৃষ্টি ভেজা সন্ধ্যার কথা কি কখনো ভুলতে পারবো?
কেন যে একই সঙ্গে আমার কষ্টও হচ্ছে, আবার আনন্দও হচ্ছে। জানিনা। যার ঘর করতে যাচ্ছি শুনেছি তিনি সুপুরুষ এবং একটি অসাধারণ ব্যক্তিত্বের অধিকারী। আমি শুধু ছবি দেখেছি, কাল তাকে স্বচক্ষে দেখবো। এও জানি, আর কোনোদিন কোনোভাবেই তোমার সঙ্গে আমার দেখা হবে না। নতুন জীবনে প্রবেশ করার পর পিছন ফিরে আর তাকানো যায়না। একথা তুমি বলেছো আমায় তখন এই কথার অর্থ বুঝিনি, আজ বুঝি। একসময় রাতে শুয়ে তোমার কথা ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়তাম। ভোরে উঠে ক্লাসে যাবার পথে তোমার সঙ্গে দূর থেকে একবার চোখের দেখা। সকালবেলায় তোমায় দেখলেই আমার মনে হত সারা সকাল আমার সোনালী আলোয় ভায়র হয়ে উঠলো। আজ কতদিন হল তোমায় দেখিনি। তুমি হারিয়ে গেলে আমার জীবন থেকে। কোথায় গেলে তুমি? আমি শুধু মনের গভীরে এবং তীব্র ব্যথার অনুভূতিতে তোমাকে কাছে পাই।মনের মধ্যে তোমায় পাই, কিন্তু মনের বাইরে তো তুমি নেই। আমার চেনা ভুবনে তোমার দেখা নেই কেন?
তোমার লেখা শেষ চিঠিটি আমি যত্ন করে রেখেছি। আজ থেকে আর রাখবো না। কারণ কাল আমি মিলনমালায় বেঁধে ফেলবো নিজেকে, অথচ তোমার সঙ্গে হয়ে রইলো আমার চিরবিরহের পালা। তোমার চিঠির কিছু কথা আজও মনে আছে।
‘প্রেম শুধু তো আর কাছেই টানে না, দূরেও ঠেলে দেয়। মনে করে নিও আমরাও দূরেই রয়ে গেলাম। তুমি আমি দু‘জনেই জানবো, মিলনের মালা আমাদের জন্য ছিল না। ছিল শুধু ফুলের সৌরভ। অকারণেই যখন মন উতলা হবে, ভেবে নিও আমরা আছি একে অপরের হৃদয়ের ছোট্ট একটি কোনো ।
একদিন বকুল গাছের তলায় বসে ছিলাম দু‘জনে, তোমার মনে আছে? মাঝে মাঝেই ফুল ঝরে পড়ছিল আমাদের গায়ে। তুমি আমার দিকে তাকিয়ে গেয়েছিলে, “শুন লো শুন লো বালিকা….”। আমি খুব হাসছিলাম।
কতগুলো বছর আমরা কাছাকাছি থেকে একসঙ্গে বড় হয়ে উঠেছিলাম ভাবিনি কোনোদিন যে, এমন একদিন হবে যখন দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, বছরের পর বছর আমাদের দেখা হবে না। শুধু অনুভূতিতে শিশির বিন্দুর মতো স্নিগ্ধ, শান্ত আর উজ্জ্বল থাকবো আমরা।
তোমাকে লেখা এই পত্র তোমার হাতে পৌঁছবে কেমন করে জানি না। তোমার কোনো ঠিকানাই নেই আমার কাছে। তোমার সঙ্গী সাথীদের কত জিজ্ঞাসা করেছি সবাই বলেছে দেবো। আমিও বাড়ি ফিরে এসেছি, কারোর সঙ্গে যোগাযোগ আর তো সেভাবে নেই, দেখি কোথায় পাই।
দূরের বন্ধু হয়েই থেকে গেলে তুমি। জীবনের পথ তোমার মসৃন হোক। আমি নূতন আভরণে পুলকিত প্রাণে চলে যাবো নূতন জীবনের অভ্যর্থনা করতে। নিয়ে যাবো সবকিছু যা আমার আপন৷ আমার দিনরাতের, সব কাজের আর অকাজের মাঝে তোমার ছায়া থাকুক আমার জীবন জুড়ে। সুখের ব্যথা হয়ে ঝরে পড়ুক তোমার আশীর্বাদ।”
চিঠি পড়া শেষ করে বাণী চুপ করে রইলো অনেকক্ষণ। মনে মনে ভাবলো, ঠাকুমাকে, সে ঠাকুমা ভেবেই জীবন কাটিয়ে দিল। ঠাকুমার মধ্যেও যে একটি কিশোরী মেয়ে ছিল সে কথা কেন কোনোদিন ভাবতে পারেনি সে?
দেবার্পণ অনেকদিন পর একদিন দেখা করতে এল। বাণীর সব কথা শুনে সে বলতে থাকলো,
অনেক ঘটনা আমাদের জীবনে ঘটে, যার জন্য আমরা দায়ী নই, তবু দায় কাউকে না কাউকে নিতেই হয়। ভালোবাসা বা প্রেম যে শেষ পর্যন্ত মিলনের মধ্যেই শেষ হবে তার কোনো মানে নেই। দেবার্পণ উঠে যাবার সময় বাণী তার হাতে ঠাকুমার বোনা সেই বেগুনী রঙ–এর মাফলারটি দিয়ে দিল।
ফিরে আসার পথে দেবার্পণের মনে হল, সব কিছুই থাকেনা, জীবনের পথে চলতে চলতে কিছু জিনিস হারিয়ে যায়, কিছু জিনিস থেকে যায়।
বাণীকে যে কথা কোনোদিন বলেনি দেবার্পণ, আজও তা বললো না। তা হল তার নিজের দাদু আজও বেঁচে আছেন। বিখ্যাত ডাক্তার শরৎ মুখোপাধ্যায় ছিলেন চিরকুমার। দাদুর বাবা হঠাৎই মারা যান কোনো কঠিন রোগে। চারটি বোন এবং দুটি ভাইয়ের দায়িত্ব তার উপরেই বর্তে ছিল, সংসারের দায়দায়িত্ব তাকে নিজেকে সংসারী করতে পারেনি কোনোভাবেই। সকলকেই কোনো না কোনোভাবে প্রতিষ্ঠিত করে দিয়েছেন তার দাদু। আজ তিনি দুর্বল হয়েছেন, অশক্ত হয়েছেন। এই দাদুর কাছেই মানুষ হয়েছে দেবার্পণ। যে হাসপাতালে দাদু কর্মজীবন কাটিয়েছেন, সেখানেই এক সদ্য পাশ করা ডাক্তার যোগদান করেছিলেন, নাম তার সুনন্দা। নিজের মেয়ের মতো এক অচ্ছেদ্য বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন দাদু, সুনন্দার জীবনের সঙ্গে। সুনন্দা দেবার্পণকে তার জন্মের পর শরৎ মুখার্জীর হাতে রেখে কি ভরসায় আত্মহত্যা করেছিল সে কথা দেবার্পণের জানা নেই। শরৎ মুখার্জী কিভাবে তাকে ডাক্তারি পড়িয়েছিল তাও সে জানে না। দেবার্পণের জীবনে বাবা–মা–বন্ধু সবই শরৎ মুখার্জী।
দেবদ্যুতির কথা দাদুর কাছে সব শুনেছে দেবার্পণ। দাদু বলে দিয়েছেন “পুরুষ মানুষের জীবনে কর্মই তার পরিচয়, পিতৃ পরিচয় নিশ্চই দরকার তবে এখন সেকথা ভুলে গিয়ে, সেবাই হোক তোমার জীবনের ব্রত।” এই দাদুই তার জীবনের সব। মানুষ হওয়া এই অকৃতদার লোকটির হাত ধরে। দেবার্পণকে সংসারী করে দিয়েছেন দাদু কিন্তু একই সঙ্গে একটি কর্মময় জীবনের দীক্ষাও দিয়েছেন।
দেবার্পণ ভাবলো কালের নিয়ম সকলের জন্যই সত্যি। নিজের মনের ভিতরে তার অনেক কথার খেলা চলতে থাকলো। বাণীকে সে কিছুই বলেনি বলবেও না। দাদুকেও সে কোনোদিনই কিছু বলবে না। বলার হলে আগেই বলতো। সব কথা সবাইকে কখনই বলতে নেই।
বাড়ি ফিরে দাদুকে দেবার্পণ বাণীর দেওয়া মাফলারটি দিলো। দাদু খুশি হয়ে বললো,
এই রঙ আমার তো খুবই পছন্দ।সেই জন্যই নিয়ে এলাম। আমার এক বান্ধবী উপহার দিয়েছে তুমি ব্যবহার কর।
শরৎ মুখার্জী মাফলারটি গলায় রেখে আয়না দেখছেন শিশুর সরলতায় খুশি মুখে।
দেবার্পণ ভাবলো ফুলের স্বভাবই হলো অন্যকে আনন্দ দেওয়া সুরভিত করা এবং অঞ্জলি দেওয়া।
–সমাপ্ত
So nice.
All the posting in eve of MA DURGA PUJO are fantastic.
Best wishes and Subho Durga Pujo 2023 to all artists, painters, writters and ofcourse our Chief Editor GZA WEBSITE.