প্রাণজি বসাক এর কবিতা

কে তবে মুছে দেয় অংক //


সংখ্যা জুড়ে জুড়ে কত হিসেব কত অংকের ফলাফল

জীবন জুড়ে কত অংকের আস্ফালন কত না ব্যবধান

সাদা খাতায় পৃষ্ঠা জুড়ে সিঁড়ি ভাঙা অংকের মসৃণতা

মানুষের কাছে মানুষ শেখে সাঁতার জলের ভারসাম্যে

পুকুরের বুকে ভাসে আকাশ গভীর তলে ঘন সমাহার

বুদবুদ ভেসে উঠে খবর দেয় সরল জীবন কত কঠিন

অজানা সফরে বাতাস ঘোরে ফেরে মায়াময় সংসারে

অংক ভুলে কেউ কেউ এসে বসে নামতা পড়ার ক্লাসে

কীপ্যাডের বোতাম টিপে টিপে বানানো অংকের বাড়ি

সন্ধ্যায় বসে আখড়া সুর তুলে গাও জীবনের জয়গান

সময়ের সামান্য ব্যবধানে হারিয়ে যায় নিমিত্ত কারণ

তারপর সাত সাতটি মিনিট যখন আপন হতে থাকে

কখনও দাঁড়াবার অছিলায় দাঁড়িয়ে থাকো মনপোড়া

ঘরবাড়ি করে করে উড়ে যাও সাতসমুদ্র পেরিয়ে যাও

দুজনেই চুপচাপ দেখি একই নক্ষত্রের মুক্ত পদাবলী

নরম হতে হতে পৃথিবীর হাওয়াবাতাস কিছুই থাকেনি

অখন্ড কবিতাপাঠে কত সুর বাজে কাঁসরঘণ্টা বাজে

উড়ো উড়ো ভাব নিয়ে ওড়ে বাংলাভাষা একুশশতকে

মানুষ বুঝতে পারে আপন ভাষা কোথায় কোন বুকে

প্রকৃতিপাঠে মন্দির মসজিদে নিগূঢ় এক একান্ত ভাষা

কতটা দূরে দাঁড়ালে কতটা নিরাপদ এমন মাপজোখ

সবার চোখে চোখে তবু্ আপদ যেন জেদ চেপে ধরে

ঘাপটি মেরে বসে থাকে সুযোগ পেলেই ঝাঁপিয়ে পড়ে

নিত্য অনিত্য সব কিছুই আপদের অদৃশ্য জালে বাঁধা

অদ্ভুত একটা রঙ গড়িমসি করেও ফুটে ওঠে এবেলা

সূক্ষ্ম যাতায়াত থেকে যায় অনুক্ষণ দীর্ঘসূত্র এক টানে

যাবো যাবো করেও যাওয়া হয় না সান্ধ্যকালীন ভ্রমণে

একটা ভয় ধীরে ধীরে একটু একটু ধরে পল অনুপলে

মানুষের চোখে কতনা গভীরতা কতনা সুন্দর দৃষ্টিতে

নজর রাখে নক্ষত্রের মতো মিষ্টি হাসির জগতসংসারে

এক উড়ান থেকে অন্য এক উড়ানে তবু কথা হয় না

যাতায়াতের রুটে কতনা মায়াময় বাহানা – তবু ফেরে

না জানি আস্তাবলে দূরন্ত ঘোড়া বাতাসের উল্টোপথে

আজব গল্পগুলি জন্মান্তরে বিশ্বাসী গ্রহান্তরে পরবাসী

মঙ্গলের লালমাটিতে ফলেছে ফসল তোমার অনুগ্রহে

পাহাড়ের কাঁকরে ফুটেছে রঙিন ফুল ভাষাময় ভাষায়

কথাদের মাঝে কোন আজগুবি হাওয়া নয় বোধগম্য

যা তাতো তোমারই রচনা নিজ নিজ প্রয়াসে অক্ষরে

বিশ্বময় মানুষের পা পড়ে অতিক্রম করে দিগন্তজুড়ে

বিস্ময় জয় করে মানবিকবোধ প্রেম আর ভালোবাসা

তাকে রেখে দূরে সরে যাবার প্রশ্নই ওঠে না – একান্তে

আপন – মিশে যেতে যেতে একদম মিশে যাই সলিলে

একটা জন্মগন্ধ বুকে জড়িয়ে বেঁচে আছি – ভারতবর্ষ

শরীরে বিঁধে আছে কাঁটাতার বুকে অনিবার্য রক্তক্ষরণ

আজানের সুরে লটকে থাকে ঈদের বাঁকা চাঁদ আবহ

শুভেচ্ছা বিনিময় শেষে উৎসবে মেতে ওঠে লালন মন

মাটির প্রতিমা আর মাটির মানুষে কিবা করি ফারাক

বিসর্জনে সব মান অভিমান ধুয়ে মুছে যায় নিরাকার

আসমুদ্রহিমাচল মানুষের ঢলে মহামন্ত্র জয়তু ভারত

গঙ্গাযমুনাসরস্বতী দেহমনে বয়ে চলে অনন্ত মহিমায়

কে তবে মুছে দেয় রোজকার দিনলিপির পান্ডুলিপি

বারান্দা থেকে গড়িয়ে নামে রোদের বাহার প্রতিদিনই

ঠাহর পেতে পেতে উঠে যায় আঙিনার মৌজ আমেজ

তোমার দৌড়ঝাঁপ যেন অযথা ক্রিয়াপদ বাক্যরচনায়

আর বুঝি হলো না- সমন্বয় কমিটি উঠে দাঁড়ায় মাঝে

বাকবিতন্ডা ঘোরে ফেরে মুখে মুখে এবং বেড়ে ওঠে

কিশলয় দিন আর দশটা দিনের মতই রহস্যময় ঘেরা

পাঁজি দেখে ওঠে বসে বাড়ির মেজ-বৌ অনন্ত মহিমা

পথের মানুষকে ডেকে চেনায় গৌরবর্ণা কাহাকে বলে

মানুষেরা কয় আগুনের কি যায়-আসে পোড়ায় যখন

*******