
-কি রে, কিছু বল?
- কি বলব, খানাখন্দ সামলাতে সামলাতেই ব্যস্ত।
- ছোট ছোট করে লাফ দিয়ে চল না। ট্রেনিংয়ে শেখাল মনে নেই?
- সে চেষ্টাই করছি। কিন্তু জোরে লাফ দিতে গেলে ভয় করছে গ্যাস বেলুনের মত উড়ে না যাই।
মেয়েটি ফিক করে হাসল। ছেলেটি বলল,খুব একটা অন্যরকমও কিছু লাগছেনা বুঝলি। বন্ধুদের সঙ্গে একবার লাদাখ গেছিলাম, সেখানকার ল্যান্ডস্কেপও অনেকটা একই রকম।
মেয়েটি উদাসীন ভাবে বলল,” তা হবে। লাদাখে আমি যাইনি।”
কিছুক্ষণ চুপচাপ পাশাপাশি হাঁটা। একসময় মেয়েটি বলল, যাই বলিস, বেশ একটা ফিলিং মত হচ্ছে। কতদূর চলে এসেছি ভাব।
ছেলেটি স্পেসস্যুটে ঢাকা মাথা নাড়ার চেষ্টা করে বলল, “তা ঠিক। বিশেষ করে প্রথম পা রাখার পর হচ্ছিল। তবে এখন একটু বোর হচ্ছি। কেউ কাউকে দেখতে পাচ্ছিনা, কথা যেন অনেক দূর থেকে আসছে, দুটো ভূতের মত পাশাপাশি হেঁটে যাচ্ছি।”
- তুই আর্থার সি ক্লার্কের সেই গল্পটা পড়েছিস?
- কোনটা?
- সেই যে, পৃথিবী থেকে অভিযাত্রীরা এসে দেখছে চাঁদের বুকে অদ্ভূত একটা স্ট্রাকচার কারা যেন অনেকদিন আগেই বানিয়ে রেখে গেছে।
- ছেলেটি স্বস্তির নিশ্বাস ফেলল। এটা সে পড়েছে। বলল, “কে না পড়েছে? কিন্তু সে কথা কেন? “
- ভাবছিলাম.. আমরাও যদি ওরকম কিছু দেখতে পাই.
- তুই ক্ষেপেছিস? এখানে আগে অন্তত গোটা দশেক যান নেমেছে। জায়গাটা ভাল করে ম্যাপ পর্যন্ত করা আছে।
মেয়েটি একটু দমে গিয়ে বলল,”তা বটে। “
আবার হন্টন। দুজনেই সময় কাটান'র জন্য প্রসঙ্গ খুঁজছে।
মেয়েটি বলল,”এত লোক থাকতে আমাদেরই বাছল কেন ভেবে দেখেছিস? ”
- কিছু ক্রাইটেরিয়া মিলে যাবার পর লটারি করে নিশ্চয়ই। আমরা ত আর. স্পেসক্র্যাফট* চালাব'না।
- কিন্তু কাপল কেন?
- হয়ত অচেনা পরিবেশে বন্ধু/ বান্ধবী সঙ্গে থাকলে মনের উপর চাপ কম থাকবে ভাবছে। এরকম ত আগেও কেউ কেউ এসেছে শুনেছি।
কেউ দেখছেনা জেনেও মেয়েটি স্পেসস্যুটের মধ্যেই একটি রহস্যময় হাসি দিল। বলল, ওসব নয় রে ঘোঁচু।
আসলে এখানকার পরিবেশে প্রেম-ভালবাসা ব্যাপারটা টেঁকে কিনা যাচিয়ে দেখতে চাইছে।
- ছেলেটি একটু ভেবে বলল, হতে পারে।
মেয়েটি চাপা গলায় বলল, হাঁদারাম।
|
ছেলেটি চুপ করে গেল। হাঁদারাম শব্দটি অবশ্যই প্রেমব্যঞ্জক, কিন্তু এখন তার ঠিক পছন্দ হলনা। তার মুখ দেখা গেলে বোঝা যেত সে বদলা নেবার সুযোগ খুঁজছে।
একটু পরে সে বলল, হ্যাঁরে এখন কি আর কারও নামার কথা?
- না ত।
- মনে হল দূরে ছায়া মত কেউ চলে গেল।
মেয়েটি চমকে উঠে তাকাল। ছেলেটি চিন্তিত মুখে বলল, দ্যাখ, সেই আর্মস্ট্রং থেকে শুরু করে কতজন এসে গেছেন। অনেকে আর বেঁচে নেই।
মেয়েটি বিরক্তমুখে বলল, বোর করিসনা ঘোঁচু। তাঁরা ভুত হয়ে এখানে এসেছেন বলতে চাস?
- সেটাই ত স্বাভাবিক না? চাঁদে এসেই ত ওনারা বিখ্যাত হয়েছেন।
- মেয়েটি কটমট করে তাকাল। কিন্তু কাজ হচ্ছে দেখে ছেলেটি এখন উৎসাহ পেয়ে গেছে। একটু পরে সে আঙুল দিয়ে নীচে কিছু দেখিয়ে বলল, ওই দ্যাখ।
নীচে পরিষ্কার মানুষের পায়ের ছাপ। পরপর চলে গেছে। মেয়েটি আঁৎকে উঠল। তারপর কিছু মনে পড়ায় সে হেসে ফেলে বলল, এটা বাড়াবাড়ি করে ফেললি। ট্রেনিংয়ে বলেছিল। এখানে হাওয়া নেই বলে পায়ের ছাপ কখনও মোছেনা।
ছেলেটি বলল, তবে যাই বলিস, আমার কিন্তু এখানে প্রেম-ফ্রেম আসছেনা। সব মিলিয়ে জায়গাটা ঠিক প্রেম করার মত নয়।
মেয়েটি বলল, তা বটে। সাধারণত পাশাপাশি কিছুক্ষণ হাঁটলে আমার একটু- আধটু প্রেম পায়, এখানে সে রকম কিছু হচ্ছেনা।কয়েক লক্ষ মাইল দূরে মনিটরিং রুমে বসে বৈজ্ঞানিকরা মুখ চাওয়া চাওয়ি করলেন। বয়োজ্যেষ্ঠ একজন বিরক্ত ভাবে মাথা থেকে হেডফোন খুলে ফেলে বললেন, এই নিয়ে চারবার হল। পৃথিবী দেখলেই এরা পাগল হয়ে যায়। ভীড়, দূষণ আর লড়াই-ঝগড়া ছাড়া এখানে আছেটা কি?
সবাই চুপ করে রইল। শুধু এক তরুণ বৈজ্ঞানিক মাথা চুলকে বললেন, স্যার একটা কথা বলব? ভাল-মন্দ যাই হোক, এই গ্রহটা আমাদের জিনে ঢুকে গেছে। এখানেই সবাই একটু মিলে-মিশে মানিয়ে-টানিয়ে থাকা যায়না?
বিশ্বদীপ সেনশর্মা
Biswadip Sensharma Biswadip is an engineer, now settled in Mumbai with his family. He loves to travel and write and also does a bit of social work. His stories have been published in Anandabazar ( Rabibasaryo), Sananda, Unish- kuri and other magazjnes. Thesedays, he writes mostly on Sci-fi and related generes. "Bhoyer Vaccine ", a collection of his recent stories , has been published by a reputed publisher in Kolkata.( Those interested can collect from the link below)
Collect the book here → joydhakbooks.in
Explore more tales of imagination, emotion, and human connection beyond the stars.
Join us in promoting cross-cultural dialogue, preserving heritage, and fostering global collaborations through art, literature, music, and festivals.