রাজার রাজা – Arunavo Roy

কি সব সময় ছিল!

কলম্বাসকে রানী ইসাবেলা পাঠালেন ১৪৯২ সালে ভারতবর্ষ আবিষ্কার করতে।আরবদের কাছ থেকে ইন্ডিয়ার অতুল সম্পদ ভায়া মিডিয়া পেতে কিঞ্চিৎ অসুবিধা হচ্ছিল ইউরোপের।গল্পকথা নয়,বিচিত্র রহস্য নয় সরাসরি ইন্ডিয়াকে জানার অদম্য কৌতূহল স্পেন সহ ইউরোপের বাকী নৌবাহিনী -দক্ষ দেশগুলিকে ঠেলতে ঠেলতে নিয়ে এল ইন্ডিয়ায়।কলম্বাস ঐতিহাসিক ভুলে অবশ্য আমেরিকা চলে গেছিলেন।ভাস্কো-ডা-গামা কিন্তু সে ভুল করেন নি।পর্তুগিজ নৌবহর নিয়ে কালিকটে এলেন ১৪৯৮ সালে।১৫১০ সালে গোয়া অধিকৃত হল।তখন সেটিই ইন্ডিয়া পর্তুগিজদের কাছে।ইতালীয় পর্যটক মানরিকের ভ্রমণ কথা সেই বিবরণই দেয়।গল্পকথায় সে সময় বঙ্গদেশ স্বর্ণপ্রসূ।এখানকার শস্য,বস্ত্রশিল্প,এখানকার মানুষদের নৌ বিদ্যায় পারদর্শীতা,আরো প্রাচীনকাল,গুপ্তযুগের সময়ে বঙ্গের বাণিজ্য উদ্যম এদেশের মানুষদের ধনশালী করে তুলেছিল।ফলত লোভের উৎস হিসেবে বঙ্গদেশ ষোড়শ শতক থেকেই ইউরোপের বিশেষ আকর্ষণ।বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে এসে দেশ শাসনের স্পৃহা সব জাতিরই ছিল;কিন্তু ইংরেজ কিছু সময়োপযোগী চুক্তি এবং সন্ধি করে বাকিদের থেকে এগিয়ে গেল আর ১৭০৭ সালে ঔরঙ্গজেবের মৃত্যুর পর দুর্বল মোগল শাসনের সুযোগে ইংরেজ হল অভিজাত লুঠেরা।মাদ্রাজে ফরাসিদের হারিয়ে বঙ্গে পলাশী যুদ্ধ ক্লাইভের নেতৃত্বে জয় করে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি জোরদার খুঁটি গাঁথল বাংলা বিহার উড়িষ্যায় ১৭৫৭ সালে।ওয়ারেন হেস্টিংস ১৭৭৩ সালে ভাইসরয় হলেন।তার ঠিক এক বছর আগে কলকাতা থেকে ৭০ কিলোমিটার উত্তর পশ্চিম এ হুগলী জেলার রাধানগর এ জন্ম নিলেন রামমোহন রায়।

[4/9, 11:53] Arunava Roy: রামমোহন রায়ের জন্ম ১৭৭২ সালের ২২ শে মে। এ নিয়ে প্রচুর তর্ক আছে কিন্তু অগ্রমান্য এই দিনটি নিয়েই আমরা আপাতত সন্তুষ্ট থাকি। পিতার নাম রামকান্ত রায়, মা তারিণী দেবী।’রায় ‘ উপাধিটি এই বংশের প্রাপ্তি। কারণ প্রপিতামহ কৃষ্ণকান্তের পদবী ছিল বন্দ্যোপাধ্যায়। মোগল সম্রাট ফারুকশিয়ারের বাংলার সুবেদারের আমিন ছিলেন তিনি। জমির সীমা পরিমাপের
[4/9, 11:53] Arunava Roy: কাজে যুক্ত থেকে যে কোন জমিখণ্ডের সীমা নির্ধারণে রায় দিতেন তিনি। তাই রায় উপাধি প্রাপ্তি। রামমোহন সেই কারণেই এমন একটি বংশে জন্মগ্রহণ করেন, যাঁরা অর্থশালী,প্রতিপত্তিময়,বিদ্বান এবং যুগের যাত্রী।

একটি বালকের ৯ বছর বয়সে পাটনা গমন এই যুগের যাত্রী কথাটির প্রমাণ।পাটনায় তিনি আরবি শেখেন আর কাশী তে সংস্কৃত। আর রাধানগর এর কাছেই পালপাড়া গ্রামে ছিলেন নন্দকুমার বিদ্যালঙ্কার বা হরিহরানন্দ তীর্থস্বামী।ইনি এই বালকের অঙ্কুর বয়সেই রোপন করেছিলেন আধ্যাত্মিক চিন্তার বীজ।

১৭৬১ সালে শিল্পবিপ্লবের সূচনা হয় জেমস ওয়াটের বাষ্পীয় ইঞ্জিনের আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে।

জর্জ ওয়াশিংটনের নেতৃত্বে আমেরিকা স্বাধীনতা পেল ১৭৭৬ সালে।১৭৭৬ সালেই অ্যাডাম স্মিথ লিখলেন Wealth of Nations। ফরাসি বিপ্লব ১৭৮৯ সালে। এই পরিমন্ডলে ১৭৭২ সালে বাংলার এক নিভৃত গ্রামে জন্ম নিয়ে কি করে আন্তর্জাতিকতার পাঠ পেলেন রামমোহন সেটি আমাদের কাছে পরম বিস্ময়ের। জ্ঞান যেথা মুক্ত, সেথা গৃহের প্রাচীর যেমন চুর চুর করে ভেঙে পড়ে, রামমোহনের মনোভূমিও যেন প্রান্তমুক্ত হল ১৫ বছর বয়সে গৃহত্যাগের কারণে। তাঁর নিজের ভাষায় ‘পৃথিবীর সুদূর প্রদেশগুলিতে, পার্বত্য ও সমতলভূমিতে ‘পর্যটন করে। এই সময় তিনি অনেকগুলি বিদেশী ভাষা আয়ত্ব করেন। ভাষার সঙ্গেই আসে সেই অন্য দেশটির মুক্তচিন্তা, সেখানকার সংস্কৃতি। আসে রাজনৈতিক সীমারেখা মুছে দিয়ে এক নতুন আন্তর্জাতিক ভাবনা। গোটা পৃথিবী তখন নিজের দেশ মনে হয়। পরাধীন দেশে বাস করে এ অনুভূতি হয়ত তাঁকে কোন রিলিফ দিয়েছিলো।

মোগলযুগের অবসান পর্বে আর ইউরোপিয় কাঠামোর সঙ্গে ভারতের পরিচয় পর্বে রামমোহনের আবির্ভাব। একটি বিদ্বান ও বিষয়ী পরিসরে তাঁর জন্ম। বিষয় বিষ একথা সমধিক প্রচলিত। এই বিষয় কারণে নানাবিধ গন্ডগোলের মধ্যে পড়ে ১৮০০ সাল নাগাদ রামমোহনের পিতা রামকান্ত এবং জেষ্ঠ ভ্রাতা জগমোহন যথাক্রমে বর্ধমান ও মেদিনীপুর জেলে কারারুদ্ধ হন। এর আগে ১৭৯১ সালে রামমোহনের পিতা রাধানগর ছেড়ে লাঙ্গুলপাড়া গ্রামে বসবাস শুরু করেন। পিতার বিস্তৃত জমিদারী রামমোহন এবং অন্য ভাইয়েরা মিলে তদারক করতেন।১৭৯৬ নাগাদ পৈতৃক সম্পত্তি হিসেবে কলকাতার জোড়াসাঁকো অঞ্চলে জমি, বাগান, বাড়ীর অধিকারী হন তিনি। তখন তাঁর বয়স ২৪। আর এর মধ্যেই তিনি প্রাচ্যর কিছু দেশে পরিভ্রমন করে এসেছেন। ফলে জগৎ জুড়িয়া এক জাতি আছে সে জাতির নাম মানুষ জাতি, এই উপলব্ধি তাঁর হয়ে গিয়েছিল।

আবার অন্যদিকে রামমোহনের সেই সময়েই কোম্পানির কাগজ কেনা-বেচার ব্যবসা ছিল। অর্থাৎ এখন যে শেয়ার কেনার ব্যবসায়ে মধ্যবিত্ত বাঙালির হৃৎকম্প হয়, সেই ১৮০১ সাল নাগাদ রামমোহন এই ঝুঁকিপূর্ন ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত হওয়ার সাহস রাখতেন। একটি তথ্য বলছে ৭.৩.১৮০৩ থেকে দু -মাস রামমোহন দেওয়ান হিসেবে কাজ করেছেন যশোহর জেলায় কালেক্টর উডফোর্ডের। অর্থাৎ বিষয়বুদ্ধি, ভাষা পারদর্শীতা সবেতেই রামমোহন তাঁর পরিবারের অন্যদের থেকে অগ্রণী ছিলেন। ফলে পরিবারের অন্যরা ভাগ্যবিপর্যয়ে পড়লেও রামমোহন তাঁর পেশা বৈচিত্রর কারণে নিজেকে বিপন্মুক্ত রাখতে পেরেছিলেন।১৮০৩/০৪ সালেই একেশ্বরবাদ বিষয়ক প্রথম রচনা আরবি ও ফার্সি ভাষায় ‘তুহফাত -উল -মুবাহ্ হিদ্দিন ‘ প্রকাশিত হয়। সিভিলিয়ন উইলিয়াম ডিগবির দেওয়ান হিসেবে তাঁর কর্ম প্রশাসন উল্লেখযোগ্য। সময়কাল ১৮০৫-১৪। ইংরেজের অধীনে কাজ করার পরও আত্মমর্যাদা রক্ষায় তিনি ছিলেন অকুণ্ঠ।১২.০৪.১৮০৯ সালে ইংরেজিতে তিনি একটি অভিযোগপত্র লেখেন লর্ড মিন্টোর কাছে। এটিই তাঁর প্রথম ইংরাজি রচনা।১৮১৪ সাল থেকে তিনিস্থায়ী রূপে কলকাতায় বসবাস শুরু করেন এবং ধীরে ধীরে কলকাতার মেট্রোপলিটন মনন তাঁকে সমৃদ্ধ করে। জীবন যাপন এবং খাওয়া দাওয়ায় তিনি ছিলেন চলতি হাওয়ার পরিপন্থী এবং গোঁড়া হিন্দু সমাজ তাঁকে যবন বলতেও দ্বিধাবোধ করে নি।

১৮০৩ সালে পিতা রামকান্তের মৃত্যুর পর অনিবার্য কারণেই রামমোহনের হুগলীর গ্রামীণ পরিবেশের সঙ্গে দূরত্ব বাড়তে থাকে। অন্য ভাইদের থেকে রামমোহন কেন সমৃদ্ধশালী, এই পারিবারিক অবিবেচক ও সংস্কারাচ্ছন্ন মানসিকতার শিকার হন তিনি। বিষয় সম্পত্তির কারণেই মা তারিণী দেবীর সঙ্গে রামমোহন এর বিরোধ বাড়ে। তারিণী দেবী পুরী চলে যান এবং জগন্নাথ মন্দিরে ঝাঁট দিয়ে দু বছর পর মৃত্যু বরণ করেন। এই তারিণী দেবী ছিলেন বৈষ্ণব বংশের সন্তান আর রামকান্ত, রামমোহন এর বাবার বংশ ছিল শাক্ত। ধর্মীয় গোঁড়ামি এবং বিরোধের প্রত্যক্ষ দর্শী ছিলেন রামমোহন তাঁর শিশুকাল থেকে। তাই হয়ত সীমারেখার বিরোধী ছিলেন তিনি। ধর্ম হোক শুধুই মানবধর্ম এই শিক্ষা তিনি পেয়েছিলেন তাঁর বেদান্ত চর্চার গুরু শৈশবের হরিহরানন্দ এর কাছ থেকে। কলকাতা এসেই মুক্তমন চর্চার অনুসারী হয়ে বেদান্ত গভীর ভাবে অনুধ্যান করেন। ধর্ম, ভাষা, সমাজ, রাষ্ট্র ও সাহিত্য চর্চার উন্নতি সাধনে নিয়োজিত করেন নিজেকে।১৮১৫-১৯ এই সময়ে তিনি বেদান্ত সূত্র এবং তৎসমর্থক উপনিষদের বাংলা ভাষায় অনুবাদ প্রকাশ করেন। বাংলা ভাষায় বেদান্ত চর্চার তিনিই প্রথম ভাষ্যকার।১৮১৪ সালে কলকাতায় এসেই পরের বছর ১৮১৫ সালে তাঁর প্রতিষ্ঠা ‘আত্মীয় সভা ‘।১৮২৮ সালে এই আত্মীয় সভাই রূপ পাল্টে ‘ব্রাহ্ম সমাজ ‘।২০.৮.১৮২৮ সালে প্রিন্স দ্বারকানাথ কে সঙ্গী করে এই সমাজের প্রতিষ্ঠা।

ইউরোপিয় রেনেসাঁও কিন্তু ইউরোপিয় লুন্ঠনের হাত ধরে প্রাচ্যে এসেছিলো। এটিও কম কথা নয়। বাঙালি সমাজ নবকৃষ্ণ দেবের দেওয়ানী থেকে শুরু করে পরে পরে দেওয়ানী বৃত্তির মধ্য দিয়ে একই সঙ্গে দেশজ হিসাব নিকাশ পদ্ধতিতে যেমন বিদেশী প্রভুদের চমকিত করেছিল ঠিক তেমনই বিদেশী সভ্যতার উদারনৈতিক চিন্তাধারার পরিচয়ও পেয়েছিল। বাইবেল যে ধর্মীয় উচ্চারণে এ দেশে মানুষের কাছে পৌঁছাতে চাইছিলো পাদ্রীদের সমবেত প্রচেষ্টায়, সেই বাইবেলই রামমোহন দেশের মানুষের সঙ্গে পরিচিত করালেন যীশুর উপদেশগুলির সঠিক ব্যাখ্যায়। সেখানে অলৌকিকত্বের কোন স্থান ছিল না। অধিকাংশ পাদ্রী সততই ক্রুদ্ধ হলেন কিন্তু কিছু মানুষ তাঁর দলভুক্ত হন। যেমন পাদ্রী উইলিয়াম অ্যাডাম। মূল ভাষায় বাইবেল পাঠের জন্য রামমোহন এ সময়ে হিব্রু ভাষাও শেখেন। এই অন্তহীন জ্ঞান চর্চার সক্রিয় সন্ধান এর নেশা রামমোহন কে আমাদের কাছে করে তোলে আরো শ্রদ্ধার আরো ভালবাসার।

১৮২১—ব্রাহ্মনিকাল ম্যাগাজিন ব্রাহ্মণ সেবধি
১৮২১–বাংলায় সম্বাদ কৌমুদি
১৮২২–ফার্সি তে মীরাত -উল -আখবার
এরমধ্যে ব্রাহ্মনিকাল ম্যাগাজিন দ্বিভাষায় বাংলা এবং ইংরাজি তে।
রামমোহন এর ৫৩ বছর বয়সে যে প্রজ্ঞার সন্ধান আমরা পাই সেটি অবশ্যই গাঢ় প্রাপ্তমনস্ক। এই সময়ই ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাংলার জাগরণে ভীত হয়ে সংবাদপত্রের স্বাধীনতার উপর আক্রমণ করে।১৮২৩ সালে প্রতিবাদস্বরূপ ফার্সি পত্রিকাটি তিনি বন্ধ রাখেন। সেই সময়ে যা কল্পনা করাও যায় না ১৮৩০ সালে ব্রাহ্ম সমাজের মন্দিরে উপাসনার জন্য সর্ব ধর্ম সম্প্রদায় মিলিত হত এই কলকাতায় শহরে।

সতী প্রথা সম্পর্কে জনশ্রুতি, নিজের বৌদির সহমরণ তিনি প্রত্যক্ষ করেন কৈশোরে। এর বীভৎসতা তাঁকে কি পরিমাণ বিচলিত করে তার প্রমাণ প্রায় তিরিশ বছর পরে তিনি উঠে পড়ে লাগেন এই অমানবিক প্রথাটি বন্ধ করতে। তৎকালীন ইংরেজ কর্তৃপক্ষর সঙ্গে প্রীতি তাঁকে এই কাজটি করতে সাহায্য করে। হিন্দু শাস্ত্রের প্রমাণ দাখিল করে তিনি দেখান হিন্দু শাস্ত্রেই সহমরনের কোন বিধান নেই।৪.১২.১৮২৯ সালে লর্ড বেন্টিংক সতীদাহ প্রথা বিধি বহির্ভুত বলে ঘোষণা করেন। রামমোহনকে এই কারণে প্রাণ সংশয়ের হুমকি পর্যন্ত দেওয়া হয়। প্রসঙ্গত বলা অনুচিত হবে না যে রামমোহন দৃপ্ত, সতেজ, বলশালী, প্রতাপময় এক পুরুষ ছিলেন। সঙ্গে প্রহরী নিয়ে তিনি চলাফেরা করতেন, নিজেও কম দুঃসাহসী ছিলেন না।

বেদান্ত, উপনিষদ সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান উপলব্ধি করার পরও তাঁর মনে হয়েছিল পরবর্তী প্রজন্মকে সমসময়ের চিন্তাধারায় নিয়োজিত করার প্রয়োজন আছে। তাই দরকার ইংরেজি শিক্ষা।১১.১২.১৮২৩ সালে তিনি স্থাপন করেন এংলো হিন্দু স্কুল।

৬১ বছরের পরিপূর্ন জীবনে রামমোহন যুগের যাত্রী হয়েও যুগের থেকে বেশ কয়েক কদম এগিয়ে ছিলেন। রাজনৈতিক মতে তিনি আন্তর্জাতিকতাবাদে বিশ্বাসী ছিলেন। বিশ্ব জোড়া সমসাময়িক রাজনীতির খবর তিনি রাখতেন। অস্ট্রিয় বাহিনীর নেপলস পুনর্দখলের প্রেক্ষিতে জানান :-
‘…. I consider the cause of Neapolitans as my own, and their enemies as ours’.
স্পেনের শোষণ থেকে দক্ষিণ আমেরিকার উপনিবেশগুলির মুক্তির সংবাদে উচ্ছসিত হয়ে তিনি নিজের বাড়ি আলোকসজ্জিত করেন ও বহু বন্ধুকে আপ্যায়ন করেন। সময়কাল ১৮২৩।

এই রামমোহনই আধুনিক বাংলা গদ্যের জনক। প্রায় ৩০ টি বাংলা গ্রন্থের তিনি লেখক। তাঁর ব্রহ্ম সংগীত,গৌড়ীয় ব্যকরণ সে সময়ে জনপ্রিয়।৩৯ টি ইংরেজি রচনার মধ্যে একটি আত্মজীবনীমূলক লেখাও আছে। প্রচুর শাস্ত্রের অনুবাদ তিনি ইংরেজিতে করেন। ধ্রুপদ সংগীতে তাঁর পারদর্শীতা অবিদিত নয়।

২৭.৯.১৮৩৩ সালে ইংল্যান্ডে ব্রিস্টল শহরে তিনি শেষ নিঃস্বাস ত্যাগ করেন। ঐ দেশেও তিনি গিয়েছিলেন দিল্লীর বাদশাহের দূত হিসেবে ‘রাজা ‘ উপাধি প্রাপ্ত হয়ে। কোম্পানি যেভাবে ভারতে তার রাজত্ব চালায় তার সম্যক ধারণা ইংল্যান্ডেশ্বরীকে জানিয়েছিলেন। মানবতাবাদী কিছু সংস্কার মূলক আইন এদেশের জন্য প্রচলন করতে পেরেছিলেন।

দূরদর্শনে রাজা রামমোহন রায়ের দ্বিসার্ধশততম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে তথ্যচিত্র নির্মাণের প্রচেষ্টা শুরু হয় ২০১৯ সালে। এরজন্য কলকাতায় রামমোহন এর বিভিন্ন বাড়ী, সংলগ্ন এলাকা, প্রতিষ্ঠিত গুণীজন এবং রাধানগর অঞ্চলে বেশ কিছু শুট করা হয়। পরে এডিট হবে এই ভরসায় ২০২০র এপ্রিল মাস নির্দিষ্ট হয়। অভাবিত ভাবে চলে আসে কোভিড ২০২০ সালের মার্চ মাসে। সব প্ল্যান চৌপাট।২০ শে মে আমফান। এডিট সম্পূর্ণ হলেও যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রায় ধংস।২১ শে মে মধ্যরাতে আচম্বিতে যোগাযোগ স্বাভাবিক হয়।২৩ মিনিটের তথ্যচিত্র টি যেন এক লহমায় দিল্লী পৌঁছে যায়।২২শে মে নির্ধারিত সময়ে দূরদর্শনের ন্যাশনাল চ্যানেলে সম্প্রচারিত হয়।
শ্রেয়াংসি বহুবিঘনানি।

রামমোহন রায়ের মতন এক অবিকল্প মানুষের কাছে তাঁর পরবর্তী প্রজন্ম আমরা কালের কপোলতলে নতজানু হয়ে এই প্রার্থনা করি :-

সংশয়বাদী হয়ে নয়, অচেনাকে চিনে চিনে যুক্তিবুদ্ধির প্রত্যয়ে আমরা যেন সমকালেই আগামীকাল বোঝার মতন দৃঢ় প্রত্যয় অর্জন করতে পারি বর্তমানের অস্থির সময়ে।

 

About the author

Arunava Roy,a retired Group A officer from Doordarshan had studied Economics in Santiniketan,Visva-Bharati commenced his career with ISI,Kolkata,worked as Statistician,Labour Dept. Govt of West Bengal joined Akashvani through UPSC in 1991.Worked at Agartala,Panaji,Kolkata,Port Blair AIR kendras.He experienced Tsunami 2004 as broadcaster.Later he worked for Marketing wings of Prasar Bharati.In 2016 Sri Roy joined Doordarshan kendra Kolkata as Head of Programme.He also looked after the East Zone.During this tenure Sri Roy was instrumemtal to augments the viewrrship of this PSB Channel manifold.He introduced the Live Bengali commentary of Puri Rathayatra.Sri Roy is associated with different Universities as guest lecturer on media sciences. Sri Roy retired from service on 30.09.2022.

রাজার রাজা – Arunavo Roy

3 thoughts on “রাজার রাজা – Arunavo Roy

  • April 15, 2023 at 2:52 pm
    Permalink

    অত্যন্ত ভালো লেখা। বলতে লজ্জা হচ্ছে, হুগলী জেলায় জন্মেও রাধানগর যাওয়া হয় নি আমার। এবার যাবো।

    Reply
  • April 16, 2023 at 11:47 am
    Permalink

    ” রাজার রাজা ” – আরো সুন্দর একখানি লেখা পেলাম আপনার কলমে। পঞ্চদশ শতাব্দী থেকে শুরু করে আমেরিকা ও ফরাসি বিপ্লবকে পটভূমি রেখে ভারতের জমিতে আগমন ঘটালেন রাজা রামমোহন রায়ের। মুক্তচিন্তা- বেদান্তচর্চা-একেশ্বরবাদ- সতীপ্রথা- ব্রাহ্মসমাজের মত সুবিশাল কর্মকাণ্ড এক ব্যক্তিতে কিভাবে সম্ভব? এর পর কোন মহান-জনকে পাবো।

    Reply
    • April 21, 2023 at 2:10 am
      Permalink

      অনেক কিছু জানলাম 🙏

      Reply

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *