A City, laid and built- Arunava Roy

তোমাদের করি গো নমস্কার

১৬৯০ সালের অগাস্ট মাসে জব চার্ণক গঙ্গা নদীর পূর্ব প্রান্তে বাণিজ্যপোতটি ভিড়িয়ে ছিলেন বাণিজ্যের উদ্দ্যেশেই। সেদিন তিনি হয়তো জানতেন না এই নৌ-ভিড়ানো নদীতট সংলগ্ন জনপদটি একদিন কল্লোলিনী হবে, জানতেন না পূর্বতটটি পশ্চিমতট থেকে তুলনায় ঢালু, জানতেন না পূর্বতটটির মাইল কয়েক পরেই বিরাট বিরাট জলাভূমি। ফলে মানুষের পরবর্তীকালে পৌর প্রয়োজনগুলি তুলনায় অনেক বেশী চ্যালেঞ্জিং হবে। কথায় আছে গঙ্গার পশ্চিমকূল, বারাণসীর সমতুল কিন্তু সে কথা তো জব চার্ণক বা তাঁর মতন বাণিজ্য-সিপাহীদের জানার কথা নয়। পূর্ণেন্দু পত্রী-র একটি লেখা কি করে কলকাতা হল খুব সহজে আমাদের ছোটবেলায় কলকাতার ইতিহাস নিয়ে আগ্রহ তৈরী করতে সক্রিয় ছিল। কলকাতায় জন্মে, কলকাতারই বিভিন্ন পাড়ায় থাকার সূত্রে, মধ্য কলকাতার স্কুলগুলিতে পড়ার কারণে একটা কথা এখনও মাথায় ঘোরে কেন তখন এত জল জমত বর্ষায় ? বঙ্কিম চ্যাটার্জী স্ট্রীট, সূর্য সেন স্ট্রীট জলমগ্ন হত, আর আমরা ৬ / ৭ ক্লাসে পড়া ছেলেরা উদ্দাম উল্লাসে কলকাতার পৌর অব্যবস্থাপনার সুযোগে জল সফর করার আনন্দ নিতাম চেটেপুটে। 

কলকাতা পুর সংস্থা তৈরী হয়েছিল ১৬৯০-এর অনেক পরে। প্রায় দু শতাব্দী পর। কিন্তু ১৭০১ সালেই কলকাতার লোকসংখ্যা আগের তুলনায় অনেকটাই বেড়ে যায়। তখনও মোগল শাসন চলছে। ঔরঙ্গজেব বেঁচে আছেন। নবাবের কাছে সনদ নিয়ে কলকাতায় বাণিজ্য করার সুযোগ পেয়েছেন ইংরেজ বণিকরা। কলকাতার আশাপাশে বিশেষতঃ হুগলীর নগরগুলিতে অন্যান্য বিদেশী বণিকেরা বাণিজ্য করে চলেছেন। এই সমস্ত নগরগুলির পশ্চাৎপট এলাকাগুলি থেকে যে কৃষিপণ্য, বাণিজ্যপণ্য আসত এবং সাধারণ গরীব মানুষদের অক্লান্ত পরিশ্রমে তৈরী নানারকম হাতের কাজ বিদেশীদের আকৃষ্ট করত, সেগুলিকে এই বণিকশ্রেণী রপ্তানি করতেন দেশে বিদেশে কলকাতা ছাড়া অন্যান্য বাণিজ্য কেন্দ্র আর বাণিজ্যকুঠি ছিল, চুঁচুড়া, ব্যাণ্ডেল, চন্দননগর, শ্রীরামপুর-এ, আর কি আশ্চর্য্য সবগুলিই কলকাতার অপর পারে অর্থাৎ যে ভৌগলিক সুবিধার কথা ইংরেজরা তখন বোঝেন নি, সেই একই সুবিধা অন্য বিদেশী বণিকেরা বুঝেছিলেন তাই গঙ্গা নদীর পশ্চিম তটস্থ অঞ্চলগুলিতে বাণিজ্যকুঠী কেন্দ্রিক নগরায়ণ হল কেন ইংরেজরা গঙ্গা নদীর পূর্ব তটটিকে তাঁদের বাণিজ্য বিষয়ে এতটা সক্রিয় করল, তার একটা কারণ হতেই পারে ইংরেজ অন্যদের পরে এসেছিল তাই পশ্চিম দিকে সুবিধেমতন জায়গা পায় নি, আর একটি ব্যাখ্যা এরকম হতে পারে, পাঠক আপনারাই বিচার করুন, তদানীন্তন জমিদারেরা যাঁরা সুতানুটি, গোবিন্দপুর আর ডিহি কলকাতার জমিদারি ভোগ করতেন তাঁরা নিজেদের

মৃদ্ধিকে আরো নিশ্চিত করতে ইংরেজ বণিকদের সাদরে গ্রহণ করেছিলেন 

ব্যাখ্যা যাই হোক, কলকাতার উন্নতি অনিবার্য হয়ে যাচ্ছিল লোকসংখ্যা বাড়ছিল, কলকাতার গঙ্গা নদী তীরস্থ বনভূমি অল্প অল্প করে অদৃশ্য হচ্ছিল, প্রচুর মাঠ, বাড়ী এবং অল্প সংখক দালান বাড়ী দিয়ে কলকাতা সেজে উঠছিল ১৭৫০ সালের একটা হিসেব বলছে কলকাতার লোকসংখ্যা তখন ছিল ১,২০,০০০ 

১৭৩৭ সালে এক মহাপ্রলয় এল বঙ্গোপসাগর থেকে।২০০৪ এর সুনামির আন্দামান অভিজ্ঞতা থেকে এখন  বুঝতে পারি সেও ছিল এক সুনামি। কলকাতা আক্রান্ত হল সে সময়ের জনসংখ্যার এক বিরাট অংশ সেই তাণ্ডবে হয় গৃহচ্যুত হলেন বা প্রাণ হারালেন অসংখ্য মাটির বাড়ী এবং অল্প সংখ্যক দালান কোঠা যা ছিল তা একেবারে ধূলিসাৎ হয়ে গেল কিন্তু কথায় আছে ধ্বংস্তুপেই নির্মাণ ত্বরান্বিত হয় সেই সময়ে ইংরেজ অন্য দেশের বণিক শ্রেণীদের থেকে বাণিজ্য সংগঠনে এগিয়ে গিয়েছিল মুর্শিদাবাদের নবাবদের সঙ্গে বিভিন্ন বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে দর কষাকষিতে অনেক সক্রিয় ছিল

 সিরাজের সঙ্গে সংঘর্ষ, ইংরেজদের অন্ধকূপে হত্যা, নবাবের কলকাতা আক্রমণ সেসব হয়ে পলাশীর প্রান্তরে ১৭৫৭ সালে লর্ড ক্লাইভের নেতৃত্বে বাংলা, বিহার, উড়িষ্যার অধীশ্বর হল ইংরাজ আর ইংরেজদের প্রধান নগরী হল কলকাতা গভর্নর জেনারেল ওয়ারেন হেস্টিংস-এর সময় থেকে ১৭৭২ সালেই কলকাতাকে প্রাচ্যের লন্ডন বলা হতে শুরু হল সেই সময়ে যে জনসংখ্যা কলকাতায় থাকতেন তার একটা অংশ সাহেবপাড়ায়, অন্যটি নেটিভপাড়ায় সাহেব নিয়ে বিকশিত হচ্ছে সাহেবপাড়া সঙ্গে পৌর স্বাছন্দ্য,অপর দিকে মোটামুটি মাটির বাড়ী দিয়ে তৈরী নেটিভ কলকাতা সেসব সুবিধা থেকে সবিশেষ বঞ্চিত ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর অধীনে বাংলা, বিহার, উড়িষ্যা আর তারপর আপামর ভারতবর্ষকে নিজেদের দখলে আনা ইংরেজ মূলতঃ জমিদার শ্রেণী আর ছোট ছোট রাজ্যশাসিত রাজ্যগুলি শাসন করার জন্য কোথাও চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত, কোথাও রায়তওয়ারী ব্যবস্থা বা অন্যান্য অধীনতা মূলক মিত্রতা নীতির আর্থিক চুক্তিগুলি শক্তিমান করল, ফলে ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে বিশেষত নদী বা সমুদ্র সন্নিহিত বন্দরগুলিতে নগর বিকাশ অনিবার্য হয়ে উঠল নগর বিকাশের সঙ্গে সঙ্গেই প্রয়োজন পড়ে নাগরিক অধিকারে নাগরিক আয়েশের জন্য ইংরেজদের সামনে লন্ডন আর মিউনিক ছাড়া অন্য কোনো উদাহরণ ছিল না এখানে মনে করা যেতে পারে লন্ডন ১৫৮০ – ৯০ সালে কেমন ছিল ? শেক্সপীয়রের নাটক নিয়ে কিছু আলোচনায় তার উল্লেখ পাওয়া যায়

Early modern London was an expanding metropolis filled with diverse life, from courtiers, merchants and artisans to prostitutes, beggars and cutpurses.

Shakespeare’s London was home to a cross-section of early modern English culture. Its populace of roughly 100,000 people included royalty, nobility, merchants, artisans, laborers, actors, beggars, thieves, and spies, as well as refugees from political and religious persecution on the continent. Drawn by England’s budding economy, merchants from the Netherlands, Belgium, Germany, and even further afield set up shop in London. As a result, Londoners would hear a variety of accents and · languages as they strolled about the city – a chorus of voices from across Europe and from all walks of life.

Though royalty, the court, and aristocrats may have been the most visible members of London society, a large portion of early modern London’s population worked for a living. The city’s tradesmen, artificers, merchants and manufacturers may claim much of the credit for London’s growth before and during Shakespeare’s lifetime.

In Shakespeare’s time, the poor had little hope of escaping hunger, cold, damp, disease, and exposure. Beggars flooded the streets. Some were veterans – often maimed or disfigured – of the ongoing, undeclared war between Spain and England. Others were freemen who had been expelled from guilds. Still others had come up from the country perhaps hoping to find work, or trying to avoid family entanglements, or running from the law.

 

এই যে ষোড়োশতাব্দীর লন্ডনের নগর বর্ণনা সেটি কলকাতার সেই সতেরো শতকের সময়ের নগর বৃদ্ধির সঙ্গে কেমন যেন মিলে যায়

এরকম  একটি দ্রুত বেড়ে ওঠা নগর রূপায়ণে তাই লন্ডন মডেল অনেক বেশী গ্রহণযোগ্য মনে হয়েছিল সে যুগের ইংরেজ শাসকের কাছে। মনে রাখতে হবে সে সময় দুধরণের ইংরেজের এই কলকাতা নগরীতে পদার্পণ হয়েছিল বড় ইংরেজ আর ছোট ইংরেজ বড় ইংরেজের ছিল উদার দৃষ্টিভঙ্গী, যে উপনিবেশে এসেছেন তাঁকে আদর্শ নগরীতে রূপান্তর করার বিশেষ ইচ্ছে ছোট ইংরেজ যাঁরা ছিলেন, তাঁদের ব্যক্তিগত ভোগ বিলাসের প্রতি আকর্ষণ থেকে নতুন নগরটিকে জমজমে করে রাখার লিপ্সা তৈরী হয়েছিল কলকাতা নগরী এই দুই টানাপোড়েনে কার্যতঃ ভাগ হয়ে গেল, সাহেব পাড়া আর নেটিভ পাড়ায়, যেখানে সাহেব পাড়া পেল নতুন নগর পরিকাঠামোর বিবিধ ব্যবস্থা ময়দান হল শহরের মাঝখানে, যে জঙ্গলহীন হাটখোলা ঘাটে চার্ণক বাহিনী নোঙ্গর করেছিল তার আশপাশ জুড়ে নতুন নগরের প্রস্তুতি সাঙ্গ হল এই কলকাতা শহরের ক্ষেত্রে প্রথম পরিষেবা দুটি হল আলো আর অন্দরের পয়ঃপ্রণালী মনে রাখবেন ১৮৭৫ সালে এই নগরের ১৩০ কিমি হাইড্রান্ট তৈরী হয়ে গেল, চুন সুড়কি আর মাটির ইঁট দিয়ে তৈরী এই পয়ঃপ্রণালী ৩০ মিটার দূরে দূরে ম্যানহোল রেখে নির্মিত হল এই পুরো নির্মাণটাই করা হয়েছিল বর্ষায় অতটা জল যাতে না জমে তাকে নিশ্চিত করা

 

ভগিনী নিবেদিতা ও কলকাতা

নিবেদিতা সদর্থেই নিবেদিতা  এ দেশের জন্য তিনি আসেন স্বামীজীর  আদেশে স্বামীজীর থেকে মাত্র ৪ বছরের ছোট কিন্তু আদেশ পালন করেছেন নির্দ্বিধায় নিঃশব্দে এবং উদ্দীপ্তভাবে জাতিতে স্কট, অ্যায়ারল্যান্ডে জন্ম, খুব অল্প বয়সেই ম্যাঞ্চেস্টারে চলে আসা এবং জীবনের উদ্দেশ্য কি এ নিয়ে খুব কম বয়স থেকেই তাঁর অহর্নিশি অনুসন্ধান তাঁকে স্বামীজীর কাছে নিয়ে এল ১৮৯৫ সালে সে সময় স্বামীজী লণ্ডনে, রামকৃষ্ণদেব ১৮৮৬ সালে দেহ রাখার পর যে নরেন্দ্রনাথ পদব্রজে ভারতবর্ষ খুঁড়ে এ দেশের আত্মাকে খুঁজে পেয়েছেন গরীব, মূর্খ, চণ্ডাল, দুঃস্থ, পরিশ্রমী কিন্তু আত্মবিমুখ এক জাতির মধ্যে মোটামুটি সাত বছরের সেই পরিব্রাজক জীবন স্বামী বিবেকানন্দকে সংকল্প সিদ্ধ করেছে, শরীরে প্রচুর অসুবিধা সত্ত্বেও অবিচল এই মানুষটি দুর্নিবার গতিতে তাঁর স্বপ্নের ভারতকে আবিষ্কার করেছেন তারপর সেই শিকাগোর বক্তৃতা ১৮৯৩ সালের ১১ই সেপ্টেম্বর আমেরিকা নতুন সম্বোধন পেল যে বস্তুবাদী বৈভব দেশটিকে গরিমাযুক্ত করছিল সেই দেশের জীবনবোধ নিয়ে নানান  প্রশ্ন তখন দেখা দিয়েছিল স্বামী বিবেকানন্দ সেই জাতিকেই নতুন পথ দেখালেন, নিজেও জানলেন একটি জাতির কি দুর্দমনীয় শক্তি, নতুন ভাবনা, নতুন ভাব যা ইউরোপের থেকে দেশটিকে অনেক সার্থক করেছে, মুগ্ধ করেছে, জীবনবোধে উদ্ভাষিত করেছে এই নব উদ্দিপ্ত স্বামীজির সান্নিধ্যে এলেন মার্গারেট নোবল্, ১৮৯৫ সালে, বয়স তখন তাঁর আঠাশ কিন্তু ধার্মিক পরিবারের মেয়েটি তাঁর জীবন সম্পর্কে ধারণার অনেক সদুত্তর খুঁজে পাচ্ছিলেন না 

স্বামীজীর কাছে এসে সদুত্তর পেলেন নিশ্চয়ই তাই সব বাধা দূরে ফেলে এসে পৌঁছোলেন এই কলকাতায় নগরের পরিষেবা বৈষম্য তাঁকে ব্যাথিত করেছিল তাই সেসময়ের সংবাদপত্রে এই চিঠি তিনি লেখেন বিশেষ করে সে সময়ের প্লেগের প্রাদুর্ভাব তাঁকে শঙ্কিত করেছিল।

 

Sir,

As one living in the native quarter, and doing what she can to grapple with sanitary necessities there, may I use your valuable paper to appeal for money to those who live in the better served portions of Calcutta?

It is well known that the Town Conservancy has an insuperable difficulty to deal with in the first six wards – not in the bustees alone.

But only those who have examined a bustee personally can have any idea of the number of huts and little bye-lanes or the length of drainage that the term includes. An irregular rambling village is our nearest equivalent. All round the area, and often completely covering it, we find rows and clusters of mud huts, sometimes two or three deep, and the frontier is formed on two or three sides by public lanes and streets. But the bustee is carefully bounded in another way. Either outside or within the outermost of these rows of cottages runs a narrow open stone channel that serves all the purposes of drainage. This is often encrusted with mud and slime, choked with all sorts of refuse, or broken away and completely out of repair. Whatever its condition, its importance to the people is incalculable. Abutting on it are often crazy little structures, built of bamboo on a foundation-course of brick, and occasionally surmounting a seething cesspool which are intended to be within “sanitary” but which are now so old that only the destruction of all their parts by fire would make them cease to be the reverse. 

Theoretically, the cleaning of such a space consists of a visit of a Mehtar – who stacks the refuse in heaps at given points in the larger lanes – and a scavenger cart, which calls later and is supposed to collect all along a certain line for transport to the sewage platform.

A multitude of supervisors, headman, and others are understood to inspect the whole and keep it in perfect efficiency. But needless to say this is not done. Neither superintendent, Mehtar, nor conservancy cart can do justice to a task so great and what is done is done in that “Splash, splutter and slap-dash” manner that seems to create worse evils than it cures. What remedy the future may contain lies entirely in the education of individuals to demand right arrangements and maintain them in full working order.

Under these circumstances, some of us felt that a very real way of helping the class that surrenders most readily to plague would lie in cleansing the busice in our immediate neighbourhood, and trying thereby to create a desire in the vicinity for similar co-operation and assistance.

A generous friend put into my hands what we hoped would be enough for two months’ service, and after a week’s difficulties and delay we got our men and set to work. We are succeeding beyond expectation. The need was even greater than we had imagined; the people – once assured that we are private persons working from disinterested motives,- begged our helping with interior cleansing, and have listened gladly to our advice about sanitation and disinfectants. They have allowed and even invited us to enter their houses, and have not been afraid to show us their terrible poverty.

There are something like a couple of miles of drain and lane, three days ago unutterably filthy, where today an Englishwoman can walk without annoyance. As one bustee is cleansed, another is opened up, and the subsequent labour of keeping clean will be a matter of alternate days only. But necessary implements and disinfectants have taken a third of the money that 1 hoped to spend on wages. More funds are absolutely necessary, and as 1 have no hope of raising them here I venture to appeal to European Calcutta for help. We are working on those lines of private responsibility which will prove inevitable if municipal problems in connection with conservancy are ever to be overcome. We know well that every spot cleansed is the source of danger to ourselves the less. But for far nobler motives than these 1 venture to hope that English people will help. Simple human pity and Christian charity are so far recognized among us that appealing in their name one dares to think that one does not appeal in vain.

Will those who can daily feast their sense of sight and smell on the fresh air and beautiful flowers of private gardens and the Maidan, those to whom cleanliness of roads and surroundings is no luxury but a first need, will they do what they can towards such ends for those who cannot hope to enjoy even the least of them otherwise ?

Subscriptions for us may be sent to General Patterson, 3 Esplanade, Calcutta, or to Dr. Salzer, 6 Loudon Street, Calcutta; and Dr. Mahoney, Medical Officer of the District, 65, Beadon Street, kindly undertakes to examine our accounts during the progress and at the conclusion of our work. Even small sums will be very helpful.

 

তিন বছর স্বামীজী মার্গারেট নোবল-কে নানাভাবে নিরস্ত করেছিলেন যাতে তিনি ভারতবর্ষে না আসেন কিন্তু ১৮৯৮ সালে ২৮শে জানুয়ারী মার্গারেট ভারতবর্ষে পদার্পণ করলেন মনে তাঁর আইরিশ জাতির ইংরেজদের কাছে পদানত থাকার বিক্ষোভ, যে ইংল্যান্ড বিত্তশালী হয়েছে ভারতবর্ষকে নিত্য লুণ্ঠন করে, স্বামীজীর কাছে সেই কাহিনী শুনে এ দেশের প্রতি, এ দেশের দরিদ্র পীড়িত মানুষগুলির প্রতি তৈরী হয়েছে এম্প্যাথি

 কলকাতায় এসে তিনি প্রথমে সাহেব পাড়ার বাসিন্দা   হলেন এর কিছু দিন পরই শ্যমবাজারের কাছে বলরাম বসুর বাড়ীর পাশেই বোসপাড়া লেনে বাসা বাঁধলেন, কারণ মা সারদা সেখানেই থাকতেন প্রথম থেকেই তিনি জেনেছিলেন একমাত্র শিক্ষাই পারে মানুষকে তার অতলান্ত সম্ভাবনা আর অনন্ত দুঃখের জীবনকে বুঝে নিতে তাই প্রথমেই শিক্ষার ব্যবস্থা করলেন এবং আশেপাশের ছোট মেয়েদের ডেকে ডেকে তাঁর বিদ্যালয়ে ভর্তি করার নিরন্তর চেষ্টা করতে লাগলেন এই কাজটি করতে গিয়ে সার্থক নামা হলেন মেয়েরা ভালবাসলে যে প্রাণপাত করতে পারে তার চরম উদাহরণ হয়ে উঠলেন এই আলোক সামান্যা নারী তখনকার খবরের কাগজে তাঁর লেখা চিঠি নিত্যকার বিষয় হয়ে উঠল বোসপাড়া লেন সন্নিহিত অঞ্চলে পৌর নাগরিক পরিষেবা যে লক্ষণীয়ভাবে অপ্রতুল সেকথা ইংরেজ শাসকের কাছে তাঁদের ভাষায় জানাতে লাগলেন কলকাতার পৌর স্বাচ্ছন্দ্য কেন নেটিভ পাড়াতে সুলভ নয় সেই নিয়ে বেশ কয়েকটি চিঠি এখন সাধারণ পরিসরে  সুলভ সেই চিঠিগুলিতে এ দেশের মানুষের প্রতি অকৃত্রিম ভালবাসা, এবং মানুষকে সুস্থ নাগরিক পরিষেবা দিয়ে যে শাসকের কর্তব্য সম্পূর্ণ হয় সেই কথাগুলি এই সব চিঠিতে একসঙ্গে গ্রন্থিত আছে স্বামীজী ছিলেন তাঁর Mentor, যে Mentor cipf-es.org বুকের ভিতর আগুন জ্বালিয়ে দিতে পারেননিবেদিতা তাঁর অনেক কাজের মধ্যে কলকাতার স্বচ্ছ, সুন্দর প্রকৃত নগরের সুবিধা টুকু দাবী করলেন ইংরেজ কর্তৃপক্ষের কাছে এই মহানগরী যেন তার ধাত্রী মাতাকে পেল 

 

কলকাতা কর্পোরেশন

আবুল ফজলের আইন-ই-আকবরী তে কলকাতার উল্লেখ আছে আবুল ফজলের বইটি মোগল যুগের প্রামাণ্য অর্থনৈতিক দলিল, তাই সেই বইতে কলকাতার উল্লেখ নিশ্চিত করে বঙ্গপ্রদেশে ঢাকা শহরের পাশাপাশি কলিকাতারও  বাণিজ্য উদ্যম সে সময় ছিল কলকাতা ছিল মোগল সম্রাটের খাস মহল বা জায়গীর জাহাঙ্গীরের আমলে সাবর্ণ রায় চৌধুরী পরিবারের হাতে কলকাতা সেই হালিশহর পর্যন্ত অর্পণ করা হয় ১৬৯০ সালে যুদ্ধক্লান্ত জব চার্ণকের আশ্রয় স্থল হল কলকাতা ১৬৯২ সালে জব চার্ণকের মৃত্যুর পর সাবর্ণ রায় চৌধুরীরা ১৬৯৮ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীকে ১৩০০ টাকায় জমিদারি অধিকারটা দিয়ে দিল আবার ১৬৯৭ সাল থেকেই ফোর্ট উইলিয়াম-এর কাজ শুরু করে দিয়েছিল ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী ১৭১৭ সাল থেকেই কলকাতা, সুতানুটি আর গোবিন্দপুরের আশেপাশের ৩৮টি গ্রামকে এই শহরের আঙ্গিনায় নিয়ে আসা হল কলকাতায় প্রথম কর্পোরেশনটি তৈরী হল ১৭২১ সালের চৌঠা সেপ্টেম্বর একজন মেয়র আর ৭ জন অন্ডারম্যানকে নিয়ে এঁরা বিচার বিভাগের কাজটিই করতেন প্রশাসনিক দিকটি দেখতেন একজন নেটিভ জমিদার ১৭৬৩ সাল থেকে নাগরিক স্বাচ্ছন্দ্যের প্রতি নজর দেওয়া হল গ্যাসবাতি আর ময়লা পরিষ্কার করার কাজ প্রাথমিক গুরুত্ব পেল তারপর নানা ধরণের উন্নয়নমূলক কাজের সঙ্গে যুক্ত হলেও প্রথম কলকাতা মিউনিসিপাল কনসলিডেশন আইনের সাহায্যে ১৮৭৬ সালে কলকাতা কর্পোরেশনের উদ্ভব গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে Calcutta Municipal Act, 1923 সালে প্রস্তুত হল রাষ্ট্রগুরু সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জীর নেতৃত্বে পরের বছর কলকাতার প্রথম মেয়র হলেন দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ সুভাষচন্দ্র বসু প্রথম মুখ্য কার্যকরী আধিকারিক (CEO) সুভাষচন্দ্রের বয়স তখন ২৭ ইংরেজী শিক্ষায় শিক্ষিত মানুষজন তখন অনেক কম ছিল এছাড়া I.C.S. পরীক্ষায় চতুর্থ স্থান অধিকার করেও সুভাষচন্দ্র বিদ্রোহ করে চলে এলেন এ দেশে প্রশাসনিক কাজে যে মানুষটি পরে I.N.A.-র মতন দেশ স্বাধীন করার সৈন্যবাহিনীকে নেতৃত্ব দেবেন তাঁর সেই কাজে হাতেখড়ি কিন্তু কলকাতা কর্পোরেশনে কলকাতা তখন দেশের সাবেক রাজধানী, জনসংখ্যা শুধুমাত্র বঙ্গ প্রদেশ থেকেই নয়, নানা জাতির নানা পরিধানের কলকাতাকে স্বচ্ছ বায়ু, স্বচ্ছ জল, উপযুক্ত আলোকব্যবস্থা, সাধারণ মানুষদের যানবাহন, নিকাশী ব্যবস্থা এই সব কিছুর শিক্ষানবিশী করতে করতেই সুভাষচন্দ্র তাঁর আরব্ধ কর্মটির দিকে এগিয়ে গেলেন প্রথম থেকেই স্বাধীনতাকাঙ্খী এই তরুণ মানস বিক্ষুব্ধ বাংলার প্রধান শহরটিতে যে নাগরিক পাঠ নিতে পেরেছেন তার জন্য কলকাতা শহরকে কুর্নিশ ১৯৩০ সালে সুভাষচন্দ্র বোসই হলেন কলকাতার পুর সংস্থার পঞ্চম মেয়র এক বছর হত এই মেয়রশিপ তার মধ্যেই কলকাতাকে আরো পুর-স্বাচ্ছন্দ্য দিতে পেরেছিলেন সুভাষচন্দ্র সুভাষচন্দ্র তাঁর কৈশোর থেকেই স্বামী বিবেকানন্দের অনুগামী স্বামীজীর স্বপ্নের ভারতে স্বামীজী চেয়েছিলেন ১০০ জন যুবা যাঁরা পুরো ভারতবর্ষকে আমূল পাল্টাতে পারে এক দৃপ্ত, সংশয়হীন যুবমানস চেয়েছিলেন স্বামীজী যখন দেহ রাখলেন তখন সুভাষচন্দ্রের বয়স মাত্র পাঁচ তাঁর আট বছর বয়স থেকে বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলন শুরু হল তেজোদ্দিপ্ত পরিবারটি এই আন্দোলন থেকে দূরে থাকলেন না কলকাতা শহরের কেন্দ্রস্থলে পরিবারটি থাকার সূত্রে সবরকম বিক্ষোভ আন্দোলনকে খুব কাছ থেকে দেখলেন সুভাষচন্দ্রের বালকবেলা সেই উত্তেজনা থেকে দূরে ছিল না নতুন ভারত গড়তে হবে, তরুণদের স্বপ্নকে সাকার করতে হবে ; এই আকাঙ্খা নিয়েই I.C.S. হওয়ার ইচ্ছে ; আর প্রত্যাখ্যান করতেও দ্বিরুক্তি না করে  গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের হাত ধরে দেশের Basic খোঁজার চেষ্টা কলকাতা কর্পোরেশনে কলকাতা শহরের যে বিশ্বনাগরিকবোধ আছে সেটি অনুধাবন করতে পেরেছিলেন সুভাষচন্দ্র এই কলকাতা কর্পোরেশনে কাজ করেই ধনী, দরিদ্র নানা জাতির শহর কলকাতা এক্ষেত্রে আগামী দিনের নেতাজী হয়ে ওঠার সুভাষচন্দ্রের প্রথম ল্যাবরেটরি

একটি মহানগর তিনটি বিশুদ্ধ আত্মাকে এক মালায় গেঁথে দিল তিনজনেরই প্রথম পথ চলা এ দেশের মানুষের নিদারুণ জীবনকে আরো একটু উন্নত করার ব্রত নিয়ে কাকে ছেড়ে কাকে রাখি ? কলকাতা নগর কি এই আত্মবিস্মৃত অনন্তরূপ মানুষগুলিকে আরো কর্মযোগী করে তুলল ? নাকি এই মানুষরাই কলকাতাকে তাঁর গ্রাম্য বিস্তারকে রুখে দিয়ে বিশ্বের অন্যতম কসমোপলিটন শহরে পরিণত করল কালের বিচার কাল করবে কিন্তু মানুষের সাধ্যাতীত কিছু নেই যদি নিষ্কম্প আর্তি থাকে কলকাতা ধন্য এঁদের পরশ পেয়ে কলকাতা থাকুক কলকাতায় এই তিন মহাপুরুষের সান্নিধ্য পেয়ে 

 

About the author

Arunava Roy,a retired Group A officer from Doordarshan had studied Economics in Santiniketan,Visva-Bharati commenced his career with ISI,Kolkata,worked as Statistician,Labour Dept. Govt of West Bengal joined Akashvani through UPSC in 1991.Worked at Agartala,Panaji,Kolkata,Port Blair AIR kendras.He experienced Tsunami 2004 as broadcaster.Later he worked for Marketing wings of Prasar Bharati.In 2016 Sri Roy joined Doordarshan kendra Kolkata as Head of Programme.He also looked after the East Zone.During this tenure Sri Roy was instrumemtal to augments the viewrrship of this PSB Channel manifold.He introduced the Live Bengali commentary of Puri Rathayatra.Sri Roy is associated with different Universities as guest lecturer on media sciences. Sri Roy retired from service on 30.09.2022.

A City, laid and built- Arunava Roy

2 thoughts on “A City, laid and built- Arunava Roy

  • August 4, 2023 at 10:17 am
    Permalink

    ⁰Excellent depiction of history of Kolkata city. Please write more on this.

    Reply
  • August 8, 2023 at 5:38 pm
    Permalink

    খুব ভাল লেখা। রেখে দেবার মত দলিল। ধন্যবাদ, অরুণাভবাবু

    Reply

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *