Arijit Kathanchit – By Arijit Chaudhuri

নববর্ষ – ১৪৩০

গত বছরের মতই মার্চের ২২ তারিখ ‘হিন্দু’ নববর্ষের শুভেচ্ছা পেয়েছি। আজ ১৪ই এপ্রিল তামিল, মালয়ালি, অহমীয়া, পাঞ্জাবি আর বাঙ্গালী নববর্ষের শুভেচ্ছা আসা শুরু হয়েছে। যাঁরা হিন্দু নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে রেখেছেন তারা কেউ কেউ নববর্ষ কথাটি উহ্য রেখে আলাদা আলাদা করে ভিশু (কেরালা), বৈশাখী (পাঞ্জাব), বোহাগ বিহু (অহম), পয়লা বৈশাখ (পশ্চিম বঙ্গ, ওড়িশা) ইত্যাদি জানাচ্ছেন। প্রসঙ্গতঃ তামিল নাডু, মণিপুর, নেপাল, সিংহল, কাম্পুচিয়া, থাইল্যান্ডেও নববর্ষও এই সময়ে। এতগুলো জায়গায় নববর্ষ এই সময়ে কেন? কারণ, এই সময়ে কৃষিপ্রধান আমাদের দেশে ফসল কাটার পর নিশ্চিন্ত মানুষের হাতে অর্থ থাকে। গ্রীষ্মের গরমে নতুন ফসল বোনা যায় না, রোদে অন্য কাজও করা দুষ্কর হয়ে পড়ে বলে সময়ও থাকে।   

হিজরি ক্যালেন্ডার অনুযায়ী নববর্ষ আসে ১৮/১৯ জুলাই। ওই তারিখটি মহম্মদের মক্কা থেকে মদিনা আসার সময়। তার সাথে ভারতের বাস্তবিক যোগের অভাব। কারণ, সেটি ফসল তোলার সময় নয়। খাজনার সাথে ফসল তোলার সময় কাছাকাছি আনার চেষ্টায় সম্রাট আকবরের আমলেই হিজরি সাল থেকে বছরের শুরুকে সরিয়ে আনার চেষ্টা হয়। ৩৫৪ দিনের হিজরি চান্দ্র বছরের সাথে ৩৬৫/৩৬৬ দিনের সৌর বছরের গরমিলও এই পরিবর্তনের কারণ। 

যে সময়ে পনেরো আনা পৃথিবীর চোদ্দ আনা কাজ পয়লা জানুয়ারীকে বছরের শুরু মেনে চালাতে হচ্ছে, তখন এই সব কচকচির মধ্যে ঢুকতে চাই নি। এরা ‘আপনি এল ব্যাক্টিরিয়া, তাকে ডাকা হয় নাই’-এর মত এসে যায়। আসল কথা হল চাষ-আবাদের খাটা-খাটনির পর আনন্দ। পাড়া-পড়শির সাথে কোলাকুলি-খাওয়াদাওয়া, সারা বছর যে খদ্দেরদের ভরসায় সংসার চলে, তাঁদের ডেকে দোকানীর আপ্যায়ন। অল্পে তৃপ্ত ভুঁড়িয়াল গণেশদাদাকে স্মরণ- এমন কি সারা বছর গালি আর ফাঁদে ফেলে নিকেশ করা তাঁর বাহন ইঁদুরকুলকেও একটু খাতিরদারি করে নতুন খাতা খোলা। এর মধ্যে ধর্ম যেটুকু থাকে তার কারণ মানুষ যা ভাল পায় করে তার অংশ ঠাকুরকে না দিয়ে শান্তি পায় না।   

কয়েক বছর আগে বাংলাদেশের এক মোল্লা ইউটিউবে বলছিলেন, ‘তুমরা কেউ খবরদার পয়লা বৈশাখে বউরে শাড়ি বাইচ্চাদের নতুন জামা দিবা না। আল্লা পছন্দ করেন না।’ বলা বাহুল্য, বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষ তাতে পাত্তা দেন নি। ঠিক ইচ্ছে করে বা এই লোকটা আল্লার ভাবনা সম্পর্কে কতটা জানে- সেই সন্দেহবশেও নয়। গোলায় ফসল উঠলে, শ্বশুরবাড়ি থেকে মেয়ে বাড়ি এলে আনন্দের অদৃশ্য তরঙ্গমালা মানুষকে অসহায় করে দেয়, ভাসিয়ে নিয়ে যায়। নতুন জামাকাপড়, মিষ্টি, মাছ আপনা থেকেই তার সাথে জুড়ে যায় – আটকানো যায় না। যেমন ধরুন, আমি দুটি মেয়েকে জানি – তাদের কেউ বলে নি, তবু তারা পৃথিবীর যেখানেই থাকুক, ওনমের সময় কেরালার সাদা শাড়ি পরে, নববর্ষের দিন বাংলার শাড়ি পরে বাঙালি খাবার খায়, বড়দিনে আর জন্মদিনে কেক কেনে । আনন্দ এ ভাবেই ছড়িয়ে যায়, যদি না কোন ছড়িদার আতঙ্কের কম্বলে সেই স্বতঃস্ফুর্ততাকে ঢেকে দিতে পারে।  

১৯৮৯ সালে নববর্ষ উপলক্ষে আনন্দ শোভাযাত্রা নামে একটি শোভাযাত্রা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু হয়, আস্তে আস্তে তা সারা বাংলাদেশের নানা জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে, নাম ১৯৯৬ সালে বদলে হয় মঙ্গল শোভাযাত্রা। ২০১৬ সালে বাংলাদেশ সরকারের আবেদনে ইউনেস্কো শোভাযাত্রাটিকে গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের (Important intangible cultural heritage)  স্বীকৃতি দেয়। এ বছর মুসলিম উগ্রবাদীরা ‘ধর্মে আঘাত লাগছে, শোভাযাত্রা বন্ধ করো, – নইলে……’ ধরণের আইনী হুমকিও দিয়েছিল। আজ যুগান্তর অনলাইনে  এরকম খবর পেলাম, আজকের “শোভাযাত্রায় দল মত নির্বিশেষে সকল মানুষের ঢল নামে। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সব শ্রেণী-পেশার মানুষ শোভাযাত্রায় অংশ নেন। পিছিয়ে ছিলেন না বিদেশিরাও। বাঙালি সাজগোজে শোভাযাত্রায় অংশ নিয়ে ভাঙা ভাঙা বাংলায় সবাইকে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। …………মঙ্গল শোভাযাত্রার উদ্বোধন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান। শোভাযাত্রায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন স্তরের মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নেন। কঠোর নিরাপত্তার চাদরে মোড়ানো হয় পুরো এলাকা।” শেষ অংশটি প্রয়োজন ছিল। যারা হুমকি দেয় তারা সাধারণতঃ খুব সাহসী হয় না, প্রশাসনের মদত না পেলে তারা বেশী দূর এগোতে পারে না। বাংলাদেশের মানু্ষ জানেন, মুক্তিযুদ্ধের সময়ে এরকম লোকেরাই পাকিস্তান সরকারের মদতে রাজাকারবৃত্তিতে লিপ্ত ছিল।

বিভেদের বেড়া পেরিয়ে মিলিত জীবনের খুশি বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ুক। নতুন বছর শান্তিময়, প্রীতিময় হোক এই শুভেচ্ছা রইল।

১৪ই এপ্রিল, ২০২৩                                                                          -অরিজিৎ চৌধুরী

 

About the author

Arijit Chaudhuri, located in Navi Mumbai, petroleum geologist by profession. Also interested in issues concerning pollution, climate change and fast depleting groundwater reserves.Travelling, reading, writing articles, composing rhymes and recitation are his hobbies.

Arijit Kathanchit – By Arijit Chaudhuri

One thought on “Arijit Kathanchit – By Arijit Chaudhuri

  • April 18, 2023 at 9:41 pm
    Permalink

    Ek kathaye anoboddyo. Before this year, I never hear the word “Hindu Nav-barsh”. Some people with government support want religion in every cultural activities in the country.
    Sunechilam Mangal yatra niye kono kono moulowadi gosa kore boyan diyechen Bangladesh-e. Good God je sadharon manush ta Mane ni.
    Only LOVE can clear the increasing black cloud of hate from this subcontinent. Bravo write up.

    Reply

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *