Collected

আমার বেশির ভাগ বন্ধু পুজো আচ্চায় বিশ্বাস রাখেন না। পুজো বা ধর্মীয় অনুষ্ঠান মানে যদি মন্ত্রোচ্চারণ হয়, তাহলে হয়তো বা তার মধ্যে যুক্তি খুঁজে বার করা যায়। মুসলমানদের যেমন, কিছু বিশেষ ধরনের কলেমা পড়ে, কয়েকটি আচার পালন করলে ধর্ম পালন হয়ে গেল। তার মধ্যে লোকাচারের তেমন সুযোগ নেই। লোকাচারের মধ্যে স্বতঃস্ফূর্ততা আছে। পীরের দরগার সুফি সংগীত, মানত, তাগা বাঁধা এগুলো লোকাচার-এর মধ্যে ধর্মের নামগন্ধ নেই। দুর্গাপুজো ধর্মীয় আচার আর লৌকিক আচারের সংমিশ্রণ। বাঙালীর ব্রত পালনের অনেক কিছু তুলনামূলকভাবে জাঁকজমক পূর্ণ দুর্গাপুজোর সাথে মিশে গিয়েছে। দুর্গাপুজো তাই শুধু “হিন্দু উৎসব” নয়, একে বাঙালীর সবচেয়ে বড় উৎসব বলা কোন অতিশয়োক্তি নয়, ব্রাহ্মণ্যবাদের কাছে নতি স্বীকার ও নয়। আক্ষরিক অর্থে দুর্গাপুজো, আর যে দুর্গাপুজো বাংলার সর্বত্র হচ্ছে তার চরিত্র আলাদা।
ধর্মকে বাদ দিয়ে বা ধর্মকে প্রতিনিয়ত আক্রমণ করে নিজের মুক্ত মনের প্রকাশ ঘটানোর মধ্যে একটা সূক্ষ্ম অহমিকা বোধ আছে, যা অত্যন্ত পীড়াদায়ক। ঈশ্বরচন্দ্র শর্মা ঈশ্বর বিশ্বাসী টুলো ব্রাহ্মণ ছিলেন না। এই মহাপুরুষ বাঙালিকে আধুনিক বাংলা শিখিয়েছেন, ঢাক ঢোল পিটিয়ে তাকে বলতে হয় নি, “শাঁখা সিন্দুর দাসত্বের নিদর্শন। পৈতে বিসর্জন না দিলে জীবন বৃথা। প্রতিদিন নিয়ম করে ধর্মের গায়ে দুবার তরবারি চালান, না হলে আপনার বুদ্ধি হ্রস্ব হয়ে যাবে”।
ধর্মীয় আচার ভাল না মন্দ সে বিচার করার ভার যিনি আচার পালন করছেন তার। সেই তাঁকে বিজ্ঞান শেখাতে পারি, তাঁকে মানবতায় দীক্ষা দেওয়ার কাজ করতে পারি, কিন্তু স্বয়ং বিচারকের ভূমিকায় উত্তীর্ণ হওয়ার কোন প্রয়োজন দেখি না। নবজাগরণে যারা গরুর মাংস খেয়ে হুল্লোড় করেছিলেন তাঁদের চেয়ে এক স্বপাক-আহারি ব্রাহ্মণ লক্ষ গুণ বেশি কাজ করেছেন। রাজা রামমোহন রায় একজন ঈশ্বর বিশ্বাসী মানুষ। রবীন্দ্রনাথ স্বয়ং ঈশ্বর বিশ্বাসী। অথচ, তথাকথিত হিন্দুত্ববাদীদের চক্ষুশূল এই মানুষগুলি ধর্মের নিষ্প্রাণ আচারসর্বস্বতাকে কি নির্মম আক্রমণ করেছেন! ব্যক্তির আচার, আচরণ, তার দুর্বলতা, সংস্কার কোন কিছু তাঁদের আক্রমণের বিষয় হয়ে ওঠে নি।

যাক যা বলছিলাম, আমার গ্রামের দুর্গাপুজো শতাব্দী প্রাচীন। সেখানে দেখেছি মন্দিরের পাশে একটা ছোট জলাশয়ে শয়ে শয়ে মানুষ স্নান করে মানত করেন। পুজোর কটা দিন সেখানে ভীড় লেগেই থাকতো। পাঁঠা বলি হতো। একটা মেলা ও বসতো। হয়তো এখনো বসে, অনেকদিন যাওয়া হয়ে ওঠে নি। অথচ, পুজো তো করছেন কয়েকজন উঁচু জাতের মানুষ, বাকিদের তো সেই যুগে মন্দিরের চৌকাঠ মাড়ানো ও পাপ ছিল। কিন্তু, আনন্দ স্ফূর্তি বা উৎসবে ভাটা পড়তে দেখি নি। মুসলমান পাড়া ও তো উৎসবে অংশগ্রহণ করতো। এখন তো আরো বেশি করে করে।
আশ্বিন-কার্ত্তিক তো চাষির অকাল। তবু বাংলার প্রকৃতিতে উৎসবে সাজ। সেই সাজে আম বাঙালী কোন পূর্ব সংস্কার ছাড়া অংশগ্রহণ করুক। মণ্ডপে যাক, পুজো দিক, ধুনুচি নাচ নাচুক, সিঁন্দুর খেলুক। এ দিয়ে মনুষ্যত্বের অবমাননা হয় না। যেগুলো সত্যকার অবমাননা তার বিরুদ্ধে যেন কলম থেমে না থাকে- যেন ধর্মের নামে বিভাজনের বিরোধিতায় বুক না কাঁপে, যেন এন আর সির নামে ঘরছাড়া করার চক্রান্তের বিরুদ্ধে কলম গর্জে ওঠে, যেন ফ্যাসিস্ট বিরোধী সংগ্রামের সময় অন্তরাত্মা আর কলমের কালি না শুকিয়ে যায়।
দুর্গাপুজো আমার প্রিয়তম উৎসব। খুব ভালো করে সে উৎসব পালন করবো। আর কটা দিন বাকি আছে, কিন্তু মন পড়ে আছে গাঁয়ের পুজোয়, কাশবনে, আকাশের ছেঁড়া ছেঁড়া মেঘে, ঢাকের বাদ্যিতে।

Collected

2 thoughts on “Collected

  • Pingback:Druga Puja – Ganga Zuari Academy

  • October 1, 2021 at 6:21 pm
    Permalink

    Valo laglo rochona ti. Thank you.
    Mone pore amader gramer pujo te President chhilen bohubochor Golam Azam saheb..Amader HS schoole Philosophy er head chhilen.

    Reply

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *