Scent Of A Story by Basudeb Gupta

অণুসন্ধান ৭
আইন কানুন।

আইন আইনের পথে চলবে। কাজেই পুলিন বিহারী দাস কন্সটেবলের যখন মিছিল আটকাবার ডিউটি পড়ল তখন তো তাকে যেতেই হবে।

তিমির বিনাশ দাস ওর মানত করে পাওয়া একমাত্র ছেলে যে সেই মিছিলের সামনের সারিতে থাকবে সেটা জেনেও।

মিছিল যা হবার তা হল। পারমিশান নেতারা নিয়েছিল। কিন্তু আইনরক্ষকদের হাতে শেষ সিদ্ধান্ত। তারা যদি মনে করে কারো শান্তি ভঙ্গ হবে তাহলে লাঠিগুলির ব্যবহার হতেই পারে। মিছিলওলাদের হাতে ঝান্ডার ডান্ডা আর রাস্তার ঢিল। পুলিশের অনেক খেলনা। জলকামান। রাবার বুলেট, পেলেট গান আর সেই ঐতিহ্যময় কাঁদানে গ্যাস। মিছিল ও পুলিশের ডারবি শহরের ঐতিহ্য।

আইনের পথে লেন আঁকা নেই। সেটা চলতে চলতে তৈরী হয়। পুলিন বিহারীর লাঠি পড়ে তিমির বিনাশের মাথায়। পিছন থেকে একটা সাইজ মত পাথর এসে পড়ে পুলিনের মাথায়। হেলমেট শর্ট। ওর মাথায় ফেল্টের টুপি। বম্বের সেই বিখ্যাত সিনিয়র অফিসারও পুরনো ভেস্ট পরে গিয়েছিল। হেলমেট চাইলে আই সি বকে দেয়। সে যে আর বাড়ী ফেরেনি সে কথাটা চেপে যায়।

১২ ঘণ্টা পরে পাশাপাশি দুটো বেডে ওদের জ্ঞান ফেরে। ছেলে বাবাকে দেখে। বাবা ছেলেকে।

চোখের দৃষ্টি মাঝপথে এসে ধাক্কা মারে রামায়ণ টিভির রাম রাবণের ছোঁড়া ব্রহ্মাস্ত্রের মত। অঘটন অবশ্য কিছু ঘটে না। সেকেন্ড অফিসারের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি আর নার্স শর্মিলার তৎপর প্রেসার মাপার যন্ত্র মাঝখানে এসে দরকারী কাজ শুরু করে।
-দেখতে পাচ্ছেন? বলুনতো কটা আন্গুল। হাত নাড়ান। পায়ে সুড়সুড়ি লাগছে?
পরীক্ষায় দুজনেই পাস। বড় কোন ঘটনা মাথায় ঘটেনি। হেমারেজ নেই। নার্ভে চোট লাগে নি। তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাবে। আর এম ও সুচিন্তিত মতামত জানান পরীক্ষা করে।
-আপনার নাম কি?
-পুলিন দাস
-আপনার নাম ?
-তিমির দাস
ঠিক ? ডাক্তারবাবু সেবিকাকে চেক করতে বলেন ফাইলে।
-নাম তো ঠিকই আছে। কিন্তু?
-কিন্তু? আর এমও তাড়া দেন। আরো অনেক বেড আছে। কি মিডল নেম বলে নি বলে? ঠিক আছে । মাথায় জোর লেগেছে। বেশি কথা বলানোর দরকার নেই। ব্লিডিং বাড়তে পারে ।
-না স্যার তা নয়। নাম ঠিক কিন্তু উল্টো বলছে। মানে এ ওর নাম বলছে আর ও এর।

আত্মায় আজকাল মনে মনে কেউ বিশ্বাস করে না। নৈলে ভাবা যেত ক্ষণিকের জন্য দুজনের আত্মারাম খাঁচাছাড়া হয়ে মিছিলের তুলকালাম হৈচৈতে নার্ভাস হয়ে ভুল মাথায় ঢুকে পড়েছে।

-তোমরা একে অপরকে চেন? সেকেন্ড অফিসার এবারে মাঠে নামেন জেরা করতে।
দুজনে চোখাচোখি হয়। তারপর মুহূর্তের মধ্যে দুজনেই মাথা নাড়ে। নাঃ ওরা কেউ কাউকে চিনতে পারছে না।

তোমার বাবার নাম কি? তিমিরকে জিজ্ঞেস করে নার্স। ব্যাপারটার মধ্যে সিরিয়াল সিরিয়াল গন্ধ।
-ভুলে গেছি।
পুলিনকে জিজ্ঞাসা করা হয়।
_দরাজ পাঁজা।
দরাজ পাঁজা পাড়ার কাউন্সিলরের নাম। তিন ভাই, স্বরাজ,খরাজ আর দরাজ।
নার্স আর এমও আর সেকেন্ড অফিসারের আড়ালে কথা হয়।
-সব ঠিক আছে। পুলিশের লাঠিতে বাবার নাম ভুলে গেছে। যাওয়রই কথা। পরে মনে পড়বে।
-পুলিন তো বাবাকে ঠিক চিনেছে। উনিই তো আমাদের রিয়েল বাপ। কোন গোলমাল নেই।
-আর নিজের নাম যে গোলমাল হয়ে গেছে তার কি হবে? নার্স পালিকা পালের আর্ত জিজ্ঞাসা।
তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে সেকেন্ড অফিসার বলেন,
-এত চিন্তার কিছু নেই, আকছার হচ্ছে। ভোটের সময় দেখেন না একবার একটা নাম বলে আরেকবার আরেকটা। আধার কার্ড দেখলেই ওদের আঁধার দূর হয়ে যাবে। কতটা দূরদর্শী ছিলেন বলুন তো আমাদের জাতির সেবকেরা। নাম যতবার ভুলবে আধার দেখেই মনে পড়ে যাবে। এরকম যে হবে ওঁরা জানতেন।
দুহাত ভক্তিভরে কপালে ঠেকায়।
সবাই নিশ্চিন্তে চলে যায়। দুটি পাশাপাশি বেডে বাবা ছেলে মিটিমিটি হাসে। কেমন চুক্কি দিলাম ওদের। আইনকে একটু মুখ ভেংচেই এদের একটু মজা।

পুলিনের চোখে টপটপ করে জল পড়ে। অনেক মানত করা ছেলে। কোলে পিঠে মানুষ।
তিমিরের বুকে ঘনিয়ে ওঠে অভিমান। বাবার কোনদিন হাত ওঠে নি হাজার দোষ করলেও।
কিন্তু আইন যখন নিজের পথে চলে তখন যত লাঠি ঢিল পড়ে ওদেরই মাথায়।
আইনকে ঠিক পথে আনতে এখনো ক-তো দেরি।

About Author


বাসুদেব গুপ্ত। বয়স ৭০। অধুনা নিবাস সল্ট লেক কলিকাতা। পেশা কম্পিউটার সফটওয়ার ডিজাইন ও এক্সপোরট। নেশা বাংলা ইংরাজী কবিতা ও গল্প লেখা। দ্বিতীয় প্রেম কুকিং

Scent Of A Story by Basudeb Gupta

3 thoughts on “Scent Of A Story by Basudeb Gupta

  • August 31, 2022 at 1:35 pm
    Permalink

    অসাধারণ গল্প।

    Reply
  • September 6, 2022 at 3:45 pm
    Permalink

    Really excellent. Jamiye diyechen Saheb. Dil maange more…..

    Reply

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *