অণু গল্প (Scent Of A Story) – Basudeb Gupta

অণু গল্প (Scent Of A Story) – Basudeb Gupta

ভ্যানিশ। অণু সন্ধান ১।
-বাসুদেব গুপ্ত

মাস্কটা ভালো করে চেক করে হাতে ১০ ইন্চির ফলের ব্যাগটা নিয়ে নির্মল দাস বেরোলেন ঘর থেকে। সাড়ে আটটা, বাইরে ঝকঝক করছে রোদ। গেটটা টেনে বন্ধ করলেন। জং ধরছে আবার। হাতে একটু লাগল। চটিরও সোলটা হাঁ হয়ে গেছে। চললে প্লতাস টপাস আওয়াজ হয়। একটু চেপে চেপে হাঁটতে হয়। দরজা বন্ধ করে তালাটা লাগানো একটা গোলমালে কাজ। তিনটে চাবি প্রায় এক রকম। আগের দুটো তালা হারিয়ে গেছে। চাবি দুটো ফেলা হয় নি। কুঁড়েমি। তো কোন চাবিটা যে তালায় লাগবে দেখতে চোখে জোর লাগে। সিঁড়িটা অন্ধকার। যদিও বাইরে ঝকঝকে আলো। চোখে একটু ফোকাসে সমস্যা হচ্ছে। কিছুক্ষণ ট্রায়াল এন্ড এরর করে শেষপর্যন্ত লাগলো। তালাটা,টেনে দেখলেন দুবার। মীরার শেখানো। একবার নয় দুবার চেক করবে সবসময়।

চাবি পকেটে পুরে সিঁড়ি দিয়ে নামতে যাবেন , পাশ দিয়ে গটগট করে নেবে নীচে চলে গেল ওপরের পালবাবু। তাঁর কনুইটা এসে লাগল নির্মল দাসের পাঁজরে। তেমন জোরে না হলেও লাগলো। উঃ করে উঠলেন। কি হলো। দেখে যাবেন তো। মিনমিন করে একবার বললেন কিন্তু পালবাবুর কানে গেল বলে মনে হল না। যেন উনি দেখতেই পাননি নির্মল দাস বলে একজন প্রবীণ ব্যক্তি যিনি এই ফ্ল্যাটে ২৫ বছর ধরে আছেন, তিনিও সিঁড়ি দিয়ে নামছেন। আশ্চর্য। বাড়ী এসে মুভ লাগাতে হবে।

বাজারে মাছের গাড়ী এসেছে। সরকারী মাছ। সস্তায়। ছোটখাট রুই তেলাপিয়া। এলেই সামনে লাইন লেগে যায় বিভিন্ন ফ্ল্যাটৈর বাসিন্দাদের। সবাই রিটায়ার্ড। ৬৫ থেকে ৮০। সবাই নিজের বাজার নিজেই করেন। সন্তানের কেউ নিউ জার্সি কেউ বানগালোর কেউ সানিভেল। সংবাদ বিনিময় হয় মাছের লাইনে। নির্মলবাবুর কেউ নেই। তবু একবার দাঁড়িয়ে দাঁত বার করে হাসেন রোজ। আজও হাসলেন। কি অসীমদা, মেয়ের খবর কি?
অসীমদা কথা বলছিলেন সমাদ্দারের সংগে। কানে কথাটা গেল না। মাথাটা ঘুরলোও না একবার। নির্মল কিছুক্ষণ তাকিয়ে কোন উত্তর না পেয়ে এগোলেন ফল ওলার দিকে। চারটি পেয়ারা। দুটি ডাঁশা দুটি পাকা। নিয়মমত। একটি দাড়িওলা ছেলে যত্ন করে সাজিয়ে বসে থাকে। দাড়িটার জন্য নির্মল মাঝে মাঝে চিন্তায় পড়েন। ভাবেন বলবেন তুমি বাবা ওটা কেটেই ফেল। বলা হয় না। কি ভাববে। কিনেতু আশ্চর্য অসীমদা আমার কথা শুনতে পেল না কেন?

কি জানি ফলওলা আবার কি করে।
-আসেন কাকু আসেন। সারটা দেব তো? ওেই আমি দিসসি। দুইটা ডাঁশা দুইটা পাকা আজ খাইবেন। যাক চিনতে পেরেছে। পয়সা দিতে গিয়ে আব্বাস কাছে এসে একটা অদ্ভুত প্রশ্ন করে বসল।
-আচ্ছা আমাকে আপনি দেখতে পাইসেন তো? ঠিকঠাক। এইটা আমার কুর্তা। এই আমার নুর। সব?

প্রশ্নটা মাথায় গিয়ে ঠক করে লাগল নির্মল দাসের। হ্যাঁ দেখতে পাবো না কেন? এই তো তুমি। আমার চোখ এখনও ঠিক আছে। তোমায় ভাবতে হবে না তো।
-না কাকু। সকাল থেকে লোক জন আমার দোকানের সামনে দিয়ে চলে যাচ্ছে। আমি ডাক দিতিসি কেউ শুনেই না। মনে হয় যেন আমি যে দাঁড়িয়ে আছে আমার ডালা নিয়ে সেটা কেউ দেখতেই পাচ্ছে না।

-কি আজেবাজে কথা বলছো। তাহলে তুমি বাজারে গিয়ে কিনলে কি করে এসব?
-সকালে সব ঠিকই ছিল। এই আটটা থেকে গোলমাল শুরু। কেউ যেন আমাকে দেখতে পাচ্ছে না। আমি যেন ছায়া হাওয়া মানে যেন ভূত হয়ে গেছি।
বলতে বলতেই পাশে এক অডি গাড়ী এসে দাঁড়ায় তার থেকে নেমে আসেন এক মহিলা, চোখে গুচ্চি চুলে স্ট্রিক লাল না ঠিক লাল না উজ্জ্বল গেরুয়া। তিনি নেমেই নির্মলবাবুকে এক ধাক্কা মেরে সামনে এগিয়ে যান আমওলার কাছে, এই যে তোমার কাছে আলফান্সো আছে?
এই নিয়ে দুবার গোঁত্তা খেলেন। বুঝলেন। এবারে বুঝলেন তাঁকেও দেখতে পাচ্ছে না কেউ কেউ।
আব্বাস মুখ টিপে হেসে বলল আপনিও? আপনাকেও যে দেখা যাচ্ছে না। কি করবেন এবার?

আজ আটটা থেকে। আজ আটটা থেকে। দুজনের মুখের কথা কেড়ে নিয়ে পুলিশের গাড়িতে কে যেন ঘোষণা করতে করতে যায়…
আজ সকাল আটটায় আমাদের শ্রদ্ধেয় নেতার ঘোষণা মতে বিশেষ বিশেষ শ্রেণীর মানুষকে মেটাভার্স থেকে মুছে দেওয়া হল। তাদের আর সরকারী মেটাভার্সে দেখা যাবে না। কিছু বিশেষ সম্প্রদায় ও কিছু বিশেষ মানসিক রোগে আক্রান্ত মানুষের জন্য এই ব্যবস্থা আজ আটটা থেকে। জয় আর্যভার্সের জয়….

একটু টাইম দিল না? আমি একবার আমার ফেসবুকের বন্ধুদের টাটা করতে পারতাম। ভেবেই নির্মল দাসের খেয়াল হল গত কালই তাঁর সাকুল্য তিনজন বন্ধু তাঁকে আনফ্রেন্ড করে দিয়েছে।
-আব্বাস তোমাকে যে আর কেউ দেখতে পাবে না।
-আমার ঘরের বন্ধুদের সবাইকেই বাদ দিয়েছে কাকু। আমরা আমাদের নিয়েই থাকবো। আর আপনাদের মত দাদা কাকুরা তো আছেন। আপনি আমার কাছে পেয়ারা কিনবেন। কিনবেন তো?

 

About the author :

বাসুদেব গুপ্ত। বয়স ৭০। অধুনা নিবাস সল্ট লেক কলিকাতা। পেশা কম্পিউটার সফটওয়ার ডিজাইন ও এক্সপোরট। নেশা বাংলা ইংরাজী কবিতা ও গল্প লেখা। দ্বিতীয় প্রেম কুকিং

অণু গল্প (Scent Of A Story) – Basudeb Gupta

2 thoughts on “অণু গল্প (Scent Of A Story) – Basudeb Gupta

  • May 2, 2022 at 6:49 am
    Permalink

    নতুন স্বাদ পেলাম।
    খুব ভালো লাগলো , মজা লাগলো।
    এইরকম আরো নতুন কনসেপ্টের লেখা আপনার থেকে expect করি।

    Reply
  • May 3, 2022 at 11:50 am
    Permalink

    বাসুদেবাবুকে চিনি অনেকদিন। এ গল্পটির মতই তাঁর বেশীর ভাগ লেখাই সমসাময়িক। অবাক করা তাঁর গল্প আর কবিতা আমাদের ‘ভুলতে চাওয়া’, ‘আছে বলে বিশ্বাস করি না’- ধরণের সমস্যার মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেয়।

    Reply

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *