চায়ে চায়ে . . . – by Debika Saha Chowdhury

(A comic article in Bangla, by Debika Saha Chowdhury)

চ’য়ে চা!
চায়ের প্রতি বাঙালীর এক প্রাচীনঅহংবোধ জড়িয়ে আছে , আর হবে নাই বা কেন , পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ চা এই‌ বঙ্গবাগানেই যে জন্মায় ! সে চীনেরা যতই কেরদানি করে নিজের থালায় ঝোল টেনে নিক… আমাদের শাস্ত্রে লেখা আছে বিনা‌যুদ্ধে সূচ্যগ্র মেদিনীও দেওয়া বারণ তায় আবার মেদিনীপুর…!
চায়ের প্রতি এই দুর্বলতার যদি কোনো চাসুমারি করা সম্ভব হয় তাহলে এই‌ প্রতিবেদক তালিকায় উচ্চস্হান প্রাপ্ত হবে বলেই মনে হয়।‌ বাঙালী খিদে পেলেও চা খায় ঘুম পেলেও চা খায় দুঃখ পেলেও চা খায় আর আনন্দ পেলে তো কথাই নেই …বাঙালীর একমাত্র আনন্দ হল নিরন্তর আড্ডায় গল্পে আর আড্ডা কে চায়ের সমার্থক শব্দ বেশ অনায়াসেই বলা যায় , আড্ডা হবে চারমাথা পাচমাথা বা দশমাথায় সেখানে কাপের পর কাপ খালি হবে না সেরকম হওয়ার জো নেই , তর্ক হবে আর চায়ের কাপে তুফান উঠবে না তেমনটা হওয়াও প্রায় অসম্ভব !ভারতে চায়ের প্রচলন হয় 1830 সালে সেটা নেহাতই চীন থেকে আমদানীকৃত তারও সাত বছর পর আসামে ইংরেজ সরকারের বদান্যতায় দেশের প্রথম ” টি এস্টেট ” ‘চাবুয়া ‘ তৈরি হয় ! পরবর্তীতে ১৮৫৬ থেকে ১৮৬৬ এই দশবছর সময়কালে মোট ৩৯ টি চা বাগান তৈরি হয় দার্জিলিঙে যার মধ্যে মকাইবারি অন্যতম উল্লেখযোগ্য !
এ তো গেল তথ্যমূলক কচকচানি ! কিন্তু
ইংরেজদের পদাঙ্ক অনুসরণ করেই হোক বা বাঙালির বাবুয়ানি মেজাজের হাত ধরেই হোক আমজনতার একেবারে প্রাণের দোসর হয়ে উঠলো ওই এক-খুড়ি মধুতরল !
যেহেতু অল্পবয়সে আমরা যারা কমবেশি অনেকেই‌ ছাত্র পড়িয়ে টিউশনি নামক শনি কে নিজেদের ভাগ্যমঞ্চে নাচ করতে দিয়েছি তারা নিজেদের অজান্তেই কখন চাতাল হয়ে উঠেছি সেই টেরটুকুও পাইনি !
মদ খেয়ে মাতাল হওয়া লজ্জার কিন্তু চা খেয়ে চাতাল হওয়া বেশ উল্লাসের বটে!
মাষ্টারমশাই বা দিদিমণি কর্পোরেট বা কালচারাল সবেতেই তার মধুর উপস্থিতি, আমরা আজ আর উপেক্ষা করতে পারি না ! শুধু আড্ডায় বা অফিসে কেন , প্রেমেও কী আমরা তাকে ছাড় দিয়েছি , প্রেম আর গঙ্গারপাড়ে গোধূলি বেলায় মাটির ভাড়ের চা প্রজন্মান্তরেও এর প্রতিস্পর্ধী মিলবে কী?
ছোটবেলায় বড়রা বলতো মেয়েদের বেশি চা খেতে নেই গায়ের রং কালো হয়ে যায় , এ বড়ো ব্যথায় আঙ্গুল রাখা ধারণা , মেয়েদের ,সমাজ বড়ো নিক্তিতে মেপে রেখেছে , যেন ট্রাপিজের খোলা তারে ব্যালান্স না শিখিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে , তারা মোটা হলে সমস্যা রোগা হলে সমস্যা কালো হলে সমস্যা , বেশি লেখা পড়া জানলে সমস্যা না জানলেও সমস্যা…সে এক ফিরিস্তি জীবন ! কালো হয়ে গেলে তার সঙ্গী জুটবে না বাপ মা কে মোটা খেসারত দিতে হতে পারে তার জন্য !
ফর্সা হওয়ার ঝুটা কসমেটিক কোটি টাকার ব্যবসা করে নিয়ে যায় কতগুলো ভুল ধারণা আজীবন বয়ে চলার জন্য! আর আমাদের মত যারা ছন্নছাড়া অবাধ্য তারা কারও কথাই কানে না তুলে চায়ের কাপে ঠোঁট তোলে !
প্রেমিকের সঙ্গে বৃষ্টি ভিজে গুমটি চায়ের দোকানে আনন্দ খুঁজে নেয় , বন্ধুর বাড়িতে ভরদুপুরে উদয় হয়ে ” চা‌ খাওয়া ” বলে ওঠে ! কত অচেনা আধচেনা কমচেনা বন্ধুসঙ্গ গাঢ় হয়ে হয়ে মাত্র এক কাপ চায়ের বিনিময় ! কত বাদানুবাদ তর্ক শেষ হয় ওই মাঝখানের একটা কাপে ! কাজের ক্লান্তি থেকে মনের শান্তি সবেতেই অনস্বীকার্য তিনশো বছর পুরনো সেই জাদুপানীয় ” চা” !

 

About the author :


নামখানি গ্রাম্ভারী হলেও স্বভাবখানি জলবৎ। নব্বই দশকের নস্টালজিকতার মৌরুসিপাট্টা নেওয়া আছে। লেখালেখির ব্যাপারে তো বটেই জীবনের হিসেবের বেলাতেও অত্যন্ত কুঁড়ে। আস্তাকুঁড়ে ফেলে দেওয়া কুকুর ছানা বড় করতে শেখায় নিজের ছেলেকে। সমবায় ভিত্তিতে একটি ক্যাফেটেরিয়ার আধা মালকিন। আপাদমস্তক একজন অপেশাদার বাঙালি।

চায়ে চায়ে . . . – by Debika Saha Chowdhury

One thought on “চায়ে চায়ে . . . – by Debika Saha Chowdhury

  • March 21, 2022 at 5:21 pm
    Permalink

    খুব ভাল লেখা। বালিগঞ্জ স্টেশনের প্লাটফরমে ম্যালেরিয়া সহ অনেক রোগে চায়ের উপকারিতার সাথে এই ছড়াটিও আছে-
    “চায়েতে নাহিক’ কোন মাদকতা দোষ,
    কিন্তু, পানেতে করে চিত্ত পরিতোষ।।”

    Reply

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *