বিবাহ কি জীবনের পরিপূর্ণতা – By Prajna Parmita Roy

বিবাহ কি জীবনের পরিপূর্ণতা 

অথবা 

প্রতিবন্ধকতা?

আধুনিক যুগে এই বিষয়টি খুবই প্রাসঙ্গিক এবং যুগোপযোগী। এই নিয়ে আমাদের সকলেরই ভাবা উচিত আর জীবনের এই অতি প্রয়োজনীয় বিষয়ে যে কোনো সিদ্ধান্ত নেবার আগে যে কথাটি মনে রাখা দরকার তা হল, “ভাবিয়া করিও কাজ, করিয়া ভাবিও না।”

এই লেখার শুরুতেই যে কথা বলে রাখা দরকার, তা হল, কাউকে কোনোরকম আঘাত করা, কষ্ট দেওয়া, কারো বিরুদ্ধে কথা বলার জন্যে লিখছি না। বিষয়টি নিয়ে কিছু লেখা খুব কঠিন। যাই লিখি না কেন, কারো অপছন্দ বা কারো পছন্দ হতেই পারে। এই লেখা পড়ে কেউ কষ্ট পেলে, আমি তার জন্যে দুঃখিত থাকবো। যাদের ভালো লাগবে, তাদেরকে কাছে থাকবো কৃতজ্ঞ।

এই যে ভাবনাটা যে বিয়ে কি পূর্ণতা? অথবা বন্ধন? এই বিষয়টি নিয়ে চিন্তা ভাবনার আগে আমাদের মনের ভিতরে যে অহংকার আছে, তাকে সবার আগে ভুলে যেতে হবে।

বিয়ে ব্যাপারটা যারা তৈরী করেছিলেন কোনো একসময়ে, তারা আমরা নই, আমাদের পূর্বপুরুষেরা এই জিনিস সমাজে নিয়ে এসেছেন, বহুযুগের চিন্তাভাবনার পরে। তখন আমরা তো ছিলাম না। মানতে তো হবেই, তখন এই পদ্ধতি তারা করেছিলেন সকলের ভালোর জন্যে।

আমাদের আগের লোকেরা ভালো কিছু করে নি, ভাবে নি, এই ধারণা থেকে বেরিয়ে এসে দেখতে হবে, আমরা এর থেকে ভালো কি করতে পারি! অথবা আরো কিভাবে এগোলে এই প্রথাকে একটি স্বচ্ছ, সাবলীল, সুন্দর এবং সর্বজনগ্রাহ্য রূপ দেওয়া যায়।

সেই কোন যুগের কথা, যখন মানুষ আদিম অবস্থায় ছিল, একসময় তারা দলবদ্ধ হয়ে থাকার সিদ্ধান্ত নিল, কারণ গোষ্ঠীবদ্ধ জীবনের সুবিধাগুলো তারা বুঝতে পারছিলো একটু একটু করে। হাজার হাজার বছর ধরে মানব সভ্যতা তো এগিয়েই চলেছে, আর এই এগিয়ে চলার পথে অনেকরকম পরীক্ষা নিরীক্ষাও তো হয়েই চলেছে।

আমরা ছাড়া আমাদের ভালো কেউ বোঝে নি বা বোঝে না, আমরা সবার থেকে ভালো বুঝি, এই ভাবনা থেকে সরে গিয়ে ভাবতে হবে কি কি বিষয় সংযোজন করলে বা বাদ দিলে আরো ভালো পরিস্থিতি তৈরী করা যেতে পারে। 

আমাদের ঐতিহ্য, আমাদের সংস্কৃতি, এইসব বড় বড় কথা না বলে বরং বলি মানুষের ধর্মের কথা। ধর্ম কি? মানুষ মানুষের কথা ভাববে, একজন আর একজনের উপকার করবে, প্রয়োজনে পাশে থাকবে, সহমর্মিতা, দয়া, ক্ষমা, প্রেম, ভালোবাসা সমস্ত বোধই হল মানুষের ধর্ম। আদিকাল থেকে আজও আমরা যখনি এই মানবধর্মের প্রকাশ দেখি, তখনি আমরা আনন্দে ভরপুর হয়ে উঠি, কারণ আমরা মানুষের ধর্মে বিশ্বাস করি।

সকলেই আমরা জানি, একসময়ে শিক্ষার জন্যে মেয়েদের কি সাংঘাতিক লড়াই চালিয়ে যেতে হয়েছে, সমাজে মেয়েদের সম্পূর্ণ শিক্ষার সুযোগ এবং অধিকার দেওয়া নিয়ে বহুকাল থেকে চেষ্টা করে আজ আমরা একটা জায়গায় এসে পৌঁছেছি, কিন্তু অনেক পথ এখনো চলা বাকি।

নারী পুরুষের সমানাধিকার নিয়ে আজও বিতর্কের শেষ নেই। তাহলে একটা ব্যাপার তো বোঝা যাচ্ছে যে, লড়াই কিন্তু আমরা চালিয়েই থাকি সব যুগে এবং সব সমাজে

বিয়ে করে সংসার করার পিছনে যুক্তি যাই থাকুক, এটা যে সবদিক থেকে একটি খারাপ প্রথা অযৌক্তিক ব্যাপার, এটা বলা বোধহয় ঠিক হবে না। বিয়ে করে জীবনযাপন করার জন্যেও একসময়ে চিন্তাভাবনা তৈরী হয়েছিল নিশ্চয়ই, তাই আজও বিবাহ যোগ্য পুত্র বা কন্যা থাকলে, একটি নির্দিষ্ট সময়ের পর বাড়ীর লোকেরা বিয়ে দেবার বিষয়ে ভাবেন।

আমাদের বহুকালের পরিবারতন্ত্রের অভ্যেস যেখানে চলে আসছে, সেখানে তর্ক বিতর্ক, সত্যি মিথ্যের বিচার করা নিতান্তই অপ্রয়োজনীয়। বিশ্বাসটাই আসল কথা। এই বিশ্বাসই আমাদের ভিত্তি। পরিবার থেকে আমরা কি কি পেয়েছি, আর কি কি পাইনি, তার হিসেব করতে যদি যাই, তাহলে নিশ্চিন্তে একথা আমরা সবাই একবাক্যে বলতে পারবো যে, আশ্রয়, নিরাপত্তা, অন্তহীন স্নেহ, ভালোবাসা, নির্ভর করার এবং দায়িত্ব নেবার মানুষ, অন্যায় আবদার মেটানোর জায়গা, যা খুশী তাই করার স্বাধীনতা এবং শাসন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, উত্তরাধিকার, আমাদের জন্মের বৈধতা, আর সবার উপরে আমার একটি পারিবারিক এবং সামাজিক পরিচয়, যা আমরা আমৃত্যু বহন করে চলি।

এত কিছু যে পরিবার আমাকে দেয়, সেই পরিবারই আবার আমাকে নিজের একটি পরিবার তৈরী করার মত সব ব্যবস্থাও করে দেয়। তাই একে যদি আমরা পরিপূর্ণতা না বলতে পারি, তাহলে কি বলবো?

বিবাহিত জীবন কার কেমন ভাবে তৈরী হবে বা পূর্ণতা পাবে, তা সম্পূর্ণ নির্ভর করে যে দুটি মানুষ পরিবারিক বন্ধনে নিজেদের বাঁধতে চলেছে তাদের উপরে।

বন্ধন আর মুক্তি এই দুটি ধারণা বিয়ের পর পাল্টে যায় নানা কারণে। সেই বিশ্লেষণ না করেও একটা কথা বলাই যায়, বন্ধন হলেও দুজনের। আর অবশ্যই তা পূর্ণতার বন্ধন। প্রতিবন্ধকতাকে লড়াই করে হারিয়ে দেওয়াটাও কিন্তু দুজনেরই দায়িত্ব।

নারী পুরুষ কেউ কারো থেকে বড় নয়, ছোটও নয়। দুজনেই সমান। যদি কোনো দিকে কেউ অন্য জনের সমান না হতে পারে, তাহলে আর একজনের উচিত জীবনসাথীর হাত ধরে তাকে সমপর্যায়ে নিয়ে আসা, অথবা নিজেকে অন্যের পাশে একটু নামিয়ে আনা। এ প্রসঙ্গে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে স্মরণ না করে পারছি না। দুটি মন, দুটি প্রাণ, যদি ভেবে নিতে পারে, “কিছু নাই ভয়, জানি নিশ্চয় তুমি আছ আমি আছি।” এই পর্যন্ত যারা পড়ে ফেলেছেন, তাদেরকে বলি, আপনারা এতক্ষন যা পড়লেন, তা সবই ব্যক্তিগত চিন্তাধারার প্রকাশ।

এবারে আপনাদের জন্যে কিছু কথোপকথন তুলে দেব, যেগুলো আমার নয়, সাধারণ মানুষের কথা, এই পর্যায়ে আপনাদের উপরেই রইলো বিচারের ভার, স্থির করুন, বিবাহিত জীবনকে কতটা পরিপূর্ণ বলতে পারবেন, অথবা প্রতিবন্ধকতাই ভাববেন।

বিভাগ :

১. কাজের মাসী আর বৌদি

“মানুর মা, তুই এত ওষুধ কার জন্যে কিনবি?

 – লোকটার তো জ্বর কাল থেকে, ওষুধ তো দিতি হবে।

 – সুস্থ হলে আবার তো তোকে মারবে।

 – পুরুষ মানুষ ওমনি একটু করে, তাই বলে তাকে অসুখের 

সময় কি দেকবো না? পয়সা পেলে এটা সেটা এনে দেয়, খাবার কিনে খাবায়, আদর করে, সিমানা (cinema) দেকাতে নিয়ে যায়, ওষুধ খেলিই তো ভালো হবে বলো? তোমারে দাদাবাবু কি দুটো খারাপ কথা কখনো বলে নাই? তাই বলে তুমি কি বসে আচো? সেই তো দাদাবাবুর জন্যে সবই কোচ্চ। তোমার আপনার জন বলেই তো নাকি গো বৌদি

মেয়েরা বিবাহিত জীবনকে বোধহয় এইভাবেই ভেবে নেয়, ওই একধরণের মেনে নেওয়া আর মনে নেওয়া। ভাবটা এমন যে, অশান্তি তো থাকবেই, তবু চালিয়ে নাও।

২. দুই বান্ধবী।

সুমনা আর দীপ্তি।

সুমনা – অনেকদিন পরে বেশ জমিয়ে আড্ডা মারা যাবে।

দীপ্তি – হ্যাঁ রে।

কবে এলি?

পরশু।

একা?

হ্যাঁ।

বিয়ে করলিই না?

না।

কেন?

যখন একটি মেয়ে একজন বিবাহিত পুরুষ কে ভালোবেসে 

ফেলে, তখন আর তাকে বিয়ে করবে কি করে? তার তো একটা সংসার আছে। সেখান থেকে তাকে তো ছিনিয়ে আনা যায় না। বিয়ে করতে পারলে সব থেকে বেশী খুশী তো আমিই হতাম।

অন্য কাউকে করে নিতিস।

তা কি হয়? যাকে হৃদয় সমর্পন করেছি, তাকে সব দিতে 

পারি, কিন্তু অন্য আর একজনকে ঠকাবো কি করে?

তোর এই ভালোবাসার কথা তিনি জানেন?

নিশ্চিত জানেন, বোঝেন, অনুভব করেন।

তাহলে?

তাহলে আবার কি? এই জন্মে দুজনের বিয়ে হবে না 

কখনো। এভাবেই কেটে যাবে। বিয়ে যদি করতে পারতাম, তাহলে কতটা কি পেতাম, তা আমার চেয়ে বেশী কেউ জানে না। সুমনা, আমি হাজার চাইলেও আমার বিয়ে কোনোও দিন হবে না।

ঠিক কথা। বিয়ে একটা নিটোল ব্যাপার দেয়, মানসিক তৃপ্তি 

দেয়। ভালোবাসার মানুষকে নিজের করে পাওয়া, কি যে ভালো লাগে! দীপককে বিয়ে না করতে পারলে আমি তো মরেই যেতাম।

তোর ভাগ্য।

বিয়ে করা আর বিয়ে হয়ে যাওয়া দুটো এক নয়। কারো বিয়ে হয়ে যায় সময়মতো, কারো হয় না, হতে পারে না অনেক কারণে। কিন্তু ঘর সংসারের একটা আঁটো সাঁটো ব্যাপার আছে, যেটা আমাদের একটা অনুশাসনের মধ্যে রাখে, আমাদের অনেকরকম ভাবে মানসিক আরাম এবং নিশ্চিন্তি দেয়। 

৩. তনু মাতৃহারা মেয়ে। অল্প বয়েস থেকে বাবার আদরে মানুষ। রাজন দক্ষিণ ভারতীয় একজন ছেলে। বাবার অফিস এর একজন সহকর্মী রাজন। মাঝে মাঝে দু তিন জন এরকম বন্ধু বা সহকর্মী তনুদের বাড়ী আসে, খায় দায়, চলে যায়। তনুকে সকলেই স্নেহের চোখে দেখে এবং ভালোও বাসে। বাসুদেব গত পাঁচ বছর ধরে তনুর জন্যে পাত্র খুঁজে যাচ্ছে, তবে মনের মত হচ্ছে না।

অবশেষে, তনু একদিন তার বাবাকে জানিয়ে দিল যে, সে রাজনকেই বিয়ে করবে।

বাবা বাধা দিলেন না তেমন, কিন্তু কারণ জানতে চাইলেন।

রাজনের বয়েস চল্লিশ, বাসুদেবের থেকে দশ বছরের ছোট, তনুর বয়েস আঠাশ। রাজন কালো, দেখতে ভালো নয়, চোখ লালচে, তবে লম্বা ভালোই এবং কোনোরকম নেশা করে না।

বাবার প্রশ্নের উত্তরে তনু বলেছিলো, “ওকে আদর যত্ন করার আর ভালোবাসা দেবার লোক নেই বাবা, আমি ওর ওই খালি জায়গাটা ভরিয়ে দিতে চাই।”

“তুই কি করে জানলি, বুঝলি এত কথা?”

“এখানে তো দু/চার বার এসেছে গত দু বছরে। ওকে দেখে মনে হয়েছে, ও একটা ক্লান্ত পাহাড়। বাইরে থেকে দেখে বোঝা যায় না, ওর পাথরের মত শরীরের ভিতরে আছে এক ব্যথার বোঝা। ও হয়তো বোঝে না, এই ব্যথার ভার ওকে পিষে ফেলছে ভিতরে ভিতরে। ও নিজে থেকে কোথাও ধরা দিতে পারবে না বাবা, কিন্তু যে ওকে একবার বেঁধে নেবে, সেই বন্ধনে ও মুক্তি পাবে।”

অনেকদিন পরে বাসুদেব জেনেছিলেন, রাজন মাতৃহীন হয় মাত্র আট বছর বয়েসে। বাবা আবার বিয়ে করলেও, সেই মা রাজনকে কোনোদিনও নিজের মনে করেন নি। বাবাও যখন মারা যায়, তখন রাজনের আর ও বাড়িতে থাকাই হল না। রোজগারের আশায় তাকে পথে নামতে হয়েছিল। তারপরে কাজকর্ম আর নিজের জীবনে বেঁচে থাকা ছাড়া আর কিছুই ছিল না।

একরকম জোর করেই তনু রাজনকে বিয়ে করেছে। রাজন তনুর জোরের কাছে আত্মসমর্পণ করেছে নিঃস্বার্থ ভাবে।

মন কখন কোথায় ধরা পড়ে, সেকথা মন নিজেও সবসময় বোঝে না। সেই শেষ পর্যন্ত অগতির গতি রবীন্দ্রনাথ ছাড়া নিজের ক্ষমতায় ভালোবাসার রূপকে ব্যাখ্যা করা আমার পক্ষে তো অসম্ভব।

“গোধূলির গীতিশূন্য স্তম্ভিত প্রহরখানি বেয়ে

গেলে তুমি দূর পথে,

নির্নিমেষ রহিলাম চেয়ে।

…….

অন্তরে অলক্ষ্যলোকে

তোমার পরম আগমন

লভিলাম চিরস্পর্শমনি;

যে দ্বার খুলিয়া গেলে

রুদ্ধ সে হবে না কোনোমতে,

কান পাতি রহে তব

ফিরিবার প্রত্যাশার পথে……” 

৪.  অমৃতা আর আদিনাথের গল্পটাও আপনাদের বলবো। শুনলে মনে হয় জীবন সত্যিই গল্প? না কি গল্পই জীবন?

আদিনাথ আর অমৃতা বিবাহ বিচ্ছিন্ন দম্পতি। কারণ যাই হোক, আজ প্রায় পঁচিশ বছর হল তারা আলাদা। বিয়ের পাঁচবছর বাদেই তাদের এই বিচ্ছিন্ন জীবন শুরু। একমাত্র সন্তানের দায়িত্ব কেউ নেবে না বলে, তাকে অনাথালয়ে মানুষ হতে হল। দুজনেই তারা ফিজিক্স এর অনেক উঁচুতলার প্রফেসর। মাঝে মাঝে সেমিনার বা কনফারেন্স করতে গিয়ে কোথাও দেখা হলেও তারা অপরিচিতের মতোই থাকে। আদিনাথ দ্বিতীয়বার বিয়ে করেছিল সোহিনীকে। সোহিনী বছর দুই পরে আদিনাথকে ছেড়ে চলে গেছে। অমৃতা বিয়ে করে নি আর।

আদিত্য যেখানে বড় হয়েছে, সেখানে দুজনেই টাকা পাঠিয়ে দায়িত্ব পূর্ণ করতো। তারপর কবে একদিন সব কেমন করে যেন গোলমাল হয়ে গেল। অনাথালয়ের অধ্যক্ষা মাদার মারা গেলেন। নতুন মাদার কে হল, আদিত্য বড় হয়ে কোথায় গেল, কেমন দেখতে, কি করে তা আদিনাথ আর অমৃতা কেউ ঠিকমতো জানে না।

আদিনাথ আজ ষাট। অমৃতা সাতান্য। সম্প্রতি বিদেশে একটি কনফারেন্স করতে গিয়ে দুজনেই দুজনের সঙ্গে কথা বলেছে, বিষয় আদিত্য। কি অদ্ভুত, তারা কেউ জানে না, আদিত্য এখন কোথায়? অনাথালয়ের খোঁজ করতে যাওয়া হয় নি। এরপর থেকে তারা আবার কথা বলছে, দেখা করছে, কাছাকাছি আসছে। কিন্তু কিছুতেই একে অন্যের সঙ্গে মানসিক দূরত্ব মিটিয়ে নিতে পারছে না। কারণ বন্ধনের সূত্রটাই হারিয়ে গেছে। আর কে না জানে, সন্তানের বন্ধন সারাজীবন মা বাবাকে মুক্তি দিয়ে এসেছে। প্রতিটি বাবা মা ছেলেমেয়ের দিকে তাকিয়ে জীবনের সব দুঃখকে ভুলে যায়।

ঈশ্বর মঙ্গলময়, প্রার্থনা করি, তিনি যেন আদিত্যকে আর তার বাবা মাকে মিলিয়ে দেন। বিয়ে এদের কাছে ছিল বিশ্রী এক বন্ধন, তারা এর থেকে আলাদা হয়েছিল পূর্ণতার আশায়। আজ তারা মুক্ত, কিন্তু নিরন্তর খুঁজে চলেছে একটিমাত্র বন্ধনকে।

প্রতিদিনের যৌথ জীবনে দুটি মন, দুটি প্রাণ একসঙ্গে পথ চলতে গিয়ে, মাঝে মাঝে অসুবিধা তো হতেই পারে, কারণ আমাদের সবারই আলাদা আলাদা চিন্তা ভাবনা, আশা আকাঙ্খা আছে। সবকিছুর সমন্বয় সাধনটাও তো আবার দুজনকেই করতে হবে।

৫. বয়েসে অনেক ছোট, সম্পর্কে আমারই এক আত্মীয়ের কথা বলি।

   মালা যখন ক্লাস নাইনে পড়া মাত্র পনেরো বছরের মেয়ে ছিল তখন সে পালিয়ে যায় বাড়ী থেকে, যার সঙ্গে সে ঘর ছাড়ে, তার বয়েস ছিল কুড়ি। পঁয়ত্রিশ ছত্রিশ বছর আগে এইরকম ঘটনা হলে পরিবারের সবাই সেই ঘটনাকে একদম চেপে যেত। থানা পুলিশের কোনো কথাই হতো না। ফুটফুটে সুন্দর একটা মেয়েকে তুলে নিয়ে যাবার পিছনে কিছু কারণ তো ছিলই, যৌবনের বিকৃতি, শারীরিক লোভ, টাকা পয়সা রোজগার ইত্যাদি। ভয় দেখিয়ে মালাকে টুকুন প্রথমে কলকাতা থেকে দিল্লীর একটি বস্তিতে নিয়ে গিয়ে তোলে। সেখানে দুমাস কাটানোর পর যখন টাকার অভাব প্রকট হয়, তখন টুকুন মালাকে বিদেশে বিক্রি করার চেষ্টা শুরু করে। সেইসময় অনেক চেষ্টা করে, বহু কাঠখড় পুড়িয়ে মালা দিল্লী থেকে পালিয়ে কলকাতায় নিজের বাড়িতে ফিরে আসে। মালা সবার ছোট, বড় ভাইবোনেরা তাকে খুব হেয় চোখে দেখতে শুরু করে তখন থেকেই।

   মালা পড়াশুনাতে ভালোই ছিল, তার মা বাবা তাকে ঘরে জায়গা দিলেও, মনের মধ্যে স্থান দেয় নি। যাই হোক, সে পড়াশুনা শুরু করে, যখন মালা বি.এ. পড়ে, তখন তার সৌন্দর্য এতটাই ছিল, যে চোখ ফেরানো যেত না। একটি ছেলের সঙ্গে তার প্রেম হয় এবং বিয়েও হয়। বিয়ের দুবছর পর একটি ছেলে হয়, এরপর অশান্তি শুরু হয়ে যায়। তারপর বিয়ে ভেঙে যায় মালার।

তারপর ছেলে বড় হতে লাগলো মালার কাছে। ইতিমধ্যে মালা দর্শনশাস্ত্রে M.A.পাস করে। বলতে ভুলে গিয়েছি আগে, মালা ছোটবেলা থেকেই লেখে খুব ভালো। যেভাবেই হোক, টুকটাক রোজগার করে সে নিজের এবং ছেলের রোজকার জীবন অতিবাহিত করছিল। এরমধ্যে একজন পুরুষের চোখে পড়ে যায় মালা। মালার এবং তার ছেলের জন্যে এই মানুষটির দরদী মন ছিল, ছিল সাহায্য করার ইচ্ছে, মালা এই উদার মনের মানুষটির কাছে ধরা দিতে বাধ্য হল। সমস্তদিক থেকে এমনভাবে ক্ষেত্র প্রস্তুত হল যে, শেষপর্যন্ত মালা আবার একবার বিয়ে করেই ফেললো। ঠিক দুমাস পরের থেকে দুজনের ভিতরে তিক্ততা শুরু হল। ততদিনে মালা বুঝে গেছে, এই লোকের বিকৃত যৌনতা, অত্যাচারের নানারকম ফন্দি, আর সবার উপরে মেরে ফেলার চেষ্টা। বয়সে দশ বছরের বড় একটি সুস্থ দেহমনের মানুষ বলে যাকে ভেবেছিল, একজন অভিভাবক হিসেবে যাকে পেলে জীবনের বাকি দিনগুলো কাটিয়ে দিতে পারবে বলে ভেবেছিল, সেই মানুষের রাতের অন্ধকারের রূপ এবং ভয়ঙ্কর চেহারা দেখে মালা ঠিক করেছিল বিষ খেয়ে মরে যাবে। ছেলের কথা ভেবে পিছিয়ে যায়। দিনরাত শুধুই সে চিন্তা করতে থাকলো একটাই কথা। কি করে পালিয়ে বাঁচবে?

একসময়ে মালা বুদ্ধি করে পালায়। কিন্তু তখন তার দু পায়ে গোড়ালির উপরে লাল দগদগে ক্ষতস্থান থেকে রস রক্ত ঝরছে ধারায়। পিঠে চাবুকের আঘাত স্পষ্ট, মাথার চুল একদিকে কাটা, অন্য দিকে লম্বা, ঠোঁটে, গালে, গলায় কামড়ানোর দাগ। এইসব নিয়ে সে থানায় যেতে পারে নি। কয়েকদিন পরে সে যায়। সেখানে তার কথা শুনে আর আগেকার ঘটনা জেনে পুলিশ কিছুই তেমন করে নি, উল্টে নানারকম অশালীন আচরণ করে মালাকেই বুঝিয়ে দিয়েছে যে, দোষ তারই, সে চরিত্রহীন মেয়ে। এরপর মালা কিছুই করে নি।

একজন মেয়ে দুবার কি করে বিয়ের কথা ভাবে? এ প্রশ্ন করেছিল মালার বড় ভাই। এই নিয়ে অনেক অশান্তি বাড়ীতে হয়েছিল। মালার কাছেই শোনা কথা, “রুমিদি, সবাই একথাই আমাকে বলে। আমি দুবার (মালার দুবার বিয়ে হয়, প্রথমটা বিয়ে নয়) কেন বিয়ে করলাম? ঠকে গিয়েও কি আমার শিক্ষা হয় নি?

আমি একটি অতি সাধারণ মেয়ে, জীবনে তেমন কোনো চাহিদাও নেই। ঘর সংসার করবো, ছেলে মেয়ে মানুষ করবো, এইসব ছাড়া তেমন ভাবে কোনো বিশেষ স্বপ্নও ছিল না। বিয়ে আমার কাছে একটা আজন্মকালের বিশ্বাস। মা, ঠাকুমা, তোমাদের মত বড় দিদিরা সবাইকে দেখে এই বিশ্বাস আমার ভিতরে দৃঢ় হয়েছে।” 

আজ মালা একজন প্রতিষ্ঠিত লেখিকা, এছাড়া একজন মাঝারি থেকে উচ্চ মানের প্রকাশিকা, একজন শিক্ষিকা, একজন ভালো মা। কিন্তু আজও তার কষ্ট হয়, একটি স্বাভাবিক বিবাহিত জীবন সে পেল না বলে।

এই সংসারের প্রতি মাধুর্য্য আর প্রীতি রেখে চললেও জীবন কখনো কখনো ব্যর্থ হয়ে যায়। কেন এমন হয়, তার কোনো কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না। মানুষের ভিতরে মানুষ যখন তৃপ্তির সন্ধান করে, তখন মনে হয়, একজন কাউকে আমার সমস্তকিছু অর্পণ করি, নিবেদন করি। কিন্তু ওই যে, “দিতে চাই, নিতে কেহ নাই।”

৬. পড়াশুনা করার সময় হোস্টেলে ছিলাম কিছুদিন, ওখানে দেখেছি  দুই দিদিকে, তারা লেসবিয়ান ছিল, সবাই বলতো। পরে জেনেছি একথা সত্যি। ওরা দুজনেই পরীক্ষা না দিয়ে দিয়ে পাঁচ বছরের পড়াশুনাকে প্রায় আট বছর ধরে চালিয়েছিল। একটা সময়ের পর এইসব ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে হোস্টেলে কেউ মাথা লাগাতো না, ওরা ওদের মতোই থাকতো। অনেকদিন পরে হঠাৎ একদিন এয়ারপোর্টে ওদের একজনের সঙ্গে দেখা, সেই কথাবার্তা তুলে দিলাম।

  • আরে সুচিত্রা না?

– হ্যাঁ, কিন্তু আপনাকে তো ঠিক…..

আমি অপর্ণা রে।

অপর্ণাদি! আমাদের ডিপার্টমেন্টের রঙীন প্রজাপতি? তুমি?

হ্যাঁ রে আমি।

এ কি চেহারা হয়েছে তোমার? তুমি আমাকে চিনলে কি 

  করে?

  • তোর চুলগুলো সাদা হয়েছে, কিন্তু মুখটা তো একই আছে।”

পরিচয় আর অনেক পুরোনো কথার শেষে, প্রাসঙ্গিক বিষয়টাই বলবো এখানে।  

অপর্ণাদি চার ভাইবোনের একজন এবং সকলের ছোট হয়েও বিয়েটা আর করে উঠতে পারে নি। অনেক চেষ্টা করেও হয় নি। বিয়ে ঠিক হয়েছে কয়েকবার, কিন্তু কিভাবে যেন পাত্রপক্ষ তার পুরোনো কথা জেনে যেত এবং বিয়ে আর এগোতে পারতো না। চাকরি করে এবং থাকে হাজারীবাগে। বয়েস চৌষট্টি। পরে নাকি জানা গেছে, ভাইবোনেরাই তার বিয়ে ভেঙে দিত। 

“জানিস, আমি কিন্তু ওমনি মেয়ে ছিলাম না, সঙ্গীতাদি আমাকে, আমার জীবনটাকে নষ্ট করে দিল। ও কেমন বিয়ে করে ছেলে মেয়ে নিয়ে ঘর করছে, আর আমার কপালে কিছুই জুটলো না। আমি চাকরি পাবার পর আমাকে বাড়ী থেকেও বার করে দিয়েছে সবাই। এখন অবসর জীবন, একটা বাড়ী ভাড়া করে কলকাতায় থাকি। অবসরের পরে হাজারীবাগে কেউ বাড়ী ভাড়াও দেয় নি আমাকে। কলকাতায় তো কেউ এসব নিয়ে ভাবে না, তাই আছি এখানে।

আজ আমি খুব একা রে। বাবা মা তো কবেই চলে গেলেন, বড়দাও নেই। ছোড়দা আর দুই বৌদি কেউ আমার খোঁজ নেয় না, কতবছর একা একাই কেটে গেল। নিজের লোক বলতে কেউই নেই আমার। সুখ দুঃখের কথা, কষ্টের কথা কাকে বলবো রে? হয়তো একদিন বন্ধ ঘরে একাই মরে যাব, কেউ জানতে পারবে না। আসবি একদিন আমার এই বাড়ীতে?”

আমি অপর্ণাদির হাত দুটো ধরে কথা দিলাম। আমি তো যাব একদিন ঠিকই।

আমি ভাবছি দিদিটা কি সুন্দর ছিল, সবাই বলতো প্রজাপতি। কে কিভাবে তার জীবন কাটাবে বা কাটিয়েছে সেটা একান্তই তার নিজস্ব ব্যাপার। কিন্তু তাই বলে এই অবস্থা হবে? শুকনো, বিশ্রী একটা অসুস্থ চেহারা হয়ে যাবে? হয়তো কোনো অসুখও আছে, হয়তো ডাক্তারও দেখায় না ঠিক মত। জীবনের কিছুটা সময় একটু নিজের ইচ্ছেমত চলেছিল বলে, তাকে এতটা খারাপ অবস্থায় দিন কাটাতে হবে? মানুষের বুদ্ধি, ভালোবাসা, আশা আকাঙ্খা কি সবসময় নিয়ম মেনে চলতে পারে? নিজের জীবনের হিসেব কি নিজে সবসময় ঠিকঠাক করে ফেলা যায়? বিবাহিত হয়ে থাকার সমস্তরকম সুবিধা অসুবিধা পাওয়ার অধিকার তো অপর্ণাদিরও ছিল।

৭. আর মাত্র একটি মানুষের কথা বলে এই পর্ব শেষ করবো। 

সুধাংশু মুখোপাধ্যায়, বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসের একজন স্বনামধন্য এবং বিশ্ববিখ্যাত অধ্যাপক। বিদেশের বিভিন্ন বিশ্ব বিদ্যালয়েও যিনি বহুবার বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস নিয়ে বক্তৃতা, সেমিনার, কনফারেন্স ইত্যাদিতে যোগদান করেছেন, সারা বিশ্বে তার কাছে গবেষণা করেছে, এমন ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা অনেক। ধুতি পাঞ্জাবী পরা এই অধ্যাপক ছিলেন চলমান জ্ঞানের ভান্ডার। ওই পোশাক পরে তিনি দুনিয়া ঘুরে বেড়াতেন। পাঞ্জাবীর ওপরে বোতাম ছিঁড়ে গেলে সেফটিপিন লাগিয়ে নিতেন। বিদেশের যে কোনো খাবার জায়গায় হাত দিয়েই খেতেন।

পড়াশুনা এবং পড়ানোতে এতবেশী মগ্ন ছিলেন জীবনভর, যে, বিয়ে করার সময়ই পান নি। শেষ বয়সে, প্রায় পঞ্চান্ন বছরে পৌঁছে তিনি বিয়ে করেছিলেন একজন হেডমিস্ট্রেসকে। আমরা যখন এ গল্প শুনি, তখন সবাই খুব মজা পেলাম। তারপর একদিন গল্পের সময় উনি বললেন, “শোনো অনেকদিন ধরে এক পাত্রের আর বিয়ে হচ্ছে না, কি করা যায়, ঘটক লাগানো হলো। ঘটক তো পাত্রী খুঁজে খুঁজে হয়রান। তখন হঠাৎ একদিন এক পাত্রীর বাড়ী যাবেন বলে, ঠিকানা চিনে যেতে গিয়ে আর এক ঘটকের পাল্লায় পড়ে গেলেন। একথা সেকথার পর নতুন ঘটক বললেন, , তুমি কি সেই পাত্রী খুঁজছো? যমুনা পুলিনে বসে, এই হাসে, এই কাঁদে, একাকীনি বিরহিনী দত্ত?

   তখন প্রথম ঘটক উত্তর দিলেন, আরে! এ তো রাজযোটক।

– পাত্রের পরিচয়?

– শুনবে?

– ওপারেতে দেখা যায়, দিনভর ডিঙ্গা বায়, নাম তার 

  রাখহরি ভক্ত। 

তারপর কি আবার? বিয়ে হয়ে গেল।

একদিন কেউ প্রশ্ন করেছিল মাস্টারমশাইকে, “কেমন আছেন?” উত্তরে বলেছিলেন “তোফা আছি, শোনো, দুষ্টু ছেলেরা সবার কাছে যেমনই থাকুক না কেন, হেডমিস্ট্রেসের কাছে সবসময় ভালো থাকে।” 

এর থেকে ভালো আর কী উত্তর হতে পারে? আমার তো জানা নেই।

বিভাগ :

বিয়ে আমাদের জীবনে পরিপূর্ণতা না প্রতিবন্ধকতা, তা নির্ভর করে বোধহয় আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির উপরে।

আমার ভিতরের মানুষটি যদি দিনরাত মাথা উঁচু করে থাকে তাহলে তো, সবার থেকে আমি আলাদা, আমি বড়, আমি ভালো, আমি বেশী, এই চিন্তা থেকে বেরোনো অসম্ভব। আমার বিচ্ছিন্নতা, আমার অহংকার সকলকে আমার থেকে দুরে সরিয়ে রাখে।

এই কারণে অনেকসময় বিবাহিত জীবন ভেঙে যায়, নষ্ট হয়ে যায়। 

শুধুই নিজেকে নিয়ে বড় হতে চাইলে, একসময় একা হয়ে যাবার প্রবল সম্ভাবনা, আর সারাজীবন একসঙ্গে পথ চলার কিছু সুবিধা তো আছেই। তুমি পিছনে পড়ে গেলে আমি একটু দাঁড়িয়ে যাব, আর তুমি এগিয়ে গেলে বুঝবো, এটাই সঠিক পথ, নিশ্চিন্তে চলতে পারবো।

আমাদের সকলেরই কাজকর্ম করতে গিয়ে অনেকরকম বাধা বিপত্তির সম্মুখীন হতেই হয়, তাই বলে যদি হতাশ হয়ে পড়ি, তাহলে তো কোনো কিছুতেই সম্পূর্ণ মন দেওয়া সম্ভব হবে না।

বহু আত্মীয়স্বজন, বন্ধু, চেনা পরিচিত, ব্যক্তিগত বিবাহিত জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে যা সঞ্চিত হয়েছে সেইটুকু এখানে পাঠকদের বলতেই পারি।

আমার একটি উপলব্ধির কথা বলতে চাই এখানে, তা হল বিশ্বাস। 

বিশ্বাস মানুষের মনের এমন একটা অবস্থা, যেখানে একটা ভরসার ভাব থাকবেই। 

যার মধ্যে এই স্থির বিশ্বাসের অভাব আছে, তার মধ্যে সবসময় একটা অস্থিরতা থাকে। পান থেকে চুন খসলেই সে ভাবে তার সব নষ্ট হয়ে গেল। কিছু আর করা যাবে না, সব শেষ, সর্বনাশ হয়ে গেল, কি হবে, কি হবে করে সে অনর্থক এক উদ্বেগ মনের মধ্যে বয়ে বেড়ায়।

এটাও দেখেছি, যার মনে বিশ্বাসের অনুভূতি একেবারে স্থির, তার কাজকর্মই আলাদা। মনের সুদৃঢ় মনোভাব তাকে সবসময় একটা দাঁড়াবার জায়গা দেয়। 

সে নিজের একার হোক আর বিবাহিত যৌথ জীবন যাই হোক না কেন, একটু সামনের কথা ভেবেই তারা সব কিছু করে। চোখের সামনেই তখনি কাজের ফল দেখতে না পেলেও মনের মধ্যে সে বোঝে ফল ভালোই হবে এবং সে তার থেকে বঞ্চিত হবে না কোনোভাবেই।

কখনো যদি তার কাছে ভালো ছাড়া খারাপ কিছু আসে, তাকেও সে মনের মধ্যে একরকম করে মিশিয়ে নেয়, হতাশ হয়ে পড়ে না। যে কোনো অবস্থাতেই সে নিজের আত্ম প্রত্যয় হারিয়ে ফেলে না। সোজা কথা হল, তার নিজের প্রতি বিশ্বাস কখনো টলমল করে না, স্থির থাকে।

 

আমরা বিয়ে করার আগে অবশ্যই নিজেদের অবস্থানটিকে স্পষ্ট, স্বচ্ছ একটি রূপ দিতে পারি। মানুষ হিসাবে দুজনের দোষগুন, আর্থিক ক্ষমতা, সীমাবদ্ধতা পরিষ্কার করে নেওয়া যেতে পারে।

মনে রাখতেই হবে যে, আমরা বিয়ে করি শুধুমাত্র জৈবিক চাহিদা মেটানোর জন্যে নয়, বহুরকম সুযোগ সুবিধাও কিন্তু আমরা এই যৌথ জীবন থেকে পেয়ে থাকি।

মনের দ্বিধাদ্বন্দ্ব কাটিয়ে সকলকেই একটা সঠিক চিন্তাভাবনার জায়গায় পৌঁছতে হবে।

পৃথিবী তো অনেক পাহাড় পর্বত, নদী সমুদ্র, বনজঙ্গল নিয়ে হেঁটেই চলেছে, তার চলা তো থামে নি একটি দিনের জন্যেও। ঠিক তেমনি আকাশও তো চলেছে সূর্য্য, চন্দ্র, গ্রহ, তারাদের বুকে নিয়ে। আসলে চলার পথ আছেই, তাই চলতে তো হবেই। শুভ ভাবনা, শুভ চিন্তার সঙ্গে পথ চলার আনন্দকেও খুঁজে নিতে হবে আমাদের।

শুভ কর্মপথে যাবার বেলায় মন যেন থাকে আলোয় পূর্ণ।

 

                                             প্রজ্ঞাপারমিতা রায়

                                              Prajna Paramita Roy

                                                      ফোন নম্বর : ৭০৪৪০৯৬৫৮৪

                                                                E-mail : pparamitab@gmail.com

বিবাহ কি জীবনের পরিপূর্ণতা – By Prajna Parmita Roy

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *