বাবা মায়ের কাছে শুনেছিলাম, বিয়ের ফুল ফুটলে তবেই নাকি বিয়ে হয়। আরও শুনেছিলাম, সাত জন্মের জন্য নাকি বর বউকে ওপরওয়ালা আগের থেকেই ঠিক করে রাখেন। সুতরাং যতই চেষ্টা করো না কেনো, অন্য কাউকে পাবার কোনো সম্ভাবনাই নেই। জিজ্ঞেস করেছিলাম তাহলে বিয়ের জন্যে ছেলে মেয়ে দেখা শোনার রীতি কেন? সদুত্তর পাইনি।
বিয়ে সাধারণত একটি পুরুষ ও একটি মহিলার মধ্যে হয়ে থাকে, তবে আইনগত ভাবে সমলিঙ্গের লোকেদের বা কিন্নরদেরও বিয়ে হতে পারে। যাই হোক না কেন, দুজন মানুষ যখন বিয়ে করে তারা এই সিদ্ধান্ত নিশ্চই নেয় যে তারা তাদের সুখ দুঃখ ভাগ করে নেবে, একে অন্যের অবলম্বন হবে জীবনের সব চড়াই উতরাই পার হতে। এখন অবশ্য বিয়ে না করেও লিভ টুগেদার করার আইনসঙ্গত অনুমতি আছে।
বিয়েটা দুজনের মধ্যে একটা লিখিত বা অলিখিত চুক্তি যে তারা একসাথে থাকবে, শারীরিক ও মানসিক দিক থেকে একত্রিত হবে এবং সমাজে সেটা নিয়ে কোনো কুৎসা রটবে না। দুজনে তাদের আয় ব্যায় ভাগ করে নেবে, সরকার থেকে যদি কোনো অনুদান বা ট্যাক্স বাঁচানোর ব্যবস্থা পাওয়া যায়, তারও সুবিধা নেবে, মাথা উচুঁ করে একসাথে ঘুরে বেড়াবে, ইত্যাদি। মানে সামাজিক দিক থেকে তারা একত্রে নতুন সংসার গড়তে পারবে আর তাদের বাচ্চারা সামাজিক প্রতিষ্ঠা পাবে।
কিন্তু যে কথাগুলো লেখা নেই অথচ দু জনের কাছে আশা করা হয় সে গুলো হলো – এদের মধ্যে প্রেম ভালোবাসা থাকবে, পরিচর্যা থাকবে, প্রতিশ্রুতি থাকবে, মনোযোগ থাকবে, সুন্দর বার্তালাপ থাকবে। এর সাথে থাকবে সহনশীলতা, ধৈর্য, শ্রবণক্ষমতা, সততা, আন্তরিকতা, সন্মান, উদারতা, অংশীদারী, সাথ দেওয়া, আপোষে বোঝাপড়া, গঠনমূলক কাজে সাহায্য ইত্যাদি কতো কি। এই গুলোর অভাবই পরবর্তী কালে হয়ে ওঠে মনোমালিন্যের বিষয়।
বিয়ে করাকে মনে করা হয় জীবনের একটা এমন গুরুত্বপূর্ণ দিক, যে ভালো সমঝোতা হলে দু জনের উন্নতি অবশ্যম্ভাবী। কিন্তু কোনো কারণে মনের মিল না হলে এটা দু জনের জন্যেই আবার বিষবৎ হতে পারে। ভালোবাসায় দুজনের হৃদয় যেমন দ্বিগুণ উৎসাহে চলতে থাকে, শরীর মন চনমনে থাকে, ভালোবাসার অভাবে তেমন জীবন দুর্বিষহ হয়ে যায়। আগেকার দিনে অল্প বয়সে বাবা মার নির্বাচনে অপরিচিত নারী পুরুষের মধ্যে বিয়ে হত। কিন্তু এখন পড়াশুনো শেষ করে চাকরি করে পয়সা জমিয়ে বেশি বয়সে বিয়ে করাটাই রীতি হয়েছে। অল্প বয়সে তাই যে সব জিনিষ সহজে মানানো গেছে বা উপেক্ষা করে এড়ানো গেছে, এখনকার পরিপক্ব মস্তিষ্কে সে সব জিনিষ সহজে পাশ কাটানো যাচ্ছে না। ফলে বিবাহ বিচ্ছেদের সংখ্যাও বাড়ছে।
জিজ্ঞেস করলে শতকরা পঁচাশি ভাগ লোকই বলবে বিয়ে করব, আজ নাহয় কাল। প্রত্যেকেই হয়ত জীবনে প্রেম অনুভব করেছে আর মনে মনে কাউকে নিয়ে অলীক কল্পনা করেছে, মুখে বলতে পেরেছে কি না সেটা অন্য কথা। কেউ কেউ এর মধ্যে থেকে তাদের প্রেমকে বিবাহ বন্ধনে পরিণত করতে পেরেছে। সমাজে এটাকে নাম দেওয়া হয়েছে লাভ ম্যারেজ, যেন অন্য ম্যারেজে লাভের বড়ই অভাব! তবে অবাক হবার কথা এই যে, প্রাক বিবাহের লাভ পরবর্তী কালে বিচ্ছেদে পরিণত হতেও দেখা গেছে।
দেখা যাচ্ছে, আমাদের দেশে বিচ্ছেদের সংখ্যা যেমন যেমন বাড়ছে, নতুন প্রজন্মের ছেলে মেয়েরা বিদেশী রীতি অনুকরণে লিভ টুগেদারের পক্ষে ততটাই সমর্থন জানাচ্ছে, বা একা থাকার পক্ষপাতী হচ্ছে। বিয়ে বলে অনুষ্ঠানটি কি তবে কমতে থাকবে এবার!
কিন্তু মোটের ওপর বিয়েটা হলো এমন একটা প্রণালী, যে শারীরিক চাহিদা মেটানোর, নিজের সংসার তৈরি করার বা নির্ভরযোগ্য ভাবে একসাথে থাকার, পথ চলার, ভাগাভাগি করে বাঁচার সমাজ স্বীকৃত অন্য ভালো উপায় প্রায় নেই বললেই চলে।
এটাকে তাই দিল্লী কি লাড্ডু বলা হয়, খেলেও পস্তাবে না খেলে তো বটেই।
শ্রী পার্থ প্রতিম চক্রবর্তী
Excellent. So true DILLI KA LADDU——-.
I would like to share my experience MARRIAGE IS WRITTEN IN HEHAEN. Seen many examples including my own.
Well written.
Bimal Dey